![](https://bnst1.latestly.com/wp-content/uploads/2023/02/Chinese-App-Banned-in-India-380x214.jpg)
সম্প্রতি ভারত অবৈধ বিনিয়োগ সংক্রান্ত অর্থনৈতিক অপরাধের জন্য ১০০ টিরও বেশি চিনা ওয়েবসাইট নিষিদ্ধ করেছে। এর পাশাপাশি দেশের জনগনের নিরাপত্তার জন্য ২৫০ টিরও বেশি চিনা অ্যাপ ব্লক করেছে ভারত সরকার। ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক একটি টুইট বিজ্ঞপ্তিতে জানায় - এই অ্যাপগুলি ‘ভারতের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা এবং জনস্বার্থের পরিপন্থী।’ তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৯এ ধারায় এই অ্যাপগুলিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
২০১৯ সালে পুনরায় নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর চিনা অ্যাপ বা চিনা পণ্যের ওপর নির্ভরতা কমাতে মেক ইন ইন্ডিয়া এবং প্রোডাকশন-লিঙ্কড ইনসেনটিভ (পিএলআই) স্কিমের মতো উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর উদ্দেশ্য হল দেশীয় উত্পাদনকে উত্সাহিত করা এবং চিনা পণ্যের উপর নির্ভরতা কমাতে সহায়তা করা। এবং সেই ব্যাপারে সরকার সফল। কিছুদিন আগে লোকাল সার্কেলস(LocalCircles) নামক একটি সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে- ৪৫% ভারতীয়রা গত ১২ মাসে চিনা পণ্য কেনা ছেড়ে দিয়েছেন যদিও এখনও ৫৫% এরও বেশি বলেছেন যে তারা চিনের তৈরি পণ্যগুলি এখনও গ্রহণ করেছেন।
সমীক্ষায় জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে ভোক্তারা গত ১২ মাসে মেড ইন চায়না পণ্যের বিভিন্ন বিভাগ থেকে কি কি কিনেছেন? উত্তরে ৭০২২ জন উত্তরদাতাদের মধ্যে ৫৬% স্মার্টফোন, স্মার্টওয়াচ, পাওয়ার ব্যাঙ্ক এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক বা মোবাইল আনুষাঙ্গিক ক্রয়ের কথা বলেছে, ৪৯% জানিয়েছে তারা " উত্সবের আলো, বাতি, মোমবাতি এবং জলের বন্দুক", ৩৩% খেলনা এবং স্টেশনারি, ২৯% "উপহার সামগ্রী" কিনেছেন, ২৬% "ভোক্তা ইলেকট্রনিক্স এবং যন্ত্রপাতি (টেলিভিশন, এয়ার পিউরিফায়ার, কেটলি), ২৬% কিনেছেন "আলোর মতো ঘরোয়া পণ্য" এবং আসবাবপত্র" এবং ১৫% বলেছেন ফ্যাশন পণ্য যেমন পোশাক, ব্যাগ এবং আনুষাঙ্গিক।
সমীক্ষার সময় উত্তরদাতাদের গত ১২ মাসে চিনে তৈরি পণ্য কেনার পরিমাণ হ্রাস করার কারণও জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। ১২৩৫০ জন উত্তরদাতাদের মধ্যে ৬৩% বলেছেন যে তারা "ভারত-চিন কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হওয়াতে ভারতে তৈরি পণ্য বেশি কিনেছেন"; ১৬% ইঙ্গিত করেছে যে তাদের কাছে চিনা পণ্যের থেকে ভারতীয় বিকল্প ছিল ভাল মূল্য ও ভাল মানের সমন্বয়, তাই তারা সেই হিসাবে পরিবর্তন করেছে; ১৬% বলেছেন যে মেড ইন ইন্ডিয়া পণ্যগুলির সঙ্গে আরও ভাল গ্রাহক পরিষেবাও পাওয়া গেছে, ১৩% বলেছেন "একটি বিকল্প অ-চিনা কিন্তু বিদেশী (অ-ভারতীয়) পণ্য উপলব্ধ ছিল যার দাম, গুণমান এবং গ্রাহক পরিষেবার সমন্বয় রয়েছে",৭ % বলেছেন যে তারা "বাজারে বা স্টোর বা অনলাইনে চিনে তৈরি পণ্যগুলি খুঁজে পাননি , "।
স্পাইওয়্যারগুলির মাধ্যমে চিনা অ্যাপ গুলি ভারতের জনগণের তথ্য চুরি করছিল, সেই কারণেই ভারত সরকার চিনা অ্যাপগুলি নিষিদ্ধ করতে শুরু করে। সমীক্ষায় ব্যবহারকারীদের কাছে তাদের ফোনে ইকমার্স, ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট, গেমিং, ফটো এডিটর অডিও/ভিডিও এডিটর, স্ক্যানার বা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের মতো ইউটিলিটি সম্পর্কিত চিনা অ্যাপের সংখ্যা সম্পর্কেও সমীক্ষায় জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। ১২২৩৩ উত্তরদাতাদের মধ্যে, ৬৪% বলেছেন "তাদের কেউই চিনা অ্যাপ ব্যবহার করে না"; ৪% জানিয়েছে ৫ বা তার বেশি এই ধরনের অ্যাপ বর্তমানে তাদের ফোনে ইনস্টল করা আছে; ৬% বলেছেন ৩-৪টি এমন অ্যাপ এখনও আছে , ১৩% বলেছে ১-২টি এই ধরনের অ্যাপ ইনস্টল আছে এবং ১৩ % "বলতে পারবে না" বলে জানিয়েছে।
সমীক্ষাটির ফলে প্রকাশ পেয়েছে যে বেশিরভাগ ভারতীয় গ্রাহকরা গত বছরের তুলনায় এই বছর সরকারের সিদ্ধান্তে সায় দিয়েছেন। তাঁর কারণ হিসাবে বলা যায় গত বছর একটি সমীক্ষাত ২৯% তাদের ফোনে এক বা একাধিক চিনা অ্যাপ ইনস্টল করার কথা জানিয়েছিলেন সেখানে এই বছর ২৩% ভারতীয় স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের ফোনে এক বা একাধিক চাইনিজ অ্যাপ ইনস্টল করার কথা বলেছেন।
গালওয়ান সংঘর্ষের পর ভারতীয়দের মধ্যে যদিও চিন বিরোধী মনোভাব বেড়েছে এবং ভারতে তৈরি পণ্য কেনার প্রশংসা ও সুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবুও গ্যাজেট এবং ইলেকট্রনিক/মোবাইল আনুষাঙ্গিক চিনা পণ্যগুলি এখনো ভারতীয়দের অনেকেই ব্যবহার করছেন। কারণ একটি শীর্ষ শ্রেণীর ভারতীয়রা মেড ইন চায়না পণ্য ক্রয় চালিয়ে যাচ্ছেই।
সমগ্র সমীক্ষাটি ভারতের ৩৩৪টি জেলায় অবস্থিত নাগরিকদের কাছ থেকে ৩৭০০০ এরও বেশি প্রতিক্রিয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে। যার মধ্যে ৬৩% উত্তরদাতা ছিলেন পুরুষ এবং ৩৭% উত্তরদাতা ছিলেন মহিলা। ৪১% উত্তরদাতারা স্তর ১ থেকে, ৩১% স্তর ২ থেকে এবং ২৮% উত্তরদাতারা স্তর ৩, ৪ এবং গ্রামীণ জেলা থেকে ছিলেন বলে জানা গেছে।