ভারতের সাংবিধানিক ইতিহাসে পালন করা হয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিন, এমনই একটি দিন হল ভারতের জাতীয় পতাকা দিবস। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে জাতীয় পতাকার রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস। ২২ জুলাই হল এমন একটি ঐতিহাসিক দিন যখন দেশের সংবিধান প্রস্তুত হয় এবং দেশের জন্য জাতীয় পতাকা গ্রহণ করে গণপরিষদ। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে, ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই দেশের সরকারী পতাকা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল গণপরিষদ। তবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ কাজ ছিল না। স্বাধীনতার এক মাসেরও কম সময় বাকি ছিল, কিন্তু তখনও ভারতের নিজস্ব কোনও সরকারি পতাকা ছিল না। সেই সময় সরকারি অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হত ব্রিটিশ পতাকা। এমতাবস্থায় দেশের নিজস্ব সরকারি পতাকা নির্ধারণ করা খুবই জরুরি হয়ে পড়ে। ভারতের জাতীয় পতাকা নির্বাচন করা হয় ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট অর্থাৎ স্বাধীনতার মাত্র ২৩ দিন আগে।

ভারতের জাতীয় পতাকা একদিনে ঠিক হয়নি, এটি নির্ধারণ করতেও সময় লেগেছিল। কংগ্রেস ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতা সংগ্রামে একটি পতাকা ব্যবহার করতেন, তাই দেশের জাতীয় পতাকা নির্বাচন ও গ্রহণে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের পতাকা তৈরি করতে লেগেছিল অনেক বছর। হাজার বছরের ইতিহাসে ভারতের কোনও পতাকা ছিল না। ২৩০০ বছর আগে মৌর্য সাম্রাজ্যের মতো কিছু বড় সাম্রাজ্য অবশ্যই গঠিত হয়, যা প্রায় সমগ্র ভারতে রাজত্ব করেছিল। কিন্তু তারপরও দেশের নিজস্ব কোনও পতাকা তৈরি হয়নি। এরপর ১৭ শতকে মুঘলরা ভারতের একটি বড় অংশ দখল করে, কিন্তু তার পরেও ভারতের নিজস্ব পতাকার বিষয়ে কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। স্বাধীনতার আগে, ভারতে ৫৬২ টিরও বেশি রাজকীয় রাজ্য ছিল তবে পতাকা ছিল ভিন্ন ভিন্ন।

ভারতের জাতীয় পতাকার নকশা তৈরি করেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া। ১৯১৬ সাল থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত ৩০টি দেশের জাতীয় পতাকা নিয়ে গবেষণা করেন তিনি এবং ১৯২১ সালে কংগ্রেস সম্মেলনে এই ডিজাইন করা জাতীয় পতাকা উপস্থাপন করা হয়। এই পতাকার লাল রং হিন্দু এবং সবুজ রং মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করে, গান্ধীজির পরামর্শে সাদা রঙ এবং চরকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল এই পতাকায়। কংগ্রেস ১৯৩১ সালের আগস্ট মাসে তার বার্ষিক সম্মেলনে জাতীয় পতাকা হিসেবে তিরঙ্গাকে গ্রহণ করার জন্য একটি প্রস্তাব পাস করে। তবে ১৯৩১ সালের এই তেরঙাকে ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাইয়ে দেশের জাতীয় পতাকা হিসেবে গৃহীত করেনি গণপরিষদ। দেশের নতুন পতাকায় লালের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় জাফরান অর্থাৎ উপরে ছিল জাফরান রং, নীচে সবুজ রং এবং মাঝে ব্যবহার করা হয় সাদা রং।

দেশের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয় জাফরান রং, শান্তির প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয় সাদা রং এবং প্রকৃতির প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয় সবুজ রং। তিরঙ্গাতে চরকার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয় অশোক চক্র। গণপরিষদে পতাকার প্রস্তাব দেওয়ার সময় পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে পতাকার সাদা অংশে থাকবে ডোরা নীল স্পোক সহ একটি বৃত্ত। সম্রাট অশোকের বিজয়ের প্রতীক বলে মনে করা হয় চক্র, এই নীল রঙের চক্রকে ধর্ম চক্রও বলা হয়। তবে এই সব পরিবর্তনে খুশি ছিলেন না গান্ধীজি। অনেকে পতাকার মধ্যে থেকে চরকার ছবি পরিবর্তন করার জন্য দু:খিত হলেও অনেকেই পতাকায় চরকা রাখার পক্ষে ছিলেন না। সেই সময়ে চরকা হয়ে উঠেছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক। তবে গণপরিষদের অনেকেরই মত ছিল যে পতাকার কেন্দ্রীয় স্থানে থাকা উচিত বীরত্বের প্রতীক।