Credit: Instagram

বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার মন্দির রয়েছে এবং প্রতিটি মন্দিরের নিজস্ব গল্প এবং গুরুত্ব রয়েছে। কিছু মন্দির বিশাল স্থাপত্যের জন্য পরিচিত, আবার কিছু মন্দির ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য পরিচিত। ভিন্ন দেব-দেবীদের উৎসর্গীকৃত অনেক মন্দির রয়েছে, কিন্তু বিশ্বে এমন একটি মন্দির রয়েছে যা বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য পরিচিত। সাধারণত ইচ্ছা পূরণ করতে এবং ভগবানের আশীর্বাদ পেতে মন্দিরে যায়, তবে জাপানে একটি মন্দির রয়েছে যেখানে বিবাহবিচ্ছেদ জন্য যাওয়া হয়। এই মন্দিরটি পারিবারিক সহিংসতা বা নৃশংসতার শিকার হওয়া মহিলাদের জন্য আশ্রয়স্থল।

কথিত আছে যে এই মন্দিরটি কয়েক শতাব্দী আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যখন জাপানে মহিলাদের অধিকার খুবই কম ছিল। এই মন্দিরে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হওয়ার পাশাপাশি সামাজিক সমর্থনও পেয়েছেন নারীরা। বর্তমান যুগেও এই মন্দির নারীদের ক্ষমতায়নের প্রতীক। পূর্ববর্তী সময়ে যখন জাপানে মহিলাদের কোনও অধিকার ছিল না এবং পুরুষরা সহজেই তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ করত, গার্হস্থ্য সহিংসতায় ভুক্তভোগী মহিলাদের আশ্রয় দিয়েছিল এই মন্দির। স্বামীর নিষ্ঠুরতা থেকে পালিয়ে আসা প্রতিটি মহিলার জন্য সবসময় দরজা খোলা থাকে এই মন্দিরের।

এই মন্দিরে এসে মহিলারা শারীরিক নিরাপত্তা পাওয়ার পাশাপাশি এমন একটি পরিবেশ পায় যেখানে আধ্যাত্মিক শান্তি এবং সান্ত্বনা রয়েছে। বর্তমান যুগেও এই মন্দিরটি সেই সমস্ত মহিলাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস যারা যেকোনও ধরনের নিপীড়নের শিকার। জাপানের কামাকুরা শহরে অবস্থিত এই অনন্য মন্দির, যার ইতিহাস প্রায় ৭০০ বছরের পুরোনো। এই মন্দিরটি 'ডিভোর্স টেম্পল' নামেও পরিচিত। বৌদ্ধ সন্ন্যাসী কাকুসান তাঁর স্বামী হোজো তোকিমুনের সঙ্গে তৈরি করেছিলেন এই মন্দিরটি। তখন নারীদের খুব কম অধিকার ছিল এবং তারা তাদের স্বামীদের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের বিষয়ে স্বাধীন ছিল না।

কাকুশান নিজেও একই রকম অসুখী দাম্পত্য জীবনে আটকা পড়েছিলেন, তাই তিনি এমন একটি জায়গা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন যেখানে নারীরা তাদের স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শান্তিতে বসবাস করতে পারে। স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের আগে মহিলারা ৩ বছর থাকতে পারতেন এই মন্দিরে। পরে এই সময়কাল কমিয়ে করা হয় ২ বছর। এই মন্দিরে থেকে নারীরা স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগও পেয়েছে। বহু বছর ধরে শুধুমাত্র মহিলাদের প্রবেশের অনুমতি ছিল এই মন্দিরে। কিন্তু ১৯০২ সালে এঙ্গাকু-জি মন্দিরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন পুরুষ মঠ নিযুক্ত করা হয় এবং পুরুষদেরও ভর্তি করা শুরু হয়।