Sheikh Hasina and KP Sharma Oli. (Photo Credits: Wikimedia Commons, FB)

Leaders Fallen to Protests: গণআন্দোলনের পর অবশেষে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি (KP Sharma Oli)। গতকাল, সোমবার কাঠমাণ্ডুতে তরুণ প্রজন্মের বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশের গুলিতে অন্তত ২০ জনের মৃত্যুর ঘটনায় সারা বিশ্বে নিন্দের ঝড় বয়ে যায় নেপাল সরকারকে নিয়ে। এদিন, দুপুরে ইস্তফাপত্র দিয়ে দেশ ছাড়েন কেপি শর্মা ওলি। ঠিক যেমনটা গত বছর বাংলাদেশের ততকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-কে করতে হয়েছিল। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, বড় আকারের গণআন্দোলন ও জনবিক্ষোভের মুখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান (প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি)-দের পদত্যাগ করতে হয়েছে।

এক নজরে দেখে নেওয়া নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির আগে গণআন্দোলনের জেরে বিশ্বের ১৭জন রাষ্ট্রপ্রধানের পদত্যাগের ঘটনা-

১) মিলোস ভুচেভিচ (সার্বিয়া, প্রধানমন্ত্রী, ২০২৫)

নভি সাদের এক রেলস্টেশনের ছাদ ভেঙে ১৫ জনের মৃত্যুর পর দেশজুড়ে দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই বিক্ষোভের জেরে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী মিলোস ভুচেভিচ। আরও পড়ুন-বাংলাদেশের পথ ধরল নেপাল, প্রবল বিক্ষোভের মাঝে ইস্তফা দিতে বাধ্য হলেন প্রধানমন্ত্রী ওলি

২) ইউন সুক-ইয়োল (দক্ষিণ কোরিয়া, প্রেসিডেন্ট, ২০২৪-২৫)

৩ ডিসেম্বর ২০২৪-এ হঠাৎ করে সামরিক আইন জারি করে মহাবিতর্কে জড়িয়েছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইয়োল। এরপর দেশজুড়ে সারমিক আইন ও প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়। হাজারে হাজারে সাধারণ মানুষ পথে নামে। সাংবিধানিক ক্ষমতা অপব্যবহার, দুর্নীতি ও কম জনপ্রিয়তার কারণে কয়েকদিনেই দাবানলের মতো আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। জাতীয় সংসদ প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইয়োলকে চলতি বছর ৪ এপ্রিল সাংবিধানিক আদালত সর্বসম্মত রায়ে তাকে পদচ্যুত করে।

৩) শেখ হাসিনা (বাংলাদেশ, প্রধানমন্ত্রী, ২০২৪)

চাকরির কোটার বিরুদ্ধে ছাত্র-যুবদের রক্তক্ষয়ী আন্দোলন রূপ নেয় সর্বাত্মক গণঅভ্যুত্থানে। শত শত প্রাণহানির পর বিক্ষোভকারীরা হাসিনার বাসভবনে প্রবেশ করলে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশত্যাগ করেন। গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

৪) বাসার আল-আসাদ (সিরিয়া প্রেসিডেন্ট)

দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, গৃহযুদ্ধের চাপে অবশেষে ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সিরিয়া ছাড়তে বাধ্য হন। দেশ ছাড়তে পারার সুযোগ পাওয়ায় বাধ্য হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের নির্দেশ দেন, যা সিরিয়ার পাঁচ দশকের আসাদ-জমানার অবসান ঘটায়।

৫) গোতাবায়া রাজাপক্ষ (শ্রীলঙ্কা, রাষ্ট্রপতি, ২০২২)

অর্থনৈতিক সংকট, জ্বালানি ঘাটতি ও দুর্নীতির অভিযোগে বিক্ষোভকারীরা তার বাড়ি ও অফিস দখল করে নেয়। ব্যাপক জনরোষের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে অবশেষে পদত্যাগ করেন গোতাবায়া।

৬) মাহিন্দা রাজাপক্ষ (শ্রীলঙ্কা, প্রধানমন্ত্রী, ২০২২)

অর্থনৈতিক সংকটের প্রতিবাদে দেশজুড়ে সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে পদত্যাগ করতে হয় মাহিন্দা রাজাপক্ষকে। তার সমর্থকদের হামলার পর পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়।

৭) ওমর আল-বশির (সুদান, প্রেসিডেন্ট, ২০১৯)

রুটি-দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে শুরু হওয়া আন্দোলন রূপ নেয় গণআন্দোলনে। খার্তুমের বিশাল সমাবেশ শেষে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করে তাকে ক্ষমতাচ্যুত ও গ্রেফতার করে।

৮) নিকোলাস মাদুরো (ভেনেজুয়েলা, প্রেসিডেন্ট, ২০১৯, আংশিক পদত্যাগ)

মার্কিন সমর্থিত বিরোধী আন্দোলন, মুদ্রাস্ফীতি ও নির্বাচনী কারচুপির অভিযোগে দেশজুড়ে অস্থিরতা তৈরি হয়। তিনি পুরোপুরি ক্ষমতা হারাননি, তবে তার মন্ত্রিসভার বড় অংশ পদত্যাগ করে এবং কার্যত ক্ষমতার অবসান ঘটে।

৯) পার্ক গিউন-হাই (দক্ষিণ কোরিয়া, রাষ্ট্রপতি, ২০১৬)

কেলেঙ্কারির অভিযোগে সিওল জুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের মোমবাতি মিছিল। সংসদে হওয়া ভোট তাঁকে অপসারণ করে, পরে আদালতের রায়ে জেলে যান তিনি।

১০) এডুয়ার্ড শেভার্ডনাদজে (জর্জিয়া, রাষ্ট্রপতি, ২০০৩)

নির্বাচনী জালিয়াতির অভিযোগে রোজ রেভলিউশন শুরু হয়। তিবলিসিতে ব্যাপক বিক্ষোভ শেষে সংসদ দখল হয় এবং তিনি পদত্যাগ করেন।

১১) গনজালো সানচেজ দে লোজাদা (বলিভিয়া, প্রেসিডেন্ট, ২০০৩)

প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি নীতির বিরুদ্ধে সহিংস আন্দোলন "গ্যাস যুদ্ধ"-এ রূপ নেয়। কয়েক ডজন নিহতের পর তিনি দেশ ছেড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পালান।

১২) স্লোবোদান মিলোসেভিচ (সার্বিয়া/যুগোস্লাভিয়া, প্রেসিডেন্ট, ২০০০)

ভোট কারচুপির প্রতিবাদে শুরু হয় “বুলডোজার বিপ্লব”। বেলগ্রেডমুখী লাখো মানুষের মিছিলে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। পরে যুদ্ধাপরাধের মামলায় বন্দিদশায় মৃত্যু হয় তার।

১৩) ফার্দিনান্দ মার্কোস (ফিলিপিন্স, প্রেসিডেন্ট, ১৯৮৬)

ভোট জালিয়াতি ও সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে লক্ষাধিক মানুষ রাস্তায় নামে। শান্তিপূর্ণ ‘পিপল পাওয়ার রেভলিউশন’-এ তিনি হাওয়াই পালাতে বাধ্য হন।

১৪) আনোয়ার আল-সাদাত (ইজিপ্ট, প্রেসিডেন্ট, ১৯৮১)

অর্থনৈতিক নীতি ও ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিচুক্তির বিরোধিতায় জনরোষ বাড়তে থাকে। বিক্ষোভের আবহে শেষমেশ তাঁকে হত্যা করা হয়।

১৫) নিকোলায় চউসেস্কু (রোমানিয়া, প্রেসিডেন্ট, ১৯৮৯)

স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে তিমিসোয়ারা ও বুখারেস্টে বিক্ষোভ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে পরিণত হয়। গ্রেফতার ও সংক্ষিপ্ত বিচারের পর তাকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

১৬) জ্যাঁ-ক্লদ দুভালিয়ের (হাইতি, রাষ্ট্রপতি, ১৯৮৬)

দারিদ্র্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। জনবিক্ষোভের চাপে তিনি দেশত্যাগ করেন এবং ‘দুভালিয়ের বংশ’ এর শাসনের অবসান ঘটে।

১৭) ইদি আমিন (উগান্ডা, প্রেসিডেন্ট, ১৯৭৯)

অত্যাচারী শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং তাঞ্জানিয়ার সমর্থনে সশস্ত্র বিদ্রোহ তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে। তিনি শেষমেশ লিবিয়া ও পরে সৌদি আরবে পালিয়ে যান।