কলকাতা, ৩১ জানুয়ারি: পূর্বাভাস মত সরস্বতী পুজোয় (Saraswati Puja) অর্থাৎ বুধ-বৃহস্পতিবার বৃষ্টি (Rain) ভেজে বঙ্গ (West Bengal)। শীতের (Winter) ছন্দপতন তো বটেই, অকাল বর্ষণে উজাড় হয়ে যায় বাংলার একাধিক সবজির ক্ষেত (Vegetable Field)। ঝড়ে পড়ে আমের মুকুলও (Mango Mulk)।
হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস শুনে তড়িঘড়ি ক্ষেত থেকে ফুলকপি (Cauliflower) তোলার কাজ শুরু করেছিলেন নিমকুড়িয়ার কালাম মোল্লা। কিন্তু শেষরক্ষা করতে পারলেন না। গতকাল বৃহস্পতিবারের মুষলধারে বৃষ্টির জেরে তাঁর তিন বিঘা ফুলকপির খেত নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়ের খবর অনুযায়ী কালাম জানান, 'এক একটা কপি দেড় কেজির বেশি ওজন। বৃষ্টির জেরে কপির ফুল ফুটে গেছে। দেড় থেকে দু'লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে গেল আমার।' বৃষ্টির জেরে বেশিরভাগ খেতেই জল (Water) জমে গেছে। কোথাও কোথাও গাছ মাটিতে নুয়ে পড়েছে। মাঠে গড়াগড়ি খাচ্ছে টোম্যাটো (Tomato), ক্যাপসিকাম (Capsicum), পেঁপে (Papaiya), শশা (Cucumber)। গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রার পারদ নামায় বাতাসে ঠান্ডার হিমেল আমেজ ছিল যথেষ্ট। ফলে পোয়াবারো অবস্থা ছিল সবজি চাষিদের (Farmers)। শীতের মাঠ ভরা সব্জি বিক্রি করে ভালোই উপার্জন হচ্ছিল রবিশস্য চাষিদের। কিন্তু গত দু'দিনে দফায় দফায় বৃষ্টির দাপটে দফারফা সবজির ক্ষেত। এখন কাঁচালঙ্কা (Green Chili), ক্যাপসিকাম, বিনস, টোম্যাটো, পালংশাক, গাঁদা ফুলেরও (Marry Gold) মরশুম চলছে। অন্যদিকে, ঠান্ডা ও কুয়াশার (Fog) দাপটে আমের মুকুল ফোটা সবে শুরু হয়েছিল। বৃষ্টিতে সেই সদ্য গজিয়ে ওঠা আমের মুকুলও ঝরে গেছে বলে জানিয়েছেন কলকাতা-সহ (Kolkata) বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের চাষিরা। যদিও ভগবানপুর অঞ্চলের কৃষক সহিদ মোল্লা বলেন, 'এখন কপির মরসুম। ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি সবেরই ভালো চাহিদা। দু'বিঘা কপির ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেল বৃষ্টিতে। বাঁধাকপিতে (Cabbage) ফাটল ধরেছে।' আমের ব্যবসায়ী শম্ভু মণ্ডল বলেন, 'অন্যের বাগান লিজ নিয়ে আমের ব্যবসা করি। সবে মুকুল বের হয়েছিল। বৃষ্টিতে মুকুলগুলো ঝরে গিয়ে বড় ক্ষতি হয়ে গেল।' বৃহস্পতিবার দুপুরে ভাঙড় ২ ব্লকের সাতুলিয়া, পিঠাপুকুর, নাংলা, পোলেরহাট, মাঝেরহাট গ্রামে চাষিরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন ক্ষেতের জমা জল বের করে দিতে। কেউ কেউ আবার মাঠ থেকে ক্যাপসিকাম, বিনস, কপি তুলে ঝুড়ি ভর্তি করেন যে যতটা পারেন। এখন বোরো ধানের সময়। আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রোয়ার কাজ চলবে বোরো ধানের। এই চাষে প্রচুর জলের প্রয়োজন। ফলে গত দু'দিনে যেটুকু বৃষ্টি হয়েছে, তাতে বোরো চাষের পক্ষে ভালো। এছাড়া সরষে এবং মুসুর রয়েছে জমিতে। সরষে এখন অনেকটাই পরিণত। ফলে এই বৃষ্টিতে সরষে ফুলের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই বলেই মত চাষিদের। মুসুর গাছের গোড়ায় জল দাঁড়িয়ে গেলে ক্ষতি হয়। কিন্তু বৃষ্টি নেহাৎই কম হওয়ায় মুসুরির জমিতে জল বিশেষ দাঁড়ায়নি। অসময়ের বৃষ্টিতে আলুর ধসা রোগের সম্ভাবনা বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন আলুচাষিরা। আরও পড়ুন: Pantaloons: একসঙ্গে মিলে জাতীয় সংগীত গেয়েছিলেন, সেই কারণে সাসপেন্ড হলেন প্যান্টালুনসের ২৫ জন কর্মী
তবে এই বৃষ্টিতে সবজির প্রবল ক্ষতির সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিচ্ছেন কৃষিকর্তারা। জেলা কৃষি দফতরের হিসেব অনুযায়ী ভাঙড়ের দু'টি ব্লকের ১৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ১৯,২৮৭ হেক্টর কৃষি জমিতে ৩১ হাজার পরিবার কৃষিকাজ করেন। এদের সিংহভাগই ধান(Paddy), পাটের পাশাপাশি সবজি চাষ করে থাকেন। ভাঙড় ১ ব্লকের বিডিও সৌগত পাত্র বলেন, 'অসময়ে বৃষ্টি হলে ফসলের কিছু ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তবে এ নিয়ে এখনও কেউ কিছু জানাননি।'