সিউড়ি, ২৭ অক্টোবর: ভূত (Ghost) খুঁজতে গিয়ে তাজ্জব গবেষকরা(Researchers)। মিলল সাতরকম আত্মার হদিশ। বীরভূমের সদর সিউড়িতে (Birbhum's Suri) সাক্ষাৎ তেঁনাদের দেখা পেলেন গবেষকরা। এত বছর ধরে চলছে গবেষণা কিন্তু এভাবে ভূতের ঘাড়ধাক্কা বোধ হয় কখনও খেতে হয়নি কলকাতার (Kolkata) সিস্টেমেটিক প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেশন রিসার্চ অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স টিম বা ‘স্পিরিট’-ই প্যারানরমাল সোসাইটির সদস্যদের। এমনকী পরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে দুজনের প্রাণ সংশয় পর্যন্ত হতে বসেছিল। কোনরকমে বেঁচে ফিরেছেন সংস্থার সদস্যরা। আপাতত ল্যাবে বোঝার চেষ্টা চলছে, ভৌতিক সেইসব কার্যকলাপের তথ্যচিত্র (Documentary)। এইসব কাণ্ডকে তাঁরা সম্বোধন করছেন 'আত্মা' বা 'স্পিরিটে'র কাজ হিসেবে। বীরভূমের সিউড়ির এক শ্মশানে ঘটে যাওয়া এই ঘটনাই এখন রাতদিন এক করে ভাবতে বাধ্য করছে তাবড় তাবড় গবেষকদের।
এবার ইম্যানুয়েল গ্রিমড নামে এক ফরাসি তথ্যচিত্র নির্মাতাকে সঙ্গে করেই শুরু হয়েছে গবেষণা। সোসাইটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সৌমেন রায়, প্রণয় মণ্ডল সহ ছিলেন দুই ইন্টার্নও। প্রাণ সংশয় হয়েছিল তাঁদেরই। গ্রামের বাইরে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যেই শ্মশান। সন্ধে নামলেই সে তল্লাটে আর কেউ যান না বলেই কথিত আছে। কিন্তু সেই ট্যাবু ভেঙে ঠিক সন্ধের মুখেই সেখানে গিয়ে পৌঁছয় কলকাতার এই সোসাইটির সদস্যরা। ঝেঁপে বৃষ্টি (Heavy Rain) নেমেছে। উলটোদিকে বৈষ্ণবদের কবরস্থান। কয়েক পা এগোতেই একটা পোড়ো ঘর। অ্যাসবেসটসের ছাদ। দেওয়াল নেই। শুধু খুঁটি দিয়ে ছাদটা ধরা। ভিতরে চিতা সাজানো। মড়া পোড়ানো হয়। কাঠ চুপচুপে ভেজা। অশরীরীর অস্তিত্ব পরীক্ষার জন্য এই জায়গাটাই বেছে নিয়েছিলেন সৌমেনরা। শুরু হল‘অভিযান।’তাঁদের প্রধান অস্ত্র ‘কে২ মিটার।’ কোনও জায়গার ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ড বা তড়িত চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের তারতম্যে বেশ কিছু প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে এই ‘কে ২ মিটার’-এ ধরা যায় আত্মার উপস্থিতি। তবে তাতে রয়েছে প্রাণের সংশয়! আরও পড়ুন: Kali Puja 2019: মা কালীর দেখা পেয়েছিলেন এঁরা; রামকৃষ্ণ দেব সহ এই ৪ কালীসাধককে জানুন?
পরিবেশটা (Ambience) যেন হঠাৎ বদলাতে শুরু করল। কার্ত্তিক মাসেই হাড়হিম করা ঠান্ডা। অদৃশ্যের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করা হল- “কেউ আছেন?" তীব্র হয়ে জ্বলে উঠল ‘কে২ মিটার’-এর আলো। আবার প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া হল, “আপনি পুরুষ না নারী?” প্রবল কান ফাটানো আওয়াজে মড়মড় করে এসে যেন বিরাট একটা দেহ পড়ল ছাদের উপর। দৌড়ে বাইরে বের হয়ে গেলেন সোসাইটির সদস্যরা। কিন্তু কিছুই চোখে পড়ল না। রাত তখন তিনটে। এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে কাজ অসমাপ্ত রেখেই সোজা ফেরার রাস্তা ধরেন সোসাইটির সদস্যরা। তাদের ল্যাবেই ওই মুহূর্তের সব ছবি আর ভিডিওর গবেষণা চলছে এখন। যা নিয়ে আত্মাদের কিছু প্রকারভেদ বুঝিয়েছেন সদস্য সৌমেন রায়। সৌমেন জানিয়েছেন, ভারতে সর্বাধিক ছয় রকমের আত্মার উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। ১. ‘শ্যাডো পার্সন’-যাদের আকৃতি বা অবয়ব কখনও সখনও ধরা পড়ে। ২. ‘এক্টোপ্লাজম’-ধোঁয়ার কুণ্ডলী থেকে আকৃতি নেয়। ৩. ‘এলিমেন্টাল’-ক্ষণস্থায়ী ছায়ামূর্তি। ৪. ‘অর্বস’-আলোর বলের আকার। ক্যামেরায় গভীর বিশ্লেষণে এদের দেখা মেলে। ৫. ‘স্ট্রিক’–আকাবাঁকা লাইনের মতো। মানুষের সঙ্গে পশুর আত্মাও এভাবে ধরা পড়ে। ক্যামেরার ৮০০ আইএসও-তে ছবি তুললে এদের দেখা পাওয়া যেতে পারে। ৬. ‘পোল্টারজাইস্ট’- জার্মান শব্দ যার অর্থ শব্দ করা ভূত। সিউড়ির ঘটনার মিল রয়েছে 'শ্যাডো পার্সনে'র সঙ্গে। বিদেশে হদিশ মেলে আরও এক প্রকারের আত্মার। কদাকার ছায়ামূর্তির এই আত্মাকে ‘ডেমন’ বলে সম্বোধন করা হয়। নৃশংসভাবে গায়ে আঁচড় কাটার ক্ষমতা রাখে এরা।
(সংবাদ প্রতিদিন-এর খবর অনুযায়ী)