ভারতে এমন অনেক মহাপুরুষ ছিলেন যারা ধর্ম রক্ষার জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের মধ্যে একজন ছিলেন শিখ ধর্মের নবম গুরু, গুরু তেগ বাহাদুর। গুরু তেগ বাহাদুর হলেন সেই বিপ্লবী পুরুষ যিনি ধর্ম, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ রক্ষা করার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। যখন মানুষকে জোর করে ধর্ম পরিবর্তন করানো হচ্ছিল, সেই সময়ে ধর্মীয় স্বাধীনতার সমর্থক ছিলেন তিনি। প্রতি বছর ২১ এপ্রিলে পালিত হয় গুরু তেগ বাহাদুরের জন্মবার্ষিকী।
১৬২১ সালের ২১ এপ্রিল, বৈশাখ কৃষ্ণ পঞ্চমীতে পাঞ্জাবের অমৃতসরে জন্ম হয় তেগ বাহাদুরের। তাঁর পিতা শিখদের ষষ্ঠ গুরু, গুরু হরগোবিন্দ সাহেব এবং মাতা নানকি। জন্মের পর তাঁর নাম দেওয়া হয় ত্যাগ মাল। কথিত আছে, গুরু তেগ বাহাদুর শৈশব থেকেই খুব সাহসী ছিলেন এবং ধর্মের প্রতি খুবই আগ্রহী ছিলেন তিনি। বর্ণ বা ধর্মের ঊর্ধ্বে মানবতাকে রাখতেন গুরু তেগ বাহাদুর। ১৬৩২ সালে বিবি গুজরিকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। শিখদের অষ্টম গুরুর মৃত্যুর পর ১৬৬৫ থেকে ১৬৭৫ সাল পর্যন্ত নবম গুরু হিসেবে সিংহাসন গ্রহণ করেন গুরু তেগ বাহাদুর। গুরু তেগ বাহাদুরের সময়ে শাসন ছিল ঔরঙ্গজেবের।
শিখ ইতিহাস অনুযায়ী, ঔরঙ্গজেবের রাজত্বকালে জোর করে ধর্ম পরিবর্তন করা হত হিন্দুদের। অনেক কাশ্মীরি পণ্ডিত এই ধর্ম পরিবর্তনের অত্যাচারের শিকার হয়েছিলেন। এরপর তারা শরণাপন্ন হন গুরু তেগ বাহাদুর সাহেবের। ধর্ম রক্ষার জন্য মুঘলদের এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন গুরু তেগ বাহাদুর। ঔরঙ্গজেব এবিষয়ে জানতে পেরে তেগ বাহাদুরের পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে এবং গুরু তেগ বাহাদুরকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু কিছুই কাজে লাগে নি, মুঘলদের সামনে মাথা নত করেননি তিনি। ১৬৭৫ সালের ২৪ নভেম্বর, ঔরঙ্গজেবের নির্দেশে নয়াদিল্লির মোড়ে প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ করা হয় গুরু তেগ বাহাদুরের।