সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান উৎসব রামনবমী আসছে রবিবার। চৈত্র মাসের শুক্ল নবমী তিথিতে পালন করা হয় ভগবান রামচন্দ্রের জন্মোৎসব – যা হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী অযোধ্যার রাজা দশরথ ও রানি কৈকেয়ীর গর্ভে রামের আবির্ভাব ঘটে। এই দিনটি শুধুমাত্র উৎসব নয়, ভক্তির পূর্ণ এক মাহাত্ম্যপূর্ণ উপলক্ষ। তবে অনেকেই জানেন না, রামনবমীর পূণ্য তিথিতে কিছু নির্দিষ্ট কাজ রয়েছে যা করলে মিলতে পারে বিশেষ ফল। আর মিস করলে,অপেক্ষা করতে হবে পুরো এক বছর!

রামনবমীর আগের রাতেই এই কাজগুলো সেরে ফেলুন:

* গৃহ পরিষ্কার ও পবিত্রতা বজায় রাখুন:

আগামীকাল ভগবান রামের জন্মতিথি। তাই আজ রাতেই ঘরদোর পরিষ্কার করে নিন। বিশেষ করে পূজার ঘর পরিষ্কার করে প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখুন।

* ভোরে স্নান করে নতুন বা পরিষ্কার কাপড় পরিধান করুন:

রামনবমীর দিন সূর্যোদয়ের পর স্নান করে সাদা বা হলুদ বস্ত্র ধারণ করুন। শুদ্ধ চেতনা নিয়ে দিন শুরু করলে পূর্ণ ফল লাভ হয়।

* রাম নামের জপ করুন:

এই রাতে ও পরদিন সকালে ‘শ্রী রাম, জয় রাম, জয় জয় রাম’ মন্ত্র জপ করলে মন শান্ত হয় ও পুণ্য লাভ হয়।

* পূজার সামগ্রী প্রস্তুত রাখুন:

গোলাপজল, তুলসীপাতা, মিষ্টান্ন, ফল, ধূপ, দীপ, ফুল – এগুলো আজই সংগ্রহ করে রাখুন। ভগবান রামের পুজোর জন্য এগুলো অপরিহার্য।

* ভোগ রান্নার পরিকল্পনা করুন:

রামনবমীর বিশেষ ভোগ হিসেবে পান্তুয়া, সুজি হালুয়া, খিচুড়ি, সবজি, লাবড়া ও ফলমূল পরিবেশন করা হয়। সকালে রান্না করে পূজার পর প্রসাদ বিতরণ করুন।

* রামায়ণ পাঠ করুন বা শুনুন:

রামনবমীর মাহাত্ম্য উপলক্ষে সন্ধ্যায় ‘রামায়ণ’ পাঠ বা শ্রবণ বিশেষ ফলদায়ক বলে মনে করা হয়। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসে এই আয়োজন করুন।

* কন্যা পুজো বা দান করুন:

অনেক স্থানে রামনবমীতে কুমারী পুজোর প্রচলন আছে। পাশাপাশি দরিদ্রদের খাদ্য, বস্ত্র বা অর্থ দান করলে তা মহৎ কাজ বলে গণ্য হয়।

* বৃক্ষরোপণ বা গাছকে জল দেওয়া।ভগবান রাম প্রকৃতি প্রেমিক ছিলেন। তাই এই দিন বৃক্ষরোপণ,তুলসী গাছে জল দেওয়া বা পরিবেশ রক্ষার যে কোনও কাজ করলে তা ভগবান রামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন বলে ধরা হয়।

* গীতার অধ্যায় পাঠ। যদিও গীতা কৃষ্ণের সঙ্গে সম্পর্কিত, তবে রামচরিত বা ধর্মপথ বুঝতে গীতা পাঠ এই দিনে বিশেষ উপকারী। এতে মানসিক স্থিতি ও আত্মিক উন্নতি ঘটে।

* অসহায়,বৃদ্ধ বা গরিবদের সেবা করা:রাম ছিলেন রাজারাজেশ্বর, কিন্তু সর্বদা প্রজার পাশে ছিলেন। এই দিন বৃদ্ধাশ্রমে খাবার বিতরণ, রাস্তায় বসবাসকারী মানুষদের সাহায্য করা, বা পশু-পাখিকে আহার করানো অত্যন্ত পুণ্যদায়ক।

* দাম্পত্য জীবনের সমস্যা দূর করতে স্ত্রীর সঙ্গে একত্রে রাম নাম জপ করলে পূর্ণ ফল লাভ হয়।

যাদের দাম্পত্য জীবনে সমস্যা চলছে, তারা এই দিনে একসঙ্গে রাম নাম জপ করলে তা সম্পর্ক মজবুত করতে সহায়তা করে। রাম-সীতার আদর্শ জীবন দাম্পত্য সম্পর্কের এক অনন্য পথপ্রদর্শক।

* রাম মন্দির বা কোনও আশ্রমে সেবা করা: এই দিনে আশ্রমে গিয়ে ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ, মন্দির পরিষ্কার করা, বা সেবার কাজে অংশগ্রহণ করলে আত্মিক শান্তি মেলে।

* ছোটদের ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া: রামনবমীকে ঘিরে ছোটদের ধর্মীয় গল্প বলা, রামের জীবনের মূল্যবোধ শেখানো – এগুলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সংযম ও আদর্শ জীবনের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।

রামনবমী শুধুমাত্র পূজা বা পঞ্জিকার নিয়ম মেনে একটি ধর্মীয় আচরণ পালন করার দিন নয়। এটি মানবিকতা, সেবা, ভক্তি এবং ন্যায়-নীতির প্রতীক। তাই পঞ্জিকার বাইরে এই কাজগুলি করে দিনটিকে আরও পূর্ণতা দিন। কেন এত গুরুত্ব রামনবমীর?

রামনবমী কেবল এক ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়,এটি ন্যায়,ধর্ম,ভক্তি ও আদর্শ জীবনের প্রতীক। ভগবান রামের জীবনচরিত আমাদের শেখায় সত্য, ধৈর্য ও কর্তব্যের মাহাত্ম্য। এই দিনে সৎ পথে চলার প্রতিজ্ঞা নিলে তা জীবনে শুভ ফল বয়ে আনে।

এই পবিত্র দিনে সব কাজ ফেলে কিছুটা সময় দিন ধর্মচর্চায় ও আত্মিক উন্নতিতে। রামনবমীর পূণ্য লগ্নে নিজেকে শুদ্ধ করুন। কারণ পরের রামনবমী আসতে কিন্তু ঠিক এক বছর লাগবে!