Kolkata Shocker:শ্রাদ্ধের একমাস পর বাড়িতে হাজির বৃদ্ধ, হুলস্থুল কাণ্ড নৈহাটির সাহেবপাড়ায়
ভূষণ পাল (Photo: Youtube)

নৈহাটি, ১৬ ফেব্রুয়ারি: তাঁর শ্রাদ্ধ-শান্তি (Funeral) হয়েছে মাস খানেকের বেশি হল। শোক আস্তে আস্তে কমে আসছে পরিবারের সদস্যদের। মোটামুটি সব ঠিকঠাকই চলছিল। গতকাল ভরদুপুরে এক আগন্তুককে দেখে ভিরমি খাওয়ার জোগাড় নৈহাটির (Naihati) সাহেব কলোনির পাল বাড়ির সদস্যদের। আগন্তুকের অনুরোধ এল, ‘‘খিদে পেয়েছে, ভাত দে তো!’’ এই শুনে আত্মারাম খাঁচাছাড়া তাঁদের। চেঁচামেচি শুনে হাজির পাড়া-পড়শিরা। হইচই থামতে অবশ্য বোঝা গেল,যিনি বাড়ি ফিরেছেন, তিনি ভূত নন।

এই সময়ের খবর অনুযায়ী, নৈহাটির সাহেব কলোনিতে ভাইপো প্রদীপ ও ভাইঝি গীতার সঙ্গে থাকতেন ৭৪ বছরের ভূষণ পাল। নামকরা এক বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। কিন্তু মাথার কিছু সমস্যা হওয়ায় অবসর নিয়ে নেন। ভূষণের স্ত্রী ছেলে ভাস্করকে নিয়ে মেদিনীপুরে বাপেরবাড়ি থাকেন। ভাস্কর মাঝেমাঝেই মাকে নিয়ে নৈহাটিতে বাবাকে দেখে যেতেন। বয়স যত বাড়ছিল তত মাথার ব্যামো বাড়ছিল। নিয়মিত ডাক্তার দেখাতে হত। তা-ও মাঝেমধ্যেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেন তিনি। কখনও দিনের দিন আবার কখনও দু-একদিন পরে বাড়ি ফিরতেন। তেমনই গত বছরের ১০ নভেম্বর বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি ভূষণ। বাড়ির লোক একমাস অপেক্ষা করেন। সেইসঙ্গে খোঁজাখুজিও চলে। শেষে ১০ ডিসেম্বর নৈহাটি থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন ভূষণের ছেলে ও ভাইপো। এর ঠিক দু'দিনের মাথায় নৈহাটিতে রাস্তার ধারে পড়ে থাকা অজ্ঞাতপরিচয় এক বৃদ্ধকে এলাকার লোকজন নৈহাটি হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে আসেন। ৭ জানুয়ারি বৃদ্ধ মারা যান। পুলিশ বিষয়টি জানার পর মৃত ব্যক্তি ভূষণ পাল কি না তা জানতে পাল পরিবারকে খবর দেয়। সেইমতো পরিবারের লোকজন নৈহাটি হাসপাতালে চলে আসেন। মৃতদেহের মুখ ফুলে গিয়েছিল। তবু গড়নটা ভূষণেরই বলে মনে হয়েছিল সকলের। এরপর পায়ের আঙুল দেখে সকলেই নিশংসয় হন যে মৃতদেহ ভূষণ পালের। পরিবারের হাতে দেহটি তুলে দেয় পুলিশ। আরও পড়ুন: Odisha Shocker: ইউনিফর্ম না পরে আসায় শাস্তি হিসেবে ক্লাস ওয়ানের ছাত্রীর লেগিংস খোলাল শিক্ষক!

বছর চুয়াত্তরের যে ভূষণ পালের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়েছে ক’দিন আগেই। আন্দবাজারের খবর অনুযায়ী, শুক্রবার দুপুরে ঘটনাস্থান নৈহাটির সাহেবকলোনি মোড় এলাকা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ভূষণ থাকতেন ভাইঝি গীতা এবং ভাইপো প্রদীপ পালের বাড়িতে। মানসিক ভাবে পুরোপুরি সুস্থ নন বৃদ্ধ। মাঝেমধ্যেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে দিন কয়েক পরে ফিরে আসেন। মাকে নিয়ে ভূষণের ছেলে ভাস্কর থাকেন মেদিনীপুরে। সেখানেই চাকরি-বাকরি করেন। নৈহাটি রামঘাট শ্মশানে মরদেহ দাহ করে পরিবার। ১১ দিন পর শাস্ত্র মেনে শ্রাদ্ধশান্তির কাজও হয়। যেখানে শ'খানেকের উপর লোক নিমন্ত্রিত ছিলেন। বাবার কাজ শেষে মাকে নিয়ে মেদিনীপুর ফিরে যান ছেলে ভাস্কর। এর একমাস পরে শুক্রবার তাই ভূষণকে দেখে ভূতের ভয়ে চিৎকার করে উঠেছিলেন গীতা। গীতা এ দিন বলেন, 'বাড়িতে একাই ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম বাইরের ঘরে কাকা বসে আছে। প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যাই। চিৎকার করে উঠি। ভাইপো প্রদীপ বলেন, 'প্রথমে বিশ্বাস হয়নি কাকা আবার ফিরে এসেছে। আমাদেরই দেহ শনাক্ত করতে ভুল হয়েছিল। এই তিন মাস কাকা কোথায় ছিল সেটা বলতে পারছে না। এরপর কাকাকে সবসময় চোখে চোখে রাখব।' বাবার ফিরে আসার খবর পেয়ে মাকে নিয়ে মেদিনীপুর থেকে নৈহাটির পথে রওনা দিয়েছেন ভাস্কর।

আগের মৃতদেহটি কার ছিল এখন সেই খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ। তাদের বক্তব্য, ১২ ডিসেম্বর নৈহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে অসুস্থ এক বৃদ্ধকে ভর্তি করিয়েছিলেন স্থানীয় কয়েকজন। ৭ জানুয়ারি মারা যান তিনি। পরিচয় জানতে নিয়ম মতোই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হয়েছিল। মৃতের ছবি ফের বিভিন্ন থানায় পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্তারা। গোটা ঘটনায় ভূষণ পালের অবশ্য কোনও হেলদোল নেই। তিনি আছেন নিজের খেয়ালেই। এতদিন কোথায় ছিলেন? এই প্রশ্ন শুনে খানিক ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলেন। তার পর বললেন, ‘‘এই একটু ঘুরতে গেছিলাম।’’ আপনার শ্রাদ্ধ হয়ে গেছে, জানেন কি? জবাবে বললেন, ‘‘তাই নাকি, কই আমাকে তো নেমন্তন্ন করেনি।’’