১৮৬১ সালের ১৭ মে (১২৬৮’র ২৫ বৈশাখ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির যে শ্যামল আঙ্গিনায় জন্মেছিলেন তিনি, সেই শ্যামল প্রাঙ্গণেই শ্রাবণের বর্ষণসিক্ত পরিবেশে ৮০ বছর বয়সে ১৯৪১ সালের এই দিনে চির বিদায় নেন তিনি এই সুন্দর শ্যামল মায়াময় পৃথিবী থেকে। মানবতাবাদী দার্শনিক কবি, বাংলা ছোটগল্পের জনক, বাংলা সংস্কৃতির নতুন দিগন্তের উন্মোচক অমরতায় ভাস্কর হয়ে আছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
বাংলার দিকপাল কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, গল্পকার, প্রাবন্ধিক ও দার্শনিক মাত্র ৮ বছর বয়সে লিখেছেন প্রথম কবিতা। ১৮৮৭ সালে মাত্র ষোল বছর বয়সে ‘ভানুসিংহ’ ছদ্মনামে তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে সাহিত্যে প্রথম বাঙালি এবং এশিয় হিসেবে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। নোবেল ফাউন্ডেশন তার এই কাব্যগ্রন্থটিকে বর্ণনা করেছিলেন একটি ‘গভীরভাবে সংবেদনশীল, উজ্জ্বল ও সুন্দর কাব্যগ্রন্থ’ রূপে। তার লেখা ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানিটি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’ ভারতের জাতীয় সঙ্গীতও তার লেখা।
রবীন্দ্র কাব্যে মৃত্যু এসেছে বারবার, কারণ রবীন্দ্রনাথ ব্যক্তিজীবনে মৃত্যুকে বড় গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন। মাত্র ১৪ বছর নিজের মাকে হারান, তারপর একে একে হারিয়েছেন বহু আপনজনকে। স্ত্রী, নিজের প্রিয় মানুষ, এমনকি সন্তানদের মৃত্যুও তাঁকে দেখতে হয়েছে। তাই জীবদ্দশায় মৃত্যুকে তিনি জয় করেছেন বারবার। ‘মরণ রে, তুঁহু মম শ্যাম সমান’-কাব্য কবিতায় তিনি এভাবে মৃত্যু বন্দনা করেছেন। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২-এ শ্রাবণ (১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট) জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে প্রয়াণ ঘটে। তাঁর দেহান্তর হলেও তিনি আজও তাঁর সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে আমাদের মধ্যে রবি হয়ে আছেন।