ঘুর্ণিঝড়ের কেরামতি, এই শহরে মাটি ফুঁড়ে জেগে উঠল চার হাজার বছরের পুরনো জঙ্গল
ওয়েলসের সেই পুরনো জঙ্গল(Photo Credit: Twitter)

প্রাকৃতিক দুর্যোগ কত কীই না ঘটাতে পারে, তারই এক নিদর্শন দেখল দক্ষিণ-পশ্চিম ব্রিটেনের ওয়েলস(Welsh beach)। চার হাজার বছরের পুরনো ব্রোঞ্জযুগের এক জঙ্গল জেগে উঠেছে ওয়েলসে, সৌজন্যে ঘূর্ণিঝড় হ্যানা(Storm Hannah)। গত চার হাজার বছরের বেশি সময় ধরে মাটির নীচে চাপা ছিল সেটি। সমুদ্রের নোনা জল, বালি এবং ঘাসের চাঙড়ের নীচে প্রায় হারিয়েই গিয়েছিল। কিন্তু একটা মাত্র ঘূর্ণিঝড়ই সবকিছু পাল্টে দিল। মাটি ফুঁড়ে উঠে এল ব্রোঞ্জ যুগের সেই জঙ্গল।

সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে এখন ঘরে বসেই ওয়েলসের এই প্রাচীন জঙ্গল সকলে দেখে ফেলেছে। ওই জঙ্গলের ছবিতে শিকড়-বাকড় সমেত বহু গাছের অবশিষ্ট অংশকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। কোনও কোনও গাছের উপর আবার ঘাসের আস্তরণও চোখে পড়েছে। সেসময় আধুনিক সভ্যতার ছিটেফোটা না থাকলেও আজতো সেসবের অভাব নেই। তাই তো প্রাচীন জঙ্গলকে ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে সকলেই প্রচারের আলো কেড়ে নিতে মাঠে নেমে পড়েছে, কেউবা সোজা লাইভ ভিডিও-তে জঙ্গলের সঙ্গে নিজেকে জুড়ে দিয়েছে। কেউ আবার সেলফি তুলে পোস্ট করছে। এসব করতে গিয়ে কেউ কেউ আবার এই জঙ্গলের সঙ্গে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এক সভ্যতার যোগও খুঁজে পেয়েছেন। তাঁদের কথায়, জঙ্গলের পাশাপাশি ওই এলাকায় জনবসতিও ছিল। ছিল চাষযোগ্য উর্বর জমিও। বন্যা আটকাতে চারিদিকে মজবুত বাঁধও নির্মাণ করেছিলেন সেখানকার মানুষ। তবে জনশ্রুতি আছে, এখানকার এক মহিলা পুরোহিতের কৃতকর্মেই গোটা জনবসতিটাই জঙ্গলের সঙ্গে জলে ডুবে গিয়েছিল। ওই মহিলা পুরোহিতের নাম মেরেডিড। তিনি কর্তব্যে অবহেলা করলে, তদারকির দায়িত্বে থাকা একটি কুয়োর জল আপনাআপনি উপচে পড়ে, তাতেই সব কিছু ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া ওই জঙ্গলে পাইন, ওক, বার্চ-এর মতো গাছ ছিল বলে ধারণা। সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি পেলে সেগুলি নোনা জলের নীচে তলিয়ে যায় বলে জানিয়েছে ব্রিটেনের মেট্রো সংবাদপত্র। কিন্তু ঘাসের চাঙর এবং কাদামাটি জমা হয়ে গাছগুলি প্রকৃতিক ভাবেই সংরক্ষিত হয়ে যায়।

স্থানীয়দের দাবি, প্রায়শই সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে জীবাশ্মের সন্ধান মিলেছে, কিন্তু আস্ত একটা জঙ্গল যে কখনও জলে ডুবে গিয়ে চার হাজার বছর পর ফের উদয় হতে পারে তা তাঁরা ভাবতেই পারছেন না। তবে সত্যতার সঙ্গে রং চড়ানো মনুষ্যজাতির বিশেষ প্রকৃতি, এক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। কারও কারও দাবি, সেই প্রাচীন সভ্যতার গীর্জার ঘণ্টা এখনও মাটিতে কান পাতলে শোনা যায়, যদিও বিষয়টি এখনও প্রমাণ সাপেক্ষ।

জানা গিয়েছে, গত ২২ মে সেখানে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় হ্যানা। তার পরই সমুদ্র তীরবর্তী বর্থ এবং আনিস্লাস গ্রামের মধ্যবর্তী তিন-চার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ওই জঙ্গলের হদিশ মেলে। হঠাৎ মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা ওই জঙ্গল নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে চারিদিকে।