মহাত্মা গান্ধী এমন একজন ব্যক্তিত্ব যাকে শুধু ভারতেই নয় গোটা বিশ্বে পরিচিত। মহাত্মা গান্ধী ভালোবেসে বাপু বা জাতির পিতা বলা হয়। ২ অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন, যা জাতীয় ছুটির দিন। গোটা বিশ্ব যাঁকে মহাত্মা গান্ধী নামে চেনে, তাঁর আসল নাম বা পুরো নাম মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। ১৮৬৯ সালের ২ অক্টোবর গুজরাটের পোরবন্দর শহরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। গান্ধীজির পিতার নাম করমচাঁদ গান্ধী এবং মায়ের নাম পুতলিবাই গান্ধী। মাত্র ১৩ বছর বয়সে বিয়ে হয় গান্ধীজির। তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল কস্তুরবা গান্ধী। পোরবন্দর ও রাজকোটে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে ১৮৮৮ সালে, ১৯ বছর বয়সে গান্ধীজি আইন অধ্যয়নের জন্য ইংল্যান্ডে যান তিনি। সেখানে ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডন থেকে আইনের ডিগ্রি লাভ করেন গান্ধীজি।
২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকার পর ১৯১৫ সালে ভারতে ফিরে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেন গান্ধীজি। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে গান্ধীজির প্রধান আন্দোলন ছিল ১৯২০ সালের অসহযোগ আন্দোলন। এই আন্দোলনে ব্রিটিশ শাসন এবং এর আইনের বিরুদ্ধে অসহযোগের নীতি গ্রহণ করেছিলেন গান্ধীজি। এই সময় ব্রিটিশ পোশাক ও পণ্য বয়কট করে স্বদেশী পোশাক ও পণ্য গ্রহণের জন্য জোর দেয় ভারতীয়রা। অসহযোগ আন্দোলনের পর ১৯৩০ সালে হয় ডান্ডি মার্চ। প্রায় ৩৮৭ কিমি পায়ে হেঁটে ব্রিটিশ সরকারের লবণ আইনের প্রতিবাদে করা হয় এই মার্চ। এরপর ১৯৪২ সালে করা হয় ভারত ছাড়ো আন্দোলন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারত থেকে ব্রিটিশ সরকারের প্রত্যাহারের দাবিতে এই আন্দোলন করেছিলেন গান্ধীজি।
সত্য, অহিংসা, আত্মনির্ভরশীলতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের মতো নীতির উপর জীবনযাপন করেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। একজন আইনজীবী এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী ছাড়াও গান্ধীজি ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারকও। পরিচ্ছন্নতা অভিযান, অস্পৃশ্যতার অবসান, নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করেছেন গান্ধীজি। ১৯৪৫ সালের ৪ জুন সিঙ্গাপুরে একটি রেডিও বার্তা দেওয়ার সময় মহাত্মা গান্ধীকে জাতির পিতা বলে সম্বোধন করেছিলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু। তবে ঐতিহাসিকদের মতে, ১৯১৭ সালে চম্পারণ সত্যাগ্রহের সময় তাকে বাপু বলে সম্বোধন করেছিলেন একজন কৃষক। ভারত স্বাধীন হওয়ার মাত্র ৫ মাস পর ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি হত্যা করা হয় মহাত্মা গান্ধীকে। দিল্লিতে গান্ধীজিকে গুলি করে নাথুরাম গডসে নামে এক ব্যক্তি। শুধু ভারতে নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্য শোক নিয়ে এসেছিল গান্ধীজির মৃত্যু।