Credit: Pixabay

ওজন কমানোর জন্য বা সুস্থ থাকার জন্য রাতে সবসময় হালকা খাবার হওয়া উচিত। তবে বেশিরভাগ মানুষ রাত ৯ টায় বা তার পরে রাতের খাবার খান। তাই রাতে দেরিতে ক্ষুধার সমস্যা সাধারণ। তবে সকাল ও বিকেলে বেশি খাওয়া এবং রাতে হালকা খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরে এমন দুটি হরমোন রয়েছে যা ক্ষুধা বাড়ায় বা নিয়ন্ত্রণ করে। ক্ষুধা এবং ওজন বৃদ্ধির জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন দায়ী, লেপটিন এবং ঘ্রেলিন। লেপটিন শরীরের চর্বি কোষ দ্বারা উৎপাদিত হয় এবং মস্তিষ্ককে সংকেত দেয় যে শরীরের খাবারের প্রয়োজন নেই। একই সময়ে, ঘ্রেলিন হল একটি ক্ষুধা জাগানো হরমোন যা পাকস্থলীতে উৎপন্ন হয় এবং মস্তিষ্কে আরও বেশি খাওয়ার জন্য বার্তা পাঠায়।

খাবারের আগে ঘ্রেলিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং খাবারের পরে হ্রাস পায়, যার ফলে প্রতি চার ঘন্টা অন্তর ক্ষুধার্ত বোধ করা স্বাভাবিক। সারা রাত কিছু না খেয়ে থাকার পর শরীর উপবাস অবস্থায় থাকার কারণে সকালে ঘ্রেলিনের মাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে যাদের সকাল এবং বিকেলে ক্যালোরি গ্রহণ বেশি তারা আরও বেশি ওজন কমাতে পারে। এটি গ্লুকোজ, ইনসুলিন এবং ঘ্রেলিনের মাত্রা উন্নত করে, যার ফলে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ হয় এবং রাতে অতিরিক্ত খাওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়। সকালে ক্ষুধা না পেলে দুপুরের খাবার পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ হওয়া উচিত। এতে আস্ত শস্য, ডাল, স্টার্চিযুক্ত শাকসবজি, চর্বিহীন প্রোটিন এবং সবুজ শাকসবজি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যাতে সন্ধ্যায় অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এড়ানো যায়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতে হালকা ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ওজন কমানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হল রাতের খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ বাড়ানো। মুরগি, মাছ এবং ফাইবার সমৃদ্ধ সবজির মতো চর্বিহীন প্রোটিন খেলে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ইনসুলিনের মাত্রা স্থিতিশীল থাকে। অন্যদিকে উচ্চ চর্বিযুক্ত এবং উচ্চ কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার রক্তে শর্করা ও ইনসুলিনের মাত্রা ভারসাম্যহীন করতে পারে, যা রাতে ক্ষুধা বাড়িয়ে দিতে পারে। শরীর প্রাকৃতিক জৈবিক ঘড়ি অনুসারে কাজ করে, তাই সূর্যাস্তের পরে খাওয়া সীমিত করাই ভালো। পরের দিন রাতের খাবার এবং নাস্তার মধ্যে কমপক্ষে ১২ ঘন্টার ব্যবধান রাখার চেষ্টা করা উচিত। এছাড়া, ভালো ঘুম হওয়াও খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কম ঘুম লেপটিন এবং ইনসুলিনের ভারসাম্যকে ব্যাহত করতে পারে, যা ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়ায়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতে হালকা এবং সঠিক খাবার খাওয়া ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করার পাশাপাশি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য রোগের ঝুঁকিও কমায়।