Mamata Banerjee (Photo Credits: ANI)

কলকাতা, ১৩ জুলাই: লোকসভার পর রাজ্যের চার বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনেও দারুণ ফল করল তৃণমূল কংগ্রেস। যে চার কেন্দ্রে ভোট ছিল তার মধ্যে তিনটতেই গত বিধানসভায় হেরেছিল তৃণমূল। কিন্তু সেই চার আসনেই এবার নজির গড়া জয় পেল তৃণমূল। চারে চার হওয়ার পর হাসিমুখে মমতার জবাব, "একদিকে এজেন্সি, অন্য দিকে বিজেপি। মানুষ ওদের রুখে দিয়েছে।" আম্বানি পরিবারের বিয়ে সেরে মুম্বই থেকে কলকাতায় ফেরার পরই মমতা শুনলেন দলের দারুণ ফলের খবর। উচ্ছ্বসিত মমতার জবাব, " অনেক চক্রান্ত করা হয়েছিল। একদিকে বিজেপি আর অন্য দিকে এজেন্সি। মানুষই এই চক্রান্তকে উড়িয়ে দিল। এই জয় মানুষের। সব কৃতিত্ব মানুষের। আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা আরও বাড়ল। আরও বেশী করে মানুষের পাশে থাকতে হবে।" আর ক দিন পরেই তৃণমূলের শহিদ দিবস। লোকসভা ও উপনির্বাচনের জয় ২১ জুলাই 'শহিদদের' উতসর্গ করা হবে বলে মমতা ঘোষণা করেন।

যে চার কেন্দ্রে ভোট ছিল তার মধ্যে তিনটতেই গত বিধানসভায় হেরেছিল তৃণমূল। এমনকী সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা ভোটেও এই তিন কেন্দ্রে বেশ অনেকটা মার্জিনেই পিছিয়ে ছিল রাজ্যের শাসক দল। এমনকী মানিকতলাতেও তৃণমূলের লিড বেশ কমই ছিল। তাই অনেকেই ভেবেছিলেন বাংলায় লোকসভা ভোটের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার ভাল মঞ্চ হয়ে উঠতে পারে চার কেন্দ্রের বিধানসভা উপনির্বাচন। কিন্তু কোথায় কী! মানিকতলা ধরে রেখে বাগদা, রায়গঞ্জ, রানাঘাট দক্ষিণে জয় ছিনিয়ে নিল তৃণমূল। চার কেন্দ্রের জয়েই তৃণমূল নজির গড়ল।

মানিকতলায় রাজ্যের প্রয়াত মন্ত্রী সাধন পান্ডে-র স্ত্রী সুপ্তি পান্ডের জয়ের ব্যবধান দাঁড়াল ৬২ হাজার ৩১২। এর আগে মানিকতলায় সাম্প্রতিক অতীতে কেউ এত মার্জিনে জেতেনি। রায়গঞ্জ কৃষ্ণ কল্য়াণীর হাত ধরে এই প্রথম জিতল তৃণমূল। এর আগে দল তৈরির পর থেকে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির এলাকা রায়গঞ্জে কখনও জিততে পারেনি তৃণমূল। ফলে এবারের উপনির্বাচনে রায়গঞ্জের জয় তৃণমূলকে রাজ্যের মানচিত্রে আলাদাভাবে জায়গা দিল। রায়গঞ্জে দিদির অভিষেক জয়ে তৃণমূলের কৃষ্ণ কল্যাণীর ব্যবধান দাঁড়াল ৫০ হাজারেরও বেশী। বাগদায় তৃণমূলের জয়ের নজির হল সবচেয়ে কম বয়েসে বিধায়ক হওয়ার। নরেন্দ্র মোদী সরকারের মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের গড়ে হারল বিজেপি। মাত্র ২৫ বছর বয়েসে বিধায়ক হচ্ছেন মতুয়ার ঠাকুর পরিবারের কন্যা মধুপর্ণা ঠাকুর। এবার লোকসভায় বনগাঁয় শান্তনু ঠাকুরের জয়ের পিছনে বাগদার লিড বড় ফ্যাক্টার ছিল। সেই বাগদায় মধুপর্ণা জিতলেন ৩৩ হাজার ৪৫৫ ভোটে। পরাস্ত হলেন বিজেপি প্রার্থী বিনয় বিশ্বাস।

তবে তৃণমূলকে সবচেয়ে স্বস্তি দিয়েছে রানাঘাট দক্ষিণের ফল। গত কয়েক বছর হল রানাঘাটে বিজেপির দাপট। এবার লোকসভা ভোটে লোকসভায় রাজ্যের বিজেপির নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে রানাঘাট লোকসভাতেই জিতেছিলেন বিজেপির জগন্নাথ সরকার। রানাঘাট দক্ষিণেও বড় লিড নিয়েছিল বিজেপি। সেই রানাঘাটে তৃণমূলের মুকুট মণি অধিকারীর জয়ের ব্যবধান দাঁড়াল ৩৯ হাজার ৪৮।

ভোটের ফলে হতাশ বিজেপি নেতাদের মুখে তৃণমূলের সন্ত্রাস, ভোটে ছাপ্পা, রিগিংয়ের কথা। তবে শুধু ছাপ্পাতেই এত বড় জয় আসে না সে কথা আড়ালে স্বীকার করছে বিরোধী নেতারা। বিজেপ নেতারাই বলছেন, লোকসভা ধাক্কা পর এত দ্রুত ভোট চলে আসায় তারা প্রচারের সুযোগই পাননি। সঙ্গে তো তৃণমূলের লোকসভা ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস তো ছিল। এবার রাজ্যে হতে চলেছে ৬টি কেন্দ্রে উপনির্বাচন। তার মধ্যে রয়েছে নৈহাটি,মেদিনীপুর, সিতাই, তালডাংরা, মাদারিহাট ও হাড়োয়া। নিজেদের দ্রুত গুছিয়ে নিলে বাংলায় বিজেপির বিপর্যয় আর বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে।