
দিল্লি, ১৯ মে: পাকিস্তানের (Pakistan) হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে জ্যোতি মালহোত্রাকে (Jyoti Malhotra)। ভারতের (India) সীমান্ত পেরিয়ে বারবার পাকিস্তানের প্রবেশ এবং সেখানকার হাই প্রোফাইল মানুষের সঙ্গে দেখা করে, ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রা যেভাবে দেশের হয়ে 'গদ্দারি' শুরু করে, সে বিষয়ে খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ। গত ১৬ মে জ্যোতি মালহোত্রার গ্রেফতারির পর তার ইউটিউব চ্যানেল থেকে চেনাজানা মানুষের পরিসর, সবকিছুপ পুলিশ খতিয়ে দেখছে।
কোভিড ১৯ যখন শুরু হয়, সেই সময় লকডাউনের প্রভাবে বহু তরুণ, তরুণী ভ্লগিং শুরু করেন। সেই দৌঁড়ে জ্যোতি মালহোত্রার নামও যুক্ত হয়। 'ট্রাভেল উইথ জো' নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল শুরু করে জ্যোতি। যেখানে ৩ লক্ষের বেশি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে। জ্যোতি মালহোত্রা ওই ট্রাভেল ভ্লগের জেরেই একাধিকবার পাকিস্তানে যায় এবং সেখানকার পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং ভারতের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তাদের হাতে তুলে দিতে শুরু ,করে বলে খবর।
জ্যোতি মালহোত্রার পাকিস্তানি যোগ
বছর ৩৩-এর জ্যোতি মালহোত্রা এখনও পর্যন্ত ৮টি দেশে ঘুরেছে। যার মধ্যে পাকিস্তান এবং চিন (China) রয়েছে। এসেবর মাঝেই পাকিস্তানি অফিসাররা জ্যোতিকে নিজেদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ গুপ্তচর হিসেবে গড়ে তোল বলে খবর।
পুলিশের কথায়, জ্যোতি পাকিস্তানের সেনা বা গুপ্তর বিভাগের কোনও আধিকারিকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করত না। একাধিক পাক অফিসিয়ালের হাতে তথ্য তুলে দিত। এরপর সেই তথ্য চলে যেত আইএসআইয়ের (Pakistani ISI) কাছে। এসবের পাশাপাশি একাধিক আরও ইউটিউবারের সঙ্গে জ্যোতির পরিচয় ছিল। তাঁদের সঙ্গে জ্যোতির কী ধরনের তথ্য আদান প্রদান হত, পুলিশ তাও খতিয়ে দেখছে।
পাকিস্তানি অফিসারের সঙ্গে যোগ
জ্যোতি মালহোত্রার সঙ্গে পাক অফিসার দানিশের যোগ ছিল। ভারত যখন অপারেশন সিদূঁর শুরু করে, সেই সময় দিল্লির পাকিস্তানি হাই কমিশনের অফিসের বিভিন্ন আধিকারিকের সঙ্গে যেমন জ্যোতির যোগ ছিল, তেমনি দানিশের সঙ্গে তার ছবিও প্রকাশ্যে আসে। যা দেখে পুলিশ এবং গোয়েন্দারা কার্যত চমকে উঠেছেন।
জ্যোতির একাধিকবার পাকিস্তান যাওয়ার বিষয়ে পুলিশ নজর দিতে শুরু করেছে। জ্যোতির এই পরপর পাকিস্তানে যাওয়া এবং কোন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তার হাত থেকে পাচার হত, সেই সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পাকিস্তান কোনও বন্ধু দেশের পর্যায়ে পড়ে না ভারতের। তাই পাকিস্তানে বারবার যাওয়া এবং সেখানকার আধিকারিকদের সঙ্গে জ্যোতির যোগ নিয়ে শুরু হয়েছে তদন্ত।
জ্যোতির পাক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক
জেরায় জ্যোতি স্বীকার করেছে, ২০২৩ সালে পাক অফিসার দানিশ প্রথম তার সঙ্গে বৈঠক করে। ২০২৩ এই জ্যোতি পাকিস্তানে গিয়ে থাকার জন্য ১০ দিনের ভিসা পায়। দানিশ ওই সময় তার সঙ্গে আলি আওহান নামে একজনের পরিচয় করিয়ে দেয়। আলিই জ্যোতির পাকিস্তানে থাকার সমস্ত ব্যবস্থা করে দেয় বলে পুলিশকে জানিয়েছে এই গুপ্তচর ইউটিউবার। ওই সময় পাকিস্তানে গিয়ে একাধিক হাই প্রোফাইল পার্টিতে অংশ নেয় জ্যোতি।
ওই সময়েই শাকির এবং রানা শেহবাজ় নামে পাক সেনার দুই আধিকারিকের সঙ্গে জ্যোতির পরিচয় করিয়ে দেয় আলি আওহান। শাকিরের মোবাইল নম্বর তাকে দেওয়া হয়। জাট রনধাওয়া নামে তার ফোনে শাকিরের নম্বর সেঊভ করে দেওয়া হয় বলে জেরায় স্বীকার করে জ্যোতি। এরপর ভারতে ফিরে এসে, হোয়াটস অ্যাপ, টেলিগ্রামের মত অ্যাপ ব্যবহার করে পাকিস্তানি আধিকারিকের সঙ্গে জ্যোতি যোগাযোগ রাখত বলে জেরায় স্বীকার করেছে।
এই কর্মকাণ্ডে জ্যোতি একা জড়িত নয়
জ্যোতির মত গদ্দারের সঙ্গে আরও অনেকের যোগ রয়েছে। এমনই মনে করছেন গোয়েন্দারা। ইতিমধ্যেই পুরীর প্রিয়াঙ্কা সেনাপতি নামে আরও এক ইউটিউবারের খোঁজ পুলিশ পেয়েছে। প্রিয়াঙ্কার বিষয়ে পুলিশ জোরদার খোঁজ শুরু করেছে। প্রিয়াঙ্কার পাশাপাশি আর কে কে জ্যোতির যোগাযোগের তালিকায় রয়েছে, সে বিষয়ে খোঁজ শুরু করা হয়েছে পুলিশ এবং গোয়েন্দাদের তরফে একযোগে।
পাকিস্তানের হাই প্রোফাইল পার্টিতে জ্যোতি মালহোত্রা, পাক অফিসারের সঙ্গে সখ্যতা, 'গদ্দার' ইউটিউবার ছিল পাকিস্তানের 'অ্যাসেট', চমকে উঠবেন