প্রতীকী ছবি

মালদা: জীবনের ১০০টা বসন্ত পেরিয়ে গিয়েছিলেন ২২ বছর আগেই। স্বামীর পরে একে একে  হারিয়ে ছিলেন পাঁচ ছেলেকেও। তারপর থেকে তিন ছেলে, এক মেয়ে আর নাতি-নাতনিদের নিয়ে দিন কেটে যাচ্ছিল মালদার (Malda) গাজোল (Gazole) ব্লকের রানীগঞ্জ (Raniganj) ২ পঞ্চায়েতের করচাডাঙা (Karchadanga) গ্রামের বাসিন্দা বেলকা মণ্ডলের (Beloka Mandal)।

হাসি কান্নায় জীবনের দিনগুলো কাটানোর পর শেষ ইচ্ছা ছিল তাঁর মৃত্যুর পর শোকগ্রস্ত হয়ে যেন না পড়ে পরিবারের সদস্যরা। তাঁর শেষ যাত্রাতেও যেন চোখে জল না আসে কারও। তার বদলে চেয়েছিলেন তাঁর শ্মশানযাত্রার (Funeral Procession) সময় যেন পাড়া-প্রতিবেশী ও পরিবারের সদস্যরা ঢাকঢোল নিয়ে শোভাযাত্রা বের করেন।

১২২ বছর বয়সে মৃত্যুর পর বেলকাদেবীর শেষ ইচ্ছাপূরণ করলেন তাঁর পরিবারের সদস্য ও গ্রামবাসী। রীতিমতো ঢাক-ঢোল (dhak-dhol), খোল-করতাল (drum-cymbal) বাজিয়ে করচাডাঙা গ্রাম থেকে কুণ্ডেশ্বরী মহাশ্মশান পর্যন্ত শোভাযাত্রা বের করে ২০০ জনের বেশি গ্রামবাসী শেষকৃত্য করতে নিয়ে গেলেন সবার প্রিয় ঠাকুমাকে। হরি বোলের সঙ্গে সঙ্গে চলল নাচও।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯০০ সালে বর্তমান বাংলাদেশের (Bangladesh) যশোর (Jessore) জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন বেলকা মণ্ডল। ব্রিটিশ শাসন (British) থেকে ভারতের স্বাধীনতা (Independence) সবটাই নিজের চোখে দেখেছিলেন তিনি। পরে দেশভাগের (partition) সময় বাংলাদেশ ছেড়ে স্বামী সুবল মণ্ডলের সঙ্গে চলে আসেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে, মালদা জেলার গাজোল ব্লকের করচাডাঙা গ্রামে। তারপর থেকে সেখানেই স্বামী, আট ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে শুরু হয় জীবনযাপনের নতুন যুদ্ধ। আজ থেকে প্রায় ৩৫ বছর আগে মৃত্যু হয় তাঁর স্বামী ও পাঁচ ছেলে। এরপর ২০ জন নাতি-নাতনি ও বাকি সন্তানদের নিয়ে দিন কেটে যাচ্ছিল বেলকা মণ্ডলের।

মায়ের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বেলকাদেবীর ছোট ছেলে সুনীল বলেন, "গত বিধানসভা নির্বাচনেও ভোট দিয়েছিল মা। গত রবিবার রাতে আচমকা শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তাঁর। তারপরই মারা যায়। মায়ের শেষ ইচ্ছা ছিল, তাঁর মৃত্যুতে যেন গ্রামবাসীরা শোকপ্রকাশ না করে শেষকৃত্যে শোভাযাত্রা বের করে। আমাদের প্রতিবেশীরা তা পূরণ করেছেন।"