বিপ্লবী শহীদ ভগৎ সিং (File Photo)

ব্রিটিশ অত্যাচারের বিরুদ্ধে  স্বাধীনতার আন্দোলনে শত শত প্রাণ বলিদান দিয়েছে। তাঁদের অশ্রুজলে লেখা ইতিহাস ভবিষ্যৎ-র পথ দেখায়। রক্তে রাঙানো বিপ্লবী বন্ধুদের ভারতবর্ষ আজও স্মরণ করে। তাদের ফেরার অপেক্ষায় ভারতবাসী। বিশ্বাস রাখে একদিন উঠবে নতুন সূর্য, শোষণ, ভেদাভেদহীন সমাজ গড়ে উঠবে। আজও যুবসমাজ বিশ্বাস রাখে স্বর্গের চেয়েও প্রিয় জন্মভূমির মন্দিরে আগামী সকালের আজান হবে। সেদিন যাঁরা ভবিষ্যত প্রজন্মকে শোষণহীন সমাজ গড়ার পথ দেখিয়ে গেছিলেন এই বিপ্লবীদের মধ্যে একটি নাম ভগৎ সিং (Bhagat Singh)।

এক বিপ্লবী পরিবারে ১৯০৭-র ২৮ সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান অধ্যুষিত পাঞ্জাবের বাঙ্গা গ্রামের জাট পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ভগৎ সিং। গোটা পরিবারই ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। এমনই এক পরিবারে তাঁর জন্ম। বাড়িতেই পড়াশুনায় হাতেখড়ির পর ভর্তি হন একটি আর্য সামাজিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। মাত্র ১২ বছর বয়সে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে ৫০ মাইল দূরে অমৃতসর ছুটে গিয়েছিলেন তিনি। কুড়িয়ে এনেছিলেন জালিয়ানওয়ালাবাগ শহিদদের রক্তরঞ্জিত মাটি। এই মাটি তাঁর কাছে সোনার চেয়েও খাঁটি, বিদ্রোহের প্রতীক। আরও পড়ুন, আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২০ উপলক্ষে মহিলাদের আরও অগ্রসর হওয়ার বার্তা গুগল ডুডলে

গান্ধীজির ডাকা অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন কিশোর ভগৎ সিং। সহপাঠীরা মিলে নিজ এলাকাতে গড়ে তোলেন অসহযোগ আন্দোলন। বিলাতি কাপড় জোগাড় করে সহপাঠীদের সঙ্গে নিয়ে মহানন্দে তা পোড়াতে শুরু করেন। এখন থেকেই বিদ্রোহ চাগাড় দিয়ে ওঠে। স্বরাজের লড়াই তাঁর শিরা-উপশিরা, ধমনীতে বাহিত হয়। মাত্র ১৪ বছর বয়সে মার্ক্সবাদের প্রতি আকৃষ্ট হন।

ভারতের স্বাধীনতা আনতে সংগ্রাম চালিয়ে যান। নাটকে অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে যুবকমাজে পৌঁছে দিতেন ব্রিটিশরাজের আগুন ঝড়ানো রচনাবলী। তাদের অন্যায়, অত্যাচার তুলে ধরতেন। যুবসমাজে বিদ্রোহের উদ্দীপনা নিয়ে এলেন। বি.এ ক্লাসে ভর্তি হওয়ার পর পরিবার দিয়েছিল বিয়ের জন্য চাপ। কিন্তু দেশের স্বাধীনতার জন্য যে জীবন উৎসর্গ করেছে তাঁকে টলানো যে একেবারেই সহজ ছিল না। তাই একদিন গৃহত্যাগ করলেন। ছন্নছাড়া, বাঁধনহারা মানুষগুলোর সঙ্গে এক হয়ে যোগ দেন হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনে।

সেসময়টা ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের সবথেকে গুরুত্ত্বপূর্ণ সময়। বিপ্লবীদের রক্তচক্ষুতে ব্রিটিশদের কাবু করার জন্য বিপ্লবীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে আন্দোলন চালাচ্ছেন। তাঁর নেতৃত্বে পাঞ্জাবে গঠিত হয় নওজওয়ান ভারতসভা নামে একটি দল গঠন করা হয়। যুবসমাজের মধ্যে তৈরি করেন বিপ্লবী চেতনা। আদর্শ লক্ষ্য হয় সমাজতন্ত্র। তৈরি করতে চেয়েছিলেন শোষণহীন সমাজ। ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত বোমা নিক্ষেপ করেছিলেন 'ইনকিলাব জিন্দাবাদ' ধ্বনি তোলেন। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন তাঁরা। পুলিশ ইন্সপেক্টর খুনের অভিযোগে বন্দি হন। বন্দীদশাতেও ভারত ও ব্রিটিশ বন্দিদের সঙ্গে সমান আচরণের জন্য লড়াই করেন। ১৯৩১ মার্চ ২৩ মার্চ ভগৎ সিংসহ আরও দুই বিপ্লবীকে ফাঁসিকাঠে ঝোলানো হয়। তারপর থেকে এইদিনটি ভারতীয়দের কাছে এক ইতিহাস হয়ে থেকে যায়। আজও তাঁর সম্মানে দেওয়া হয় শ্রদ্ধাঞ্জলি।