শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গাপুজো (File Photo)

আজ দশমী। ন' দিন বাড়িতে কাটিয়ে বাড়ির মেয়ের কৈলাসে ফিরে যাওয়ার পালা। কয়েকটা দিনের হুল্লোড় শেষে আজ বিষাদের পালা। বিচ্ছেদের পালা। এক বছর পর মা আবার ফিরবেন। ঢাকে বিদায়ের সুর। মণ্ডপ খালি করে মা চলে যাবেন। আজ সকালে দশমীর আরতি শেষে বেজেছে বিদায়ের ঢাক। এক একটি বনেদি বাড়িতে এক একরকম নিয়মে বিদায় জানানো হচ্ছে উমাকে। কোথাও বন্দুকের গুলিতে, কোথাও নীলকণ্ঠ পাখি উড়িয়ে, কোথাও বান মেরে শুরু হয় প্রতিমা নিরঞ্জনের যাত্রা। মহিলারা মাকে বরণ করে নিয়ে মেতেছেন শেষ দিনের সিঁদুর খেলার হুল্লোড়ে। দেবী বরণের পর সিঁদুর খেলায় মাতলেন সাংসদ লকেট চ্যাটার্জী।

সেরকমভাবেই আজ কলকাতার বনেদি শোভাবাজার রাজবাড়িতে হয়েছে মাকে কৈলাসে পাঠানোর প্রস্তুতি। আজকের দিনে রীতি মেনে শোভাবাজার রাজবাড়িতে হয় অস্ত্রপূজা। অনেক নিয়ম রীতি মেনে হয় শোভাবাজার রাজবাড়ির নিরঞ্জন। মায়ের দশভুজার পুজোর পর হয় নির্মাল্যবাসিনীর পুজো। এরপর ঘট নাড়িয়ে মায়ের চরণ ধরে তারা বলেন- 'আমাদের চোখের জলে ভাসিয়ে তুমি এগোও শ্বশুর বাড়ির দিকে। কিন্তু কথা দাও আবার পরের বছর আসবে মা। জজমানের হিতের জন্য পরের বছর এসো।' আরও পড়ুন, মন খারাপের বিজয়া দশমীতে শুরু সিঁদুর খেলা, অপেক্ষা আবার এক বছরের

এরপর ঘট নাড়িয়ে সুতো কেটে দেওয়া হয়। এরপর একটি হাঁড়ির সর্বাঙ্গে দই ও চাল মাখিয়ে কানায় কানায় পূর্ণ করে ধাতুর দর্পণের শলা কাটা দণ্ড জলে ভাসাতে হয়। দর্পণে পড়বে মায়ের পায়ের প্রতিবিম্ব। সমস্ত জায়গাটি নির্মাল্যমুক্ত করা হয়। এরপর অর্ঘ্য সংগ্রহ করে মাথায় করে নিয়ে গিয়ে একবছর রাখা হয়। নির্মাল্যের ফুল, ঘট সরিয়ে সেখানে বালি ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর মাকে বরণ করতে হয়। শ্রী, ঘট দিয়ে বরণ করা হয়। এরপর হয় কনকাঞ্জলি। এরপর মায়ের কানে কানে বলতে হয় একবছর পর এসো মা। রুপোর থালায় রাখা মোহর, সোনা বা গিনি মায়ের পিছন থেকে ফেলা হয়। এরপর আচার মেনে সিঁদুর খেলা হয় যদিও এর কোনো উল্লেখ পুরানে নেই। মানুষের কাঁধে করে দেবী প্রতিমা যান। এরপর গঙ্গাবক্ষে দুটি নৌকায় দেবীর কাঠামো প্রতিমা রেখে নৌকা দুটি ধীরে ধীরে সরিয়ে সম্মানের সঙ্গে নিক্ষেপ করা হয়। এরপর সন্ধেবেলা আনন্দ, মিষ্টিমুখ ও কোলাকুলির মধ্যে দিয়ে শুরু হয় শোভাবাজার রাজবাড়ির বিজয়াদশমী।