প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান যখনই ভারতে আক্রমণ করেছে, তখনই তাদের সমস্ত অহংকার ও ভ্রান্ত ধারণা চুরমার করে পরাজিত করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। ২০১৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সার্জিক্যাল স্ট্রাইকও এমনই এক ঘটনা। ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ০৫:৩০ মিনিটে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্রিগেড সদর দফতরে জইশ-ই-মোহাম্মদের ৪ সন্ত্রাসী হামলা চালায়, যাতে শহীদ হয় বহু ভারতীয় সেনা। ক্রমাগত সন্ত্রাসী হামলা বন্ধ করার জন্য, ১০ দিন পর অর্থাৎ ২০১৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী লঞ্চ প্যাডে একটি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক পরিচালনা করে সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি ধ্বংস করে ভারত। ২০২৪ সালে পালন করা হচ্ছে এই সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের অষ্টম বার্ষিকী।
২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান ভিত্তিক জইশ-ই-মোহাম্মদের অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত সন্ত্রাসীরা একটি হামলা চালায় উরির (কাশ্মীরের) একটি সেনা ঘাঁটিতে। সকাল ০৫:৩০ মিনিট নাগাদ এই হামলা চালানো হয়, যখন সীমান্তে রাত্রিকালীন ডিউটি থেকে ফিরে আসা সৈন্যরা ঘুমিয়ে ছিলেন। ঘন্টাব্যাপী চলা এই সন্ত্রাসী হামলায় শহীদ হয়েছিলেন ২০ জন সেনা। এই হামলার নিন্দা হয়েছিল সারা বিশ্বে। কিন্তু এখন শুধু এই হামলার নিন্দা করাই যথেষ্ট ছিল না, কারণ সময় এসেছে পিওকে থেকে সন্ত্রাসীদের ক্রমাগত অনুপ্রবেশ এবং কাশ্মীর ও সেনাবাহিনীতে হামলার জবাব দেওয়ার। উরি হামলার প্রতিক্রিয়ায়, PoK-তে বেড়ে ওঠা সন্ত্রাসী শিবিরগুলি ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত সরকার।
২০১৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের প্রস্তুত করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এই সময় ডোগরা রেজিমেন্টের সঙ্গে কাজ করেছিল প্যারা এসএফ সৈন্যরা। এই অপারেশনে জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল ২৫ জন কমান্ডো। এছাড়া ব্যাকআপের জন্য প্রস্তুত ছিল ১৫০ জন কমান্ডো। এই অপারেশনে একটি দল কুপওয়ারার নৌগাম থেকে সীমান্ত অতিক্রম করেছে, অপর দল পুঞ্চ থেকে সীমান্ত অতিক্রম করেছে। অভিযানে ইতিমধ্যে তিনটি সন্ত্রাসী শিবির চিহ্নিত করা হয়েছে। ২৮ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে এটিকে নিয়ন্ত্রণ রেখার ভেতরে নামানো হয় এবং পায়ে হেঁটে সেই স্থানে যাওয়া হয়। নিলুম উপত্যকা, পুঞ্চ সেক্টর এবং উরি সেক্টরে সন্ত্রাসবাদী লঞ্চ প্যাডগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী হামলায় বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী লঞ্চ প্যাড ধ্বংস হয় এবং সিনিয়র কমান্ডার সহ সন্ত্রাসীদের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করা হয়।
সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ছিল শতভাগ সফল। পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিয়েছে যে ভারত সীমান্ত সন্ত্রাস সহ্য করবে না ভারত। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী এবং ভারতীয় জনগণের মনোবলও বাড়িয়ে দিয়েছে এই হামলা। অপারেশনের দায়িত্বে ছিলেন মেজর রোহিত সুরি। এই অপারেশনের জন্য তিনি কীর্তি চক্র, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শান্তিকালীন বীরত্ব পুরস্কারে ভূষিত হন। সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে ভারতের সামরিক এবং একটি বার্তা পাঠিয়েছে যে দেশটি তার সীমানা রক্ষায় সক্ষম। এটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর মনোবল বাড়িয়েছে এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে নিরাপত্তা বোধকে শক্তিশালী করেছে। যদিও এই অভিযানের রাজনৈতিক ও কৌশলগত দিক নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে, তবে এটি ভারতীয় প্রতিরক্ষা নীতিকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।