
রাত তখন ২টো। আচমকাই দরজায় ধাক্কার শব্দ। দরজা খুলতেই এক মহিলা সঙ্গে বেশ কয়েকজন ঢুকে পড়ে নিজেদের আয়কর বিভাগের আধিকারিক হিসেবে পরিচয় দিল।বাইরে তখন দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর পোশাক পরা কয়েকজন জওয়ান। এদিকে ঘরে ঢুকে যথেচ্ছ লুটপাট চালাল ভুয়ো আয়কর বিভাগের আধিকারিকরা। সম্প্রতি ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতার চিনার পার্ক (Chinar Park) এলাকায়। এক প্রমোটারের বাড়ি থেকে লুট করে পালাল লক্ষাধিক নগদ টাকা ও কয়েক ভরি সোনার গয়না। ঠিক যেন স্পেশাল ২৬ সিনেমার প্লট। তবে এক্ষেত্রে যাঁরা প্রতারক তাঁরা কোনও সাধারণ মানুষ নন, বরং তাঁরা আসলে সিআইএসএফ জওয়ান। ঘটনার তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই এক মহিলা সহ মোট সাতজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
প্রোমোটারের বাড়িতে ভুয়ো আয়কর অফিসারদের হানা
জানা যাচ্ছে, গত ১৮ মার্চ রাত দুটো নাগাদ চিনারপার্কের প্রোমোটার এসকে সিংয়ের বাড়িতে হানা দেয় ওই সিআইএসএফের ইনস্পেক্টর ও কনস্টেবলরা। গভীর রাতে দরজা ধাক্কানোর শব্দ শুনে বাড়ির এক মহিলা দরজা খোলেন। তখন কয়েকজন অজ্ঞাত পরিচয়ের পুরুষ ও মহিলা ঘরের ভেতরে ঢুকে নিজেদের আয়কর বিভাগের অফিসার হিসেবে পরিচয় দেন। তারপর বাড়ির সকল সদস্যের ফোন কেড়ে নেয়। এরপর চলে লুটপাট। মৃত এসকে সিংয়ের মায়ের ঘরে ঢুকে ৩ লক্ষ টাকা ও ২০ ভরি সোনার গয়না লুট করে অভিযুক্তরা।
পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে শুরু হয় তদন্ত
পরিবারের বাকি সদস্যদের অভিযোগ, অনান্য ঘরে লুটপাট চালালেও মৃতের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর ঘরে কোনও লুটপাট চালায়নি। বরং তাঁর ঘরে ঢুকে শুধু কাগজে সই করে নিয়ে চলে যায় ভুয়ো অফিসাররা। ঘটনার পরে ব্যবসায়ীর বড় মেয়ে বাগুইআটি থানায় গিয়ে অভিযোগ জানায়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হলে যে গাড়িতে করে অভিযুক্তরা এসেছিল সেই গাড়ির চালক দীপক রানাকে গ্রেফতার করে। সেখান থেকেই জানা যায়, অভিযুক্তরা সকলে সিআইএসএফ জওয়ান।
গ্রেফতার সিআইএসএফ ইনস্পেক্টর ও কনস্টেবলরা
এরপর গ্রেফতার করা হয় আরজি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত লেডি কনস্টেবল লক্ষ্মী কুমারী, কনস্টেবল বিমল থাপা, কনস্টেবল জনার্দন শাহ, হেড কনস্টেবল রামু সরোজ ও ফারাক্কা ব্যারেজের সিআইএসএফ ইনস্পেক্টর অমিত কুমার সিং। সেই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় প্রমোটার এসকে সিংয়ের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী আরতি সিং। প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে, তাঁর পরিকল্পনাতেই এই লুটপাট চালানো হয়েছিল। যদিও এই ঘটনার আরও কেউ জড়িত রয়েছেন কিনা, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।