বিজনোর, ২৪ ডিসেম্বর: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় (anti-CAA protests) জ্বলছে গোটা দেশ। বিনা কারণে নিরস্ত্র জনতার উপরে লাঠিচার্জ ও গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। অসম থেকে ত্রিপুরা, দিল্লি থেকে উত্তরপ্রদেশে সবা জায়গাতেই এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের গুলিতে এখনও পর্যন্ত ১৬জন বিক্ষুব্ধের প্রাণ গিয়েছে। সবথেকে দুঃখজনক ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার উত্তরপ্রদেশের বিজনোর (Bijnor) এলাকায়। সেখানে জুম্মার নামাজ সেরে যখন সবাই মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসছেন সেই সময় ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছে পুলিশের একটি বাহিনী। এক যুবকের সঙ্গে পুলিশের কথা কাটাকাটি শুরু হতেই পরিস্থিতি চরমে পৌঁছায়। উত্তেজনা থামাতে গুলি চালাতে শুরু করে পুলিশ। সেই গুলিতেই দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
মৃতরা কেউই বিক্ষোভকারী ছিলেন না। মৃতদের একজনের নাম আনাস তিনি মসজিদে নামাজ পড়তেও যাননি। কর্মক্ষেত্র থেকে দুপুরে বাড়ি ফিরেছিলেন মধ্যাহ্ন ভোজন সারতে। স্ত্রী সাত মাসের শিশুপুত্রের জন্য দুধ আনতে বলেন তাঁকে। ঘরে না ঢুকেই অদূরে কাকার বাড়িতে দুধ আনতে যাচ্ছিলেন তিনি, সেই সময় পুলিশ আনাসকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু। গড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা ওই যুবককে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ছেলের মৃত্যুতে দিশেহারা বাবা আরশাদ হুসেন যখন দাফনের বন্দোবস্তের পাশাপাশি জানাজার নামাজে আয়োজন করছেন তখন পুলিশ তাতে বাধা দেয়। সাফ জানায় ওই এলাকায় দাফনের কাজ করা যাবে না। দেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর অনেক মিনতি করে ১৫ কিলোমিটার দূরে নানির বাড়িতে দাফনের পরামর্শ দিলে পুলিশ মেনে নেয়। তবে ধর্মীয় নিয়ম মেনে দাফনের সময় দিতে প্রথমে পুলিশ রাজি ছিল না পরে রাজি হয়ে যায়। এই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে আরশাদ হুসেন বলেন, তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। পুলিশের অপরাধীর তালিকাতেও আনাসের নাম ছিল না। শিশুপুত্রের দুধ আনতে যেতেই পুলিশ তাঁকে মেরে ফেলল। আরও পড়ুন-Onion Prices: রাজধানীতে পেঁয়াজ ১৪০ টাকা কেজি, দামে রাশ টানতে ৭৯০ টন পেঁয়াজ এল দেশে
আনাসের সঙ্গে গুলি লাগে সুলেমান নামে বছর ২০-র এক যুবকের। মৃত যুবকের দাদা জানিয়েছেন, বিক্ষোভে অংশ নেয়নি সুলেমান। সে বেশ কিছুদিন ধরে জ্বরে ভুগছিল। শুক্রবার সামান্য সুস্থ বোধ করায় বাড়ির থেকে বেশ খানিকটা দূরে এক মসজিদে নামাজ পড়তে যায়। এমনিতে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার্থী সুলেমানের পারিপার্শ্বিক বিষয়ে কোনও আগ্রহ নেই। সে যখন নামাজ পড়ে মসজিদের বাইরে বেরয় তখন পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে গুলি করে মারে। গুরুতর আহত সুলেমানকে বন্ধুরা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধিন অবস্থাতেই তার মৃত্যু হয়।