
ক্যালেন্ডারের পাতায় এমন কিছু দিন রয়েছে যেগুলি আন্তর্জাতিক মর্যাদা পায়। তার মধ্যে অন্যতম ১১ এপ্রিল। জেনে নিন এই বিশেষ দিনটির গুরুত্ব। প্রতিবছর ১১ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে পালিত হয় এক বিশেষ ও সঙ্গীতপ্রেমী দিবস—আন্তর্জাতিক লুই লুই দিবস (International Louie Louie Day)। হয়তো অনেকে এই দিবসটির কথা আগে শোনেননি, আবার কেউ কেউ হয়তো শুধু গানটার “Louie Louie, oh no, we gotta go…” অংশটুকুই জানেন। জেনে নিন এই একটি গান কীভাবে আমেরিকার পপ সংস্কৃতিতে বিপ্লব ঘটিয়েছিল, কীভাবে তা হয়ে উঠেছিল বিদ্রোহের প্রতীক, এবং কেন এই গানকে ঘিরে একটি দিবসই তৈরি হয়েছে।
১৯৫৫ সালে রিচার্ড ব্যারি নামের এক আফ্রিকান-আমেরিকান গায়ক ও গীতিকার "Louie Louie" গানটি লেখেন। এটি ছিল মূলত এক জ্যামাইকার নাবিকের কাহিনি, যে তার প্রেমিকার কাছে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। গানটি মূলত ক্যারিবিয়ান ক্যালিপসো ধাঁচে তৈরি হলেও, ১৯৬৩ সালে দ্য কিংসমেন (The Kingsmen) নামক একটি রক ব্যান্ড এই গানটির যে সংস্করণ তৈরি করে, সেটাই ইতিহাস সৃষ্টি করে। তাদের রুক্ষ, স্বতঃস্ফূর্ত এবং অনেকটা অস্পষ্ট উচ্চারণের গায়কির জন্য গানটি এক নতুন মাত্রা পায়।
গানের সবচেয়ে মজার ও চাঞ্চল্যকর দিক ছিল এর কথা বোঝা যেত না স্পষ্টভাবে। অনেকেই মনে করেছিল, গানের মধ্যে অশ্লীল কথা আছে। এর ফলে গানটি নিয়ে এতটাই বিতর্ক ছড়ায় যে, আমেরিকার ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (FBI) দীর্ঘ ৩১ মাস ধরে গানটির কথা বিশ্লেষণ করে—গানের মধ্যে কোনো অশ্লীলতা আছে কি না তা খুঁজতে। অবশেষে তারা স্বীকার করে, গানের মধ্যে এমন কিছু নেই, এবং ফাইল বন্ধ করে দেয়।
“Louie Louie” কোনো সাধারণ গান নয়। এটি হয়ে ওঠে রক অ্যান্ড রোলের অন্যতম পরিচায়ক। বিভিন্ন ব্যান্ড—রোলিং স্টোনস, আইগি পপ, ব্ল্যাক ফ্ল্যাগ, মোটরহেড, এমনকি বিটলস পর্যন্ত—এই গানটি কভার করেছে। এটি যেন এক অদ্ভুত সুরের রূপকথা, যার তিনটি কর্ডেই লুকিয়ে আছে বিপ্লব, স্বাধীনতা আর কল্পনার শক্তি।
১৯৮৩ সালে একদল পোর্টল্যান্ডভিত্তিক লুই লুই অনুরাগী উদ্যোগ নেন এই গানটির সম্মানে একটি দিন পালনের। সেই থেকেই শুরু—প্রথমে স্থানীয় পর্যায়ে, পরে ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হতে শুরু করে “International Louie Louie Day”।
১১ এপ্রিল এই দিনটিতে গানের স্রষ্টা রিচার্ড ব্যারির জন্মদিন। ১৯৩৫ সালের ১১ই এপ্রিল জন্মগ্রহণ করা ব্যারির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই এই তারিখ বেছে নেওয়া হয়।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে “Louie Louie” যেন আমাদের মনে করিয়ে দেয় সৃজনশীলতা ও প্রকাশের স্বাধীনতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তির এই যুগে, যেখানে অ্যালগরিদম-নির্ভর সংগীত বাজার দখল করে ফেলছে, সেখানে “Louie Louie”-এর মত একটি ‘অসম্পূর্ণ’, ‘অপরিষ্কার’ অথচ সোজাসাপ্টা গান আমাদের শেখায় যে—আবেগ, ইচ্ছা, এবং সাহস থাকলেই মানুষ ইতিহাস গড়তে পারে।