Memorable Win at Oval. (Photo Credits:X@BCCI)

ENG vs IND Oval Test Day 5: ওভাল টেস্টের শেষ দিনে অবিশ্বাস্য জয় ভারতের। একেবারে হারের মুখে দাঁড়িয়ে, শেষ টেস্টে নাটকীয় কায়দায় ৬ রানে জিতে সিরিজ ২-২ ড্র করে মাথা উঁচু করে দেশে ফিরছেন শুভমন গিলরা। শেষ দিনে জিততে হলে ইংল্যান্ড করতে হত ৩৫ রান, টিম ইন্ডিয়ার প্রয়োজন ছিল ৪টি উইকেট। মহম্মদ সিরাজের আগুনে দ্বিতীয়টাই সত্য়ি হল। ইংল্যান্ডকে ৩৬৭ রানে অল আউট করে সিরিজ বাঁচালেন গিলরা। সিরাজ এদিন জেমি স্মিথ, জেমি ওভারটন ও জয়-পরাজয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা গাস অ্যাটকিনসনকে আউট করে ভারতকে স্মরণীয় জয় এনে দিলেন। এক হাতে ব্যাট করতে নেমে অসম্ভব সাহসের পরিচয় দিয়ে শেষ পর্যন্ত ট্র্যাজিক নায়ক হয়ে মাঠ ছাড়তে হল ক্রিস ওকসকে। অ্যাটকিনসন-কে বোল্ড করে দলকে জেতালেন সিরাজ।

সিরিজে কেউ জিতল না, জিতল টেস্ট ক্রিকেট

এবারে ইংল্যান্ডে ভারতের টেস্ট সিরিজটা অমিমাসিংতভাবে শেষ হল। ভারত বা ইংল্য়ান্ড কেউ জিতল না, জিতল টেস্ট ক্রিকেট। আর একবার প্রমাণিত হল টি-২০-র যুগেও টেস্টই আসল আর সবচেয়ে বেশি উত্তেজক ফর্ম্যাট। একেবারে পেন্ডুলামের মত একবার এদিক, তো আরেকবার ওদিকে ঘুরল সিরিজের ভাগ্য। ইংল্যান্ড যতবার এগিয়ে গিয়েছে, ততবার নিজেদের সবটা উজাড়ে করে ফিরে এসছেন গিলরা। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের অবসরের পর প্রথম টেস্ট সিরিজটা গৌতম গম্ভীর-শুভমন গিলদের টিম ইন্ডিয়া প্রমাণ করল তাদের ক্ষমতা আর প্রতিভা অনেকটা।

এক নজরে ওভালের স্কোরবোর্ড

ইংল্যান্ডের একেবারে হাতের মুঠোয় ছিল ম্যাচ

জো রুট- হ্যারি ব্রুকের চতুর্থ উইকেটে ১৯৫ রানের পার্টনারশিপ, জোড়া সেঞ্চুরিতে একটা সময় মনে হচ্ছিল, হাসতে হাসতে সিরিজ ৩-১ জিতবেন ওলি পোপরা। একটা সময় ইংল্যান্ডের জিততে দরকার ছিল মাত্র ৭৩ রান, হাতে তখনও ৭ উইকেট। কিন্তু হ্যারি ব্রুক (১১১)-র আউটের পরই খেলা ঘুরতে থাকে। তবু রুট যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন একবারও মনে হয়নি গিলরা সিরিজে সমতায় ফিরতে পারবেন। একটা সময় ইংল্যান্ডকে জিততে হলে করতে হত ৩৭ রান, হাতে ৫ উইকেট।  কাল, খেলার শেষের দিকে ১৪ বলের মধ্যে জ্যাকব বেথেল (৫) ও জো রুট (১০৫)-র আউটের পর ম্যাচে ফেরে টিম ইন্ডিয়া। তখনই আশা জেগেছিল গিলদের নিয়ে। কিন্তু তবু অনেকে ভেবেছিলেন, শেষ দিনে ইংল্যান্ডের লোয়ার অর্ডার ব্যাটাররা চেনা পিচ-পরিস্থিতিতে ম্য়াচ বাঁচিয়ে দেবেন। কিন্তু জেমি স্মিথরা সেটা পারলেন না। দিনের শুরুতে জোড়া বাউন্ডারি হাঁকিয়ে টিম ইন্ডিয়ার সমর্থকদের মাথায় হাত ফেলে দেন জেমি ওভারটন। দ্রুত ৩৫ থেকে ইংল্য়ান্ডের টার্গেট ২৭-এ নেমে এসেছিল। তখন মনে হচ্ছিল, দ্রুত ম্য়াচ শেষ করে ফেলবেন ইংল্যান্ডের ব্য়াটাররা। কিন্তু সেখান থেকে অবিশ্বাস্য কামব্যাক সিরাজদের।

এভাবে এক হাতে ব্যাট করতে নামেন ক্রিস ওকস, তবে বল মোকাবিলা করেননি, নন-স্ট্রাইকার এন্ডে হাতে ব্যথা নিয়েই দৌড়ন

কীভাবে অবিশ্বাস্য কায়দায় জিতলেন সিরাজরা

উইকেটকিপার-ব্যাটার জেমি স্মিথ-কে আউট করে দিনের প্রথম সফলতা পান সিরাজ। এরপর ওভারটন-অ্যাটকিনসন প্রতিরিধ গড়ছিলেন। কিন্তু ওভারটন-কে (৯)-কে এলবি করে দলকে জয়ের আশা দেখান সেই সিরাজ। ইংল্যান্ডের তখন দরকার ২১ রান, হাত ২টি উইকেট। ঠিক তারপরই জোস টাঙ (০)-কে আউট করেন কৃষ্ণা। ইংল্যান্ড তাদের নবম উইকেট হারায় ৩৫৭ রানে। এরপরই ঘটে অদ্ভুত ঘটনা। একটা হাতে প্লাস্টার থাকলেও, একটা হাত নিয়ে প্রচন্ড যন্ত্রণা সত্ত্বেও ব্যাট করতে নামেন ক্রিস ওকস। যে ওকস প্রথম ইনিংসে বল করার পর বড় চোট পাওয়ায় আর খেলায় অংশ নিতে পারেনি। তিনি আর খেলতে পারবেন বলেও জানানো হয়েছিল। তাই টেস্টের চারটে দিন ইংল্যান্ড কার্যত ১০ জনেই খেলে। ওকসকে বাঁচিয়ে অ্যাটকিনসন দলকে জয়ের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। ওকস কোনও বল না খেললেও নন স্ট্রাইক এন্ডে দাঁড়িয়ে রান নিতে ভাল চুটতে থাকেন।

এক হাতে ব্যাট করতে নামা ক্রিস ওকসের প্রশংসায় ক্রিকেট বিশ্ব

এক হাতের ব্যাটারের লড়াই দেখে তখন গোটা ওভাল হাততালি দিচ্ছে। শেষ উইকেটে ১০ রান যোগ করে অ্যাটকিনসন-ওকস জুটি তখন ভারতীয়দের কাছে ত্রাস হয়ে উঠছেন। কিন্তু ইনিংসের ৮৫তম ওভারের প্রথম বলে অ্যাটকিনসনকে বোল্ড করে দলকে স্মরণীয় জয় এনে দিলেন সিরাজ।

ম্য়াচের সেরা সিরাজ নিলেন ৯টি উইকেট

১০৪ রানে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচের সেরা মহম্মদ সিরাজ। এদিন শেষ উইকেটটি সহ ইংল্য়ান্ডের মোট ৩জনকে আউট করলেন। প্রসিধ কৃষ্ণা ১২৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট। কৃষ্ণা এদিন বোল্ড করলেন দশ নম্বরে ব্যাট করতে নামা জোশ টাঙকে। দুই ইনিংস মিলিয়ে সিরাজ ৯টি আর কৃষ্ণা ৮টি উইকেট নিলেন। সিরাজ আর কৃষ্ণা ওভাল টেস্টে মোট ১৭টি উইকেট নিলেন। সিরিজের প্রথম লিডস ও তৃতীয় লর্ডস টেস্ট জেতে ইংল্যান্ড, আর দ্বিতীয় এজবাস্টেন ও পঞ্চম টেস্ট ওভালে জিতে সমতায় ফেরে ভারত। ম্যানচেস্টারে চতুর্থ টেস্ট জেতে টিম ইন্ডিয়া।