হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে, আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের ত্রয়োদশীতে পালন করা হয় জয়া পার্বতী উপবাস, এই দিনটি গৌরী ব্রত নামেও পরিচিত। দেবী পার্বতীর জয়া রূপের পুজো করা হয় এই দিনে। সৌভাগ্যের জন্য জয়া পার্বতীর পুজো ও উপবাস করা হয়। অবিবাহিত মেয়েরা বিয়ের বাধা দূর করার জন্য জয়া পার্বতীর উপবাস ও পুজো করে। মান্যতা রয়েছে যে দেবী পার্বতীর আশীর্বাদে জীবনের সমস্ত সমস্যা দূর হয়। ২০২৪ সালে আষাঢ় ত্রয়োদশী শুরু হবে ১৮ জুলাই, বৃহস্পতিবার, রাত ০৮:৪৪ মিনিটে এবং শেষ হবে ১৯ জুলাই, শুক্রবার সন্ধ্যা ০৭:৪১ মিনিটে। উদয় তিথি অনুসারে, ১৯ জুলাই পালন করা হবে জয়া পার্বতী ব্রত।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, জয়া পার্বতী উপবাসের রহস্য দেবী লক্ষ্মীকে বলেছিলেন শ্রী হরি। কোনও কোনও স্থানে ৫ দিন ধরে এবং কোনও কোনও স্থানে ১ দিনের জন্য রাখা হয় এই উপবাস। হিন্দু ধর্মীয় শাস্ত্র অনুসারে, এই দিনে ব্রহ্ম মুহুর্তে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে পরিষ্কার পোশাক পরে শিব ও পার্বতীর ধ্যান করে উপবাসের প্রতিজ্ঞা নিতে হয়। পুজোর মুহুর্ত অনুযায়ী প্রথমে শিব ও পার্বতীর মূর্তিতে গঙ্গা জল দিয়ে স্নান করাতে হয়। এরপর ভগবানের সামনে ধূপ ও প্রদীপ জ্বালিয়ে দেবী পার্বতীকে কুমকুম এবং মহাদেবকে সাদা চন্দনের তিলক লাগাতে হয়। লাল ফুলের মালা পরাতে হয় মা পার্বতীকে এবং সাদা ফুলের মালা পরাতে হয় মহাদেবকে। দেবী পার্বতীকে নিবেদন করতে হয় বিয়ের সামগ্রী। শেষে জয়া পার্বতী ব্রতের গল্প পড়ে বা শুনে নিয়ে দেবী পার্বতীর আরতি করে পুজো ও উপবাসের সময় করা ভুলের ক্ষমা প্রার্থনা করে নিতে হয়।

চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক জয়া পার্বতী ব্রতের গল্প। এক সময় কৌদিন্য নগরে বাস করতেন বামন ও সত্য নামের এক ধনী দম্পতি। ধনী হওয়া সত্ত্বেও সন্তান না হওয়ার কারণে দুঃখি থাকতেন তারা। একদিন অতিথি হিসেবে নারদ মুনি তাদের গৃহে এলে তারা নিজেদের সমস্যার কথা নারদ মুনিকে জানান। শহরের বাইরে দক্ষিণে বিল্ববৃক্ষের নিচে উপবিষ্ট শিব ও পার্বতী লিঙ্গের পুজো করার কথা বলেন নারদ মুনি। এরপর ব্রাহ্মণ দম্পতি ৫ বছর ধরে পুজো করেন শিব ও পার্বতীর। একদিন ফুল তোলার সময় সাপে কামড় দেয় ব্রাহ্মণকে। স্বামীকে খুঁজতে খুঁজতে ব্রাহ্মণের কাছে পৌঁছে প্রাণহীন স্বামীকে দেখে দেবী পার্বতীকে স্মরণ করেন স্ত্রী। তখন দেবী পার্বতী তার সামনে উপস্থিত হয়ে, ব্রাহ্মণের মুখে এক ফোঁটা অমৃত ঢেলে চলে যান। এরপরে দম্পতি কঠোর ধ্যান করলে আবার তাদের দেখা দেন মা পার্বতী। দেবীর কাছে সন্তান লাভের সমাধান চাইলে জয়া পার্বতীর উপবাস ও পুজো করার কথা বলেন তিনি। এবার ওই দম্পতি জয়া পার্বতী উপবাস করে নিয়ম মেনে পুজো করেন ভগবান শিব ও পার্বতীর। এই পুজোর পর একটি পুত্র সন্তান লাভের আশীর্বাদ পেয়েছিলেন ব্রাহ্মণ দম্পতি।