
মানুষের জীবনে অনেক ঐতিহ্য, প্রথা আর বিশ্বাসে ছড়িয়ে থাকে, আর এদের মাঝে অন্যতম হচ্ছে বাথরুমে এক বাটি নুন রাখার প্রথা। প্রাচীন কাল থেকে আমাদের বাঙালি সমাজে বিভিন্ন সংস্কৃতি চলে, স্বচ্ছতা ও শান্তির জন্য নুনের বিশেষ কোনো গুরুত্ব আছে। অনেকের মতে, বাথরুমে নুন রাখা মানে সেই পরিবেশ থেকে খারাপ শক্তি, তাপমাত্রা ও অতিরিক্ত আর্দ্রতা ধীরে ধীরে শুষে নেয়ার এক প্রক্রিয়া। যদিও এ ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক অভিমত নেই। প্রাচীন অভিজ্ঞতা আর আধ্যাত্মিক বিশ্বাস এই প্রথাকে অনেক অনুভূতি প্রদান করে। বাঙালি পরিবারে আমরা দেখেছি, প্রজন্মের পর প্রজন্ম, বাবা-মা, দাদা-দাদি এই রীতিনীতি সাথে রেখেছেন। নুন আমাদের খাবারের একটি অবিচ্ছেদ্য উপাদান, যা সমৃদ্ধির, আত্মরক্ষা ও সুস্থতার প্রতীক। ছোটবেলা থেকে আমাদের শুনিয়ে আসা গল্পে নুনের বিষয়ে নানা মর্মবাণী আছে। কেউ বলে, "নুন যতটা মিষ্টি, ততই সতদয়" – প্রকৃতপক্ষের এই মতবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, নুনের মাধ্যমে প্রতিটি ক্ষুদ্র স্পর্শে থাকতে পারে জীবনের সুরক্ষা ও ভালো থাকার বার্তা, এমন এক বিশ্বাস যা আজকের যখন আমরা দ্রুতগতির জীবনে একটু শান্তির ছোঁয়া খুঁজতে আছি। কিছু মানুষের দৃষ্টিতে, বাথরুমের মতো পরিবেশ যেখানে প্রাকৃতিকভাবে অতিরিক্ত ভেজা পড়ে তার মধ্যে নুনের শুষ্ক ও রক্ষণশীল গুণাবলী কা্রিবার। আমাদের দাদুরা বলতেন, এভাবে রাখলে ঘরের ভেতরে থাকা খারাপ শক্তির প্রবেশন কমে যায় আর আশেপাশের পরিবেশে একটা নিশ্চিত শান্তি বিরাজ করে। এ ধরনের ছোট ছোট প্রথা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, যতই আধুনিকতা ছড়িয়ে পড়ুক, প্রাকৃতিক উপাদানের সাথে আমাদের সম্পর্ক কতটা গভীর ও মসৃণ।
তবে এখনও বলতেই হবে, এই প্রথার পেছনে বৈজ্ঞানিক পর্যায়ের প্রমাণগুলো এখনও খুব সীমিত। নুনের আর্দ্রতা শোষণের কিছু প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে, কিন্তু এটা চিকিৎসা বা জীবাণুমুক্তির নির্ভরযোগ্য উপায় নয়। বরং, এ প্রথাটি আরেকটি মনস্তাত্ত্বিক বাখ্যা হল , যখন আমরা কোনো প্রথাকে বিশ্বাস করি, তখন সে বিশ্বাস আমাদের মনকে এক ধরনের শান্তি, নিশ্চয়তা ও আশা যোগায়। আমাদের তুলনায় অনেক সময় রীতিনীতি আর আধ্যাত্মিকতা আমাদের জীবনের মানসিক অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায়। শেষমেষ, বাথরুমে এক বাটি নুন রাখার প্রথাটি শুধুমাত্র এক প্রকার আধ্যাত্মিক আর মানসিক রীতি নয়, বরং এ আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক অংশ হিসেবেও বিবেচিত। কথিত আছে যে প্রতিটি ছোট অভ্যাসের পেছনে থাকে কোনো একটি গভীর বার্তা ও জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা। আজকের এই প্রথাটি হয়তো বিজ্ঞান অনুযায়ী তেমন প্রমাণিত নয়, কিন্তু তা আমাদের জীবনের প্রতিটা ক্ষুদ্র মুহূর্তে, পরিবারের প্রতি ভালবাসা, নিরাপত্তা ও ঐক্যের নিদর্শন হয়ে উঠতে পারে। এইভাবেই এক বাটি নুন শুধু একটি উপাদান নয়, এটি হয়ে যায় আমাদের আত্মার এক প্রাকৃতিক, মিষ্টি ও অমলিন মন্ত্র। এভাবেই ছোটপ্রচুর প্রথাগুলি আমাদের প্রতিদিনকে একটু বেশি মানবিক, একটু বেশি অর্থবহ করে তোলে, যেখানে আমরা অতীতের স্মৃতি ও ভবিষ্যতের আশা একত্রিত করে একটি সুন্দর বর্তমান গড়ার চেষ্টা করি।