সদ্যোজাতর বাবা পরিচয়ে হাসপাতালে তিন যুবক, রহস্য ভেদ করতে দিশেহারা পুলিশ
প্রতীকি ছবি( Photo Credit: Pixabay)

কলকাতা, ২৩ জুলাই: অনেক সময়ই দেখা যায় পিতৃ পরিচয় দিতে পারবেন না বলে সদ্যোজাতকে হাসপাতালে রেখে উধাও হয়েছেন মা। কখনও পরিচয়হীনভাবেই অবহেলায় পড়ে থাকে সদ্যোজাত। এঘটনা আমাদের সমাজে আকছার ঘটে। কিন্তু তাই বলে সদ্যোজাতর পিতৃ্ত্বের দাবি নিয়ে একের পর এক যুব হাসপাতালে হত্যে দিচ্ছেন, এমন ছবিও বিরল। কিন্তু এমনটাই ঘটেছে কলকাতাতে। ঘটনাস্থল যাদবপুর গাঙ্গুলিবাগানের এক নামী বেসরকারি হাসপাতাল। প্রসবযন্ত্রণা নিয়ে সেখানেই ভর্তি হয়েছিলেন স্বপ্না মিত্র। রবিবার তাঁর সন্তান প্রসবের পর থেকেই পিতৃপরিচয় নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন দুই যুবক। গোটা ঘটনায় হকচকিয়ে গিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আরও পড়ুন-কলকাতায় বহুতল থেকে ঝাঁপ তরুণীর, অফিস টাইমে চাঞ্চল্য মিন্টোপার্কে

জানা গিয়েছে, শনিবার বিকেলে প্রসূতি স্বপ্না মিত্র হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন এক যুবক ও একজন বৃদ্ধা মহিলা।  বৃদ্ধা নিজেকে স্বপ্নাদেবীর মা হিসেবে পরিচয় দেন। ওই যুবক তাঁর স্বামীর পরিচয় দিয়েছিলেন। যুবকের নাম দীপঙ্কর পাল। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুকন্যার জন্ম দেন ওই যুবতী। এপর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল, রবিবার বিকেল থেকেই শুরু হয় বিপত্তি। বিকেলে হর্ষ ক্ষেত্রী নামের এক যুবক হাসপাতালে আসেন।  তিনি ওই সদ্যোজাতকে দেখতে চাইলে কর্তৃপক্ষ তাঁর পরিচয় জানতে চান।  তখনই নিজেকে শিশুকন্যার বাবা বলে পরিচয় দেন তিনি।  এই শুনেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চোখ কপালে ওঠে।  তবে শিশু বা মা কারোর সঙ্গেই তাঁর দেখা করতে দেয়নি হাসপাতাল।  এদিকে ততক্ষণে স্বপ্না যে তাঁর স্ত্রী সেবিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নিশ্চয়তা দিতে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন  শংসাপত্রও দেখিয়েছেন দীপঙ্করবাবু। তাই হর্ষ ক্ষেত্রীকে হাসপাতালে ঢুকতে না দিয়ে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে স্বপ্নাদেবীর কেবিনের সামনে দুই নিরাপত্তারক্ষীকে মোতায়েন করা হয়েছে। অন্যদিকে অস্ত্রোপচারের কারণে বেশ অসুস্থ ওই মহিলা তাই বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

এরমধ্যে সোমবার ফের নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হল। বিকেলে প্রদীপ রায় নামের এক যুবক হাসপাতালে এসে স্বপ্না মিত্রের শিশুকন্যাকে দেখতে চান। পরিচয় জানতে গেলে বলেন, তিনি ওই শিশুকন্যার বাবা। একই সদ্যোজাতর একের পর এক বাবা দেখে বেজায় ঘাবড়ে গিয়েছেন হাসপাতাল কর্মীরা। বিষয়টি নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। কোনটা যে আসল বাবা তা বুঝতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে,  এদিকে বাবার পরিচয়ে আসা দ্বিতীয় ব্যক্তি হর্ষ ক্ষেত্রী দাবি করেছেন তাঁর কাছেও বিবাহের শংসাপত্র রয়েছে। পুলিশ চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেন। এমনকী, প্রদীপ রায় ও দীপঙ্কর পালকে ভুয়ো হিসেবে দাবি করে ইতিমধ্যেই তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করেছেন তিনি। তবে গোটা ঘটনার তল খুঁজে পাচ্ছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কেননা স্বপ্না মিত্র এখনও কথা বলার পরিস্থিতিতে আসেননি। যতক্ষণ না তিনি মুখ খুলছেন ততক্ষণ একরত্তির বাবা আসলে কে, সেই রহস্য অজানাই থেকে যাবে।