
একদিকে ট্যাংরাকাণ্ডের রেশ এখনও কাটেনি। এরমধ্যেই শহরের দুই প্রান্ত ঘটে গেল একইরকমের ঘটনা। শনিবার সকালে একদিকে যেমন মধ্যমগ্রামে উদ্ধার হওয়া মা-মেয়ের দেহ নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে, তখন অন্যপ্রান্তে অর্থাৎ বেহালার (Behala) শকুন্তলা পার্ক থেকে উদ্ধার বাবা-মেয়ের দেহ। জানা যাচ্ছে, শুক্রবার দুপুরে মেয়েকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাবে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন বছর স্বজন বসু (৫৩) নামে ওই ব্যক্তি। দিন গড়িয়ে রাত হলেও বাবা-মেয়ে বাড়িতে না ফেরায় সন্দেহ হয়। শুরু হয় খোঁজাখুজি, অবশেষের রাতে বেহালার শকুন্তলা পার্কের অফিস থেকে উদ্ধার হয় স্বজন ও সৃজা দাসের (২২) ঝুলন্ত দেহ।
শকুন্তলা পার্কের অফিস থেকেই উদ্ধার দেহ
জানা যাচ্ছে, মহেশতলা থানার নুঙ্গি এলাকার বাসিন্দা ছিলেন স্বজন দাস। তবে তাঁর অফিস ছিল বেহালায় শকুন্তলা পার্ক এলাকায়। পেশায় তিনি একজন চিমনি ও ওয়াটার পিউরিফায়ার ও ফিল্টারের ব্যবসায়ী ছিল। ফলে তাঁর যাবতীয় কাজকর্ম শকুন্তলা পার্কের ওই ভাড়াবাড়িতেই। শুক্রবার দুপুর ১টা নাগাদ মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। কথা ছিল ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু সন্ধ্যে গড়িয়ে গেলেও বাড়িতে দুজনে না ফেরায় একাধিকবার ফোন করেন স্বজনবাবুর ফোনে। কিন্তু না ফেরায় সন্দেহ হওয়ায় অফিসের কর্মীদের ফোন করেন।
অফিস থেকে উদ্ধার হয় দেহ
বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজির মাঝে এক কর্মী অফিসে গিয়ে দেখতে পায় ঝুলছে স্বজন ও সৃজার মৃতদেহ। তারপর তাঁরাই পুলিশ ও স্বজনবাবুর পরিবার ও আত্মীয়দের খবর দেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। জানা যাচ্ছে, সিলিংয়ের একটি হুকের দড়ির একপ্রান্তে ঝুলছিল স্বজন ও অপরপ্রান্তে সৃজার মৃতদেহ। প্রাথমিক তদন্তে আত্মঘাতী বলেই মনে করছে তদন্তকারীরা। ঘটনার তদন্তে নেমেছে পর্ণশ্রী থানা ও লালবাজারের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিমের আধিকারিকরা।
অটিজমে আক্রান্ত ছিল মেয়ে
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, আদপে খুবই শান্তপ্রিয় মিশুখে মানুষ ছিলেন স্বজনবাবু। কিন্তু তাঁর মেয়ে ছোট থেকেই অটিজমে আক্রান্ত। যা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় ভুগছিলেন তিনি। তাঁর রোগের চিকিৎসার জন্য শহর তথা রাজ্যের নামীদামী হাসপাতাল, ডাক্তার তো বটেই, এমনকী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়েছিলেন। কিন্তু কোনওভাবেই মেয়েকে সুস্থ করতে পারছিলেন না। এদিকে মেয়ে অন্ত প্রাণ ছিল তাঁর। সেই কারণেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এই চরম সিদ্ধান্ত নেন স্বজনবাবু।