TMC Martyr's Day Rally. (File Photo)

পার্থ প্রতিম চন্দ্র: TMC 21 July Martyr's Day Rally: আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনের আগে এবারের তৃণমূলের ২১ জুলাই শহীদ দিবসের দিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল। রাজ্যে চতুর্থ তৃণমূল সরকার প্রতিষ্ঠার দিকে লক্ষ্য রেখে সোমবার কলকাতায় শহীদ দিবসের মঞ্চের কাছে হাজির হবেন লক্ষ লক্ষ দলীয় নেতা-কর্মী, সমর্থকরা। একুশে জুলাইয়ের শহীদ দিবসের মঞ্চ থেকে ২০২৬ বিধানসভার সুর বেঁধে দিতে চলেছেন দলের সুপ্রিম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার একুশের মঞ্চে ফোকাসে বাঙালি আবেগ আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই। নিশ্চিতভাবেই লক্ষ লক্ষ তৃণমূল সমর্থক, মমতা ভক্তর উপস্থিতিতে সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে শহর কলকাতা অবরুদ্ধ হতে চলেছে।

নজরে ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচন

১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই যুব কংগ্রেসের আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ১৩ জন কর্মী নিহত হন। সেই ঘটনার স্মরণে তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিবছর এই দিনটিকে 'শহীদ দিবস' হিসেবে পালন করে আসছেন। তবে গত কয়েক বছর ধরে ২১ জুলাইয়ে মমতার মূল প্রতিপক্ষ বদলে গিয়েছে। এখন আর বামফ্রন্ট বা সিপিএম নয়, দিদির লক্ষ্য রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। আর জ্য়োতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বা সুভাষ চক্রবর্তী, বা সুজন চক্রবর্তী কিংবা মহম্মদ সেলিম-রা নন, মমতার প্রবল প্রতিপক্ষ এখন শমিক ভট্টাচার্য, সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী, অগ্নিমিত্রা পাল-রা। বিভিন্ন ইস্যুতে বিজেপি এখন মমতাকে চেপে ধরার চেষ্টা করেন। তবে ২০২৪ লোকসভায় দারুণ ফল করে অনেকটা নিশ্চিন্তে মমতা। আরজি কর আন্দোলনে বড় চাপে পড়ে গেলেও, পরে বিভিন্ন ইস্যুতে অক্সিজেন পেয়ে যায় মমতার সরকার। রাজ্যে বিজেপির ছন্নছাড়া অবস্থা, বামেদের ঝিমিয়ে পড়া আন্দোলন, কংগ্রেস ঘর গোছাতে না পারা, ও একের পর এক উপনির্বাচনে জয়ের ফলে ২০২৬ বিধানসভা ভোটের আগে স্বস্তিতে তৃণমূল।

কোন কোন বিষয় তৃণমূলকে চিন্তায় রাখবে

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২১-র থেকে ২০২৬ বিধানসভা ভোট নিয়ে তৃণমূলের স্বস্তিতে থাকার বেশ কিছু কারণ থাকছে। তবে শহরাঞ্চলের ভোটের প্রবণতা, গোষ্ঠদ্বন্দ্ব, দলের নিচুস্তরের কর্মীদের একাংশের মধ্যে ঔদ্ধত্য, শৃঙ্খলাজনিত সমস্যাগুলো দিদিকে চিন্তায় রাখবে। বিজেপি পিছিয়ে থাকলেও, ২০১৯ লোকসভার মত তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে আত্মতুষ্টি এসে গেলে খেলা ঘোরার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার ২০২১ বিধানসভার মত সংগঠনকে গুছিয়ে নিয়ে মমতা-অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জুটি ঝাঁপালে বিজেপি গতবারের চেয়েও কম সংখ্যক আসন পেতে পারে। অন্তত এমনটাই বলছেন ভোট বিশেষজ্ঞরা। তাই অভিজ্ঞ মমতা এখন থেকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ভোটের ময়দানে ঝাঁপাতে চাইছেন। মমতা জানেন, সংগঠন গোছাতে না পারলে, দলীয় কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ না করতে পারলে হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচও হেরে বসতে হতে পারে। ২০০১-র বিধানসভা, ২০১৯-র লোকসভা ভোটের অভিজ্ঞতা থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো এই কথাটা ভালভাবেই বোঝেন। সেটা বোঝেন বলেই এবারের ২১ জুলাই শহীদ দিবসের মঞ্চকে দলীয় নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ ও শৃঙ্খলাপূর্ণ লড়াইয়ের বার্তা দিতে চলেছেন দিদি।

এক নজরে দেখে নেওয়া যাক যে আধডজন কারণে তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের সোমবার শহীদ দিবসের মঞ্চে সবার নজর

১) দিলীপ ঘোষ বা বড় কোনও বিজেপি নেতা তৃণমূলে যোগ দেন কি না

বিজেপিতে এখন পুরোপুরি কোণঠাসা দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। দীঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে দলে চাপে পড়ে গিয়েছেন দিলীপ। এখন আর তিনি খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাতেও আমন্ত্রণ পান না। এমন সময় জোর জল্পনা মেদিনীপুরের প্রাক্তন সাংসদ তথা খড়গপুরের প্রাক্তন বিধায়ক দিদির হাত ধরতে পারেন। দিলীপ এই বিষয় নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তৃণমূল নেতারাও শুধু হাসিমুখে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের একটা বড় অংশ ব্রেকিংয়ের অপেক্ষায় তাল ঠুকছে। সংবাদমাধ্যমের একাংশ অপেক্ষায় দিলীপ ঘোষ ২১ জুলাই তৃণমূলের মঞ্চে উঠে দিদির পাশে দাঁড়াচ্ছেন। যদিও এসব এখনও পুরোপুরি জল্পনা। দিলীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠরা এখনও এই জল্পনাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন। তৃণমূলের একাংশও মনে করছেন, এটা নেহাতই সংবাদমাধ্যমের জল্পনা। তবে দিলীপ ঘোষ না হলেও, বিজেপির বিধায়ক বা সাংসদদের মধ্যে কেউ দলবদলে করে ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে তৃণমূলের পতাকা হাতে তোলেন কি না তেমন জল্পনাও রয়েছে। গত দু বছরে একের পর এক বিজেপির বিধায়করা তৃণমূলে এসেছেন। বাঁকুড়ার কোতুলপুরের হরকালী প্রতিহার থেকে রায়গঞ্জের কৃষ্ণ কল্য়াণী, বাগদার বিশ্বজিৎ দাস, রানাঘাটের মুকুট মণি অধিকারী, কালিয়াগঞ্জের সৌমেন রায় সহ ২০২১ নির্বাচনের পর থেকে বিজেপির প্রায় এক ডজন বিধায়ক তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন।

২) আগামী বছর বিধানসভা ভোট নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের কী বার্তা দেন তৃণমূল সুপ্রিমো

আর ক মাস পরেই ভোট। বিজেপি এবার নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ সহ কেন্দ্রের হেভিওয়েটদের প্রচারে আনবে। দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মডেলে বাংলায় সর্বশক্তি নিয়ে গেরুয়া শিবির ঝাঁপাবে বাংলায় মমতাকে হারাতে। এমন অবস্থায় দলীয় কর্মীদের এক হয়ে লড়াইয়ের বার্তা দিতে চলেছেন মমতা। এমন কথাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দলীয় কর্মীদের মধ্যে আত্মতুষ্টি যেন না আসে, কোনওরকম প্ররোচনায় পা না দেওয়া, শৃঙ্খলাভঙ্গ সহ্য করা হবে না বলেও বার্তা দিতে পারেন মমতা।

৩) নির্বাচনী প্রচার কর্মসূচি ও প্রার্থী ঘোষণা করা হয় কি না

আগামী কয়েকটা মাস নেতা-কর্মীদের সামনে বেশ কয়েকটি দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেন মমতা। দলীয় নেতাদের মাটিতে নেমে লড়াইয়ের কথা বলতে পারেন মমতা। ২০২৬ বিধানসভার সুর বেঁধে দিতে ২১-র মঞ্চে কিছু কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবেন কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? সেইদিকে তাকিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীরা।

৪) বিজেপিকে রুখতে কী দাওয়াই দেন মমতা

বিজেপির বিরুদ্ধে বারবার সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অভিযোগ করেছেন মমতা। সোমবার ২১-এর মঞ্চ থেকে নরেন্দ্র মোদীকে কী জবাব দেন, পদ্মশিবিরকে রুখতে তৃণমূল সুপ্রিমো কী দাওয়াই দেন সেই দিকে তাকিয়ে দলীয় কর্মী-সমর্থকরা।

৫) বাঙালিদের ওপর নির্যাতন ইস্যু, ভোটার তালিকা নিয়ে কী বার্তা দেন

দিল্লি, গুজরাট, অসম দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাদেশীর নাম করে বাঙালিদের ওপর নির্যাতন করছে বিজেপি। এমন অভিযোগ গত কয়েকদিন বারবার করেছেন। পথেও নেমেছেন মমতা। বলাই বাহুল্য, এবারের ২১-র মঞ্চ মমতার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হবে বাঙালি আবেগ। সঙ্গে বিহারে ভোটর তালিকা নিয়ে চলা বিতর্ক নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে মমতা কী বলেন সেটাও দেখার।

৬) টলিউডের কোনও সেলেবরা মমতার পাশে থাকেন

গত কয়েক বছর ২১ জুলাই তৃণমূলের মঞ্চ মানেই চলচ্চিত্র তারকাদের ভিড়। টলিউডের ছোট পর্দা, বড় পর্দার তারকারা দিদির সঙ্গে তৃণমূলের শহীদ দিবসের মঞ্চে থাকেন। এবার কোন নতুন মুখকে ২১-র মঞ্চে দিদির পাশে দেখা যায় কি না সেটাই দেখার। টলিউড তারকারা দিদির পাশে দাঁড়িয়ে সাংসদ-বিধায়ক হচ্ছেন। গত বছর লোকসভায় মমতা প্রার্থী করেছিলেন অভিনেত্রী রচনা বন্দোপাধ্যায় (হুগলি), জুন মালিয়া (মেদিনীপুর), সায়নী ঘোষ (যাদবপুর)-দের। সবাই ভোটে জিতে প্রথমবার সাংসদ হয়েছেন। সঙ্গে শতাব্দী রায় (বীরভূম) চারবার ভোটে জিতে দীর্ঘদিন সাংসদ রয়েছেন। আগে মমতা সাংসদ করেছিলেন মিমি, নুসরত, সন্ধ্যা রায়-দের মত অভিনেত্রীদের। টলিউড তারকা দেব ২০১৪ সাল থেকে ঘাটালে তৃণমূলের সাংসদ রয়েছেন। চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, সোহম, কাঞ্চন মল্লিক থেকে সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়-দের মত তারকারাও বিধায়ক রয়েছেন।