IUML and Congress Photo Credit: PTI, Wikimedia commons

সম্প্রতি ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবে অংশ নিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। সেখানে তাঁকে প্রশ্ন করা হয় মুসলিম লিগ সম্পর্কে। রাহুল বলেন, 'মুসলিম লিগ একটি সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ দল এবং 'মুসলিম লিগের কার্যকলাপ ধর্মনিরপেক্ষ'।রাহুলের এই মন্তব্য সামনে আসতেই আসরে নেমে পড়েছে বিজেপি। পদ্ম শিবিরের আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য বলছেন,”জিন্নাহর মুসলিম লিগ, যেটা কিনা ভারতের বিভাজনের জন্য দায়ী, ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের জন্য দায়ী, রাহুল গান্ধীর মতে, তারা ধর্মনিরপেক্ষ দল!

জিন্নাহর মুসলিগ লিগের সঙ্গে কেরলের ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ(IUML)কে জুড়ে দিয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রচারে নামার চেষ্টা শুরু করেছিলেন মালব্য। যদিও সঙ্গে সঙ্গে পালটা আসে কংগ্রেসের তরফে।কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা পালটা অমিত মালব্যকে বিঁধে মনে করিয়ে দেন, জিন্নাহর মুসলিম লিগ (All-India Muslim League) আর কেরলের মুসলিম লিগ (Indian Union Muslim League)এক নয়। তিনি পালটা টুইটে বলেন, ‘ভাই তুমি অশিক্ষিত নাকি। জিন্নাহর মুসলিম লিগ হল, সেই দল যাদের সঙ্গে তোমাদের পূর্বপুরুষেরা জোট করেছিল। আর কেরলে কংগ্রেস জোট করেছে অন্য এক মুসলিম লিগের সঙ্গে।” তবে বিজেপি কোনওভাবেই মানতে নারাজ যে ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ (Indian Union Muslim League) ধর্মনিরপেক্ষ।

জেনে নেব মুসলিম লিগের ইতিহাস- 

১৯০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাঞ্জাবে ‘মুসলিম লীগ’ নামে একটি রাজনৈতিক সংস্থা গঠিত হয়। এদিকে বঙ্গভঙ্গের প্রতিক্রিয়ায় সমগ্র ভারত জুড়ে হিন্দু জনগোষ্ঠীর প্রতিবাদ এবং মুসলিম বিদ্বেষের ঝড় বয়ে যাওয়ায় স্যার সলিমুল্লাহকে দারুণভাবে ভাবিয়ে তোলে। তিনি সর্বভারতীয় পর্যায়ে মুসলিম ঐক্যের কথা ভাবতে শুরু করেন। ১৯০৬ সালের নভেম্বরে সলিমুল্লাহ সমগ্র ভারতের বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দের নিকট পত্রালাপে নিজের অভিপ্রায় তুলে ধরলেন এবং সর্বভারতীয় মুসলিম সংঘের প্রস্তাব রাখলেন। ১৯০৬ সালের ২৮-৩০শে ডিসেম্বর সর্বভারতীয় শিক্ষা সম্মেলন আহুত হল। ঢাকার শাহবাগে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে সমগ্র ভারতের প্রায় ৮ হাজার প্রতিনিধি যোগ দিলেন। নবাব সলিমুল্লাহ ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম কনফেডারেন্সী’ অর্থাৎ সর্বভারতীয় মুসলিম সংঘ গঠনের প্রস্তাব দেন; হাকিম আজমল খান, জাফর আলী এবং আরো কিছু প্রতিনিধি প্রস্তাবটিকে সমর্থন করেন। কিছু প্রতিনিধির আপত্তির প্রেক্ষিতে কনফেডারেন্সী শব্দটি পরিত্যাগ করে লীগ শব্দটিকে গ্রহণ করা হয়। অবশেষে সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ গঠিত হয়। মহম্মদ আলি জিন্না ১৯১৩ সালে মুসলিম লিগের সদস্যপদ গ্রহণ করেন এবং ১৯২০ সালে কংগ্রেস ত্যাগ করে পাকাপাকি ভাবে মুসলিম লীগে যোগদান করেন।

ভারতীয় ইউনিয়ন মুসলিম লীগ-এর ইতিহাস (Indian Union Muslim League)

ভারত বিভাগের পর , সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের ভারতীয় অংশের প্রথম কাউন্সিল ১০ মার্চ ১৯৪৮ সালের দক্ষিণ ভারতের মাদ্রাজ (বর্তমানে চেন্নাই ) শহরে অনুষ্ঠিত হয়। সেই সময় অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগ নামটি বদলে দলটি 'ভারতীয় ইউনিয়ন মুসলিম লীগ' নামে নিজেদের নামকরণ করে এবং ১ সেপ্টেম্বর ১৯৫১ সালে একটি নতুন সংবিধান গ্রহণ করে.

ফলে বলা যেতে পারে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগ ও ভারতীয় ইউনিয়ন মুসলিম লীগ দুটি আলাদা দল। ভারতীয় ইউনিয়ন মুসলিম লীগ ভারতবর্ষের সংবিধানকে মান্যতা দিয়ে বহুবার নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছে। এমনকি রাজ্যসভার সদস্য হিসাবেও তাদের দেখা গেছে।