
বর্তমান যুগের ব্যস্ত জীবনে মানসিক চাপ এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে শরীরে প্রদাহের সমস্যা সাধারণ হয়ে উঠেছে। এটি এমন একটি সমস্যা যা ধীরে ধীরে শরীরকে ভেতর থেকে দুর্বল করে দেয় এবং অনেক গুরুতর রোগের কারণ হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, আর্থ্রাইটিস, এমনকি ক্যান্সারের মতো রোগও হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে শরীর সুস্থ রাখতে প্রদাহ কমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকদের মতে, খাদ্যতালিকায় কিছু পুষ্টি উপাদান অন্তর্ভুক্ত করে প্রদাহ কমানো যেতে পারে। ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং পলিফেনল সমৃদ্ধ খাবারে প্রচুর পরিমাণে প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য থাকে, যা শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরে উপস্থিত ফ্রি র্যাডিকেলগুলিকে দূর করে। এই মুক্ত র্যাডিকেলগুলি কোষের ক্ষতি করে এবং প্রদাহ বাড়ায়। ভিটামিন সি প্রদাহ কমানোর সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে এবং ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। ভিটামিন সি পাওয়া যায় কমলালেবু, লেবু, মৌসুমি, আমলকী, কিউই, পেঁপে এবং ক্যাপসিকামে। এছাড়া ভিটামিন ই একটি চমৎকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কোষের ক্ষতি করে প্রদাহ বাড়াতে পারে। এই ভিটামিন প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করার সঙ্গে ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং হৃদরোগের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। ভিটামিন ই পাওয়া যায় আমন্ড বাদাম, আখরোট, সূর্যমুখী বীজ, পালং শাক, ব্রকলি, অ্যাভোকাডো এবং চীনাবাদামে।
পলিফেনল হল প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন যৌগ যা প্রদাহ কমাতে এবং হৃদরোগের উন্নতিতে সাহায্য করতে পারে। এগুলো শরীরের কোষগুলিকেই রক্ষা করার সঙ্গে মস্তিষ্ককেও সুস্থ রাখে। পলিফেনল পাওয়া যায় সবুজ চা, ডার্ক চকলেট, বেরি, ব্লুবেরি, হলুদ, আদা, আঙ্গুর এবং ডালিমে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান যুগে মানুষ প্রক্রিয়াজাত খাবার, ভাজা খাবার এবং উচ্চ কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার বেশি খাচ্ছে, যা শরীরে প্রদাহ বৃদ্ধি করছে। এই প্রদাহ ধীরে ধীরে শরীরের ক্ষতি করে এবং অনেক রোগের কারণ হয়। শুধু ডায়েট নয়, নিয়মিত ব্যায়াম, ভালো ঘুম এবং মানসিক চাপ কমানোও শরীরের প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে জয়েন্টে ব্যথা, ক্লান্তি বা হজমজনিত সমস্যা অনুভব করলে এটি শরীরে প্রদাহ বৃদ্ধির লক্ষণ হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ।