করতারপুর, ১৮ মে: মিলিয়ে দিলেন ওয়াই গুরু। করতারপুর সাহিব গুরুদ্বার। দেশভাগ যে কি বিরাট ক্ষত, তা শুধু ভুক্তভোগীরাই বোঝেন। এই যেমন ধরুন মুমতাজ বিবির কথা। ৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় দাঙ্গার বলি মৃত মায়ের কোলে পড়েছিল একরত্তি শিশুকন্যা। প্রাণভয়ে সবাই তখন এদিক ওদিক ছুটছে। মহম্মদ ইকবাল ও তাঁর স্ত্রী আল্লাহ রাখি তখন পৈতৃক প্রাণ নিয়ে পালাতে পারলে বাঁচেন। এমন সময় মুমতাজ তাঁদের নজরে আসে। শিশুকন্যার পরিচয় জানার সুযোগ ছিল না। ভারত ছেড়ে সেদিন পাকিস্তানে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন ওই দম্পতি। তবে মুমতাজকে সঙ্গে নিয়ে যেতে ভোলেননি।
পাকিস্তানের গিয়ে পাঞ্জাব প্রদেশের শেখুপুরা জেলার ভারিকা তিয়ান গ্রামে থাকতে শুরু করেন তাঁরা। এরমাঝে কেটে গেছে ৭৫ টা বছর। ওয়াঘা সীমান্তর কাঁটাতার আরও শক্ত হয়েছে। ইকবাল, আল্লাহ রাখি, কোনওরকম প্রাণে ধরে মেয়েকে তার প্রকৃত পরিচয় জানাতে পারেননি। কিন্তু দুরারোগ্য ব্যাধির কাছে আমরা সকলেই অসহায়। মৃত্যু নিশ্চিত বুঝে মেয়ে মুমতাজকে ডেকে সেই ভয়াবহ দিনটির কথা বলেন ইকবাল।
মুমতাজের বিয়ে হয়েছে। স্বামী সন্তান নিয়ে সংসার। জীবনের বেশিটাই কাটিয়ে দেওয়ার পর জানলেন তিনি মুসলিম নন, শিখ পরিবারের মেয়ে। এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের হারিয়ে ফেলা পরিবারের খোঁজ শুরু করেন মুমতাজ বিবি। পেয়েও যান। সেই পরিবারের সঙ্গে দেখা করতেই করতারপুর সাহিব গুরুদ্বারে ছেলে শাহবাজকে নিয়ে পৌঁছলেন মুমতাজ। সেখানেই দেখা হল তিন ভাই সর্দার গুরমিত সিং, সর্দার নরেন্দ্র সিং ও সর্দার অমরিন্দর সিংয়ের সঙ্গে। দেশভাগের দগদগে ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে সিং পরিবারও। নিজের জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর পাতিয়ালার সিদরানা গ্রামে তাঁরা নতুন করে বসবাস করতে শুরু করেন। ৭৫ বছর পর ফিরে পেলেন নিজেদের দিদিকে।