পানাজি, ২৪ জানুয়ারি: ভোটের বাদ্য়ি বেজে গিয়েছে গোয়ায় `(Goa)। ভারতের পর্যটনের রাজধানী হিসেবে পরিচিত গোয়ায় এবার চতুর্মুখি লড়াইয়ে জমজমাট রাজনীতি। এবার বিজেপি-কংগ্রেসের মধ্যে সরাসরি লড়াইয়ে ঢুকে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি। তৃণমূল এই প্রথম গোয়ার ভোটে লড়ছে। গত বিধানসভায় লড়লেও আপ কোনও আসন পায়নি। যদিও এবার অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল বেশ গুছিয়ে লড়ছে।
যদিও আপ-তৃণমূল নয়, গোয়ায় মূল লড়াইটা বিজেপি-কংগ্রেসের মধ্যেই। গত দুটি বিধানসভায় জিতে বিজেপি গোয়ায় ক্ষমতায় আছে। যদিও ২০১৭ বিধানসভায় বিজেপি মাত্র ১৩টি আসনে জিতে সরকার গড়ার পিছনে ছিল অন্য রাজনীতি। এবার কী হবে?
২০১৭ গোয়া বিধানসভার ফলাফল
মোট আসন: ৪০
কংগ্রেস: ১৭
বিজেপি: ১৩
মহারাষ্ট্র গোমন্তক পার্টি: ৩
গোয়া ফরোয়ার্ড পার্টি: ৩
এনসিপি: ১
নির্দল: ৩
তারপর কী হয়
কোন দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তবে কংগ্রেস একক বৃহত্তম দল হয়। কংগ্রেসকে সরকার গড়তে হলে ৪জন বিধায়কের প্রয়োজন ছিল। শরদ পাওয়ারের দল এনসিপি-র সমর্থন থাকায় গোয়ার মসনদ পেতে কংগ্রেসের দরকার ছিল আর মাত্র ৩জন বিধায়েকর সমর্থন। কিন্তু মহারাষ্ট্র গোমন্তক পার্টি, গোয়া ফরোয়ার্ড পার্টির সমর্থন আদায় করে সরকার গড়ার দোরগড়ায় পৌঁছে যায়। তারপর দলবদলের খেলায় কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন বিধায়কের সমর্থন পেয়ে গোয়ায় সরকার গড়েছিল মাত্র ১৩টি আসনে জেতা বিজেপি।
গোয়ার রাজনীতির ছক
মাত্র ৪০টি বিধানসভা আসনের ছোট্ট গোয়ায় এতদিন মূলত সরাসরি দুটো দলের লড়াইয়ে সীমাবদ্ধ ছিল। মুখোমুখি লড়াই কংগ্রেস-বিজেপির। ১৯৯১ বিধানসভা ভোট থেকে গোয়ার ক্ষমতা দখল করেছে হয় কংগ্রেস, না হয় বিজেপি। তার আগে গোয়ায় দাপট ছিল মহারাষ্ট্র গোমন্তক পার্টির। ২০১২ থেকে গোয়ায় বিজেপি-র সরকার আছে। গোয়ার জনপ্রিয় নেতা মনোহর পারিক্করের মৃত্যুর পর প্রমোদ সাওয়ান্তকে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসায় বিজেপি।
গোয়ার রাজনীতির অঙ্ক
গোয়াকে দলবদলের রাজনীতির রাজধানী বলা যায়। রাজনীতির অন্দরে কানপাতালে শোনা যায় গোয়ায় অর্থবলই ভোটে জয়-পরাজয়ে শেষ কথা বলে। গত পাঁচ বছরে গোয়ার ৬০ শতাংশ বিধায়ক দলবদল করছেন। পরিসংখ্যানটা দেখলেই বোঝা যায়, গোয়ায় শুধু জনতার রায় পেলেও হবে না, জনতার রায় আনা ব্যক্তি খুশি রাখার রাজনীতিও জানতে হয়।
এবার কে এগিয়ে
বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া রয়েছে। মনোহর পারিক্করের মৃত্যুর পর বিজেপির রাজ্য সংগঠনে শূন্যস্থানটা পূরণ হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্তকে ঘিরে দলের অন্দরেই প্রশ্ন আছে। তবে তার মানে এই নয় যে বিজেপি পিছিয়ে থেকে নামছে। বরং ভোটের আগে কংগ্রেসের ছন্নছাড়া দশা, বিরোধীদের একসঙ্গে আসতে না পারাটা বিজেপিকে খুশিতেই রেখেছে। তবে ভোট যত এগিয়েছে কংগ্রেস নিজেদের ঘর গুছিয়েছে। তৃণমূল, আম আদমি পার্টি-র উত্থান কংগ্রেসকে চিন্তায় রেখেছে। বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় বিজেপিকেই এগিয়ে রাখা হয়েছে। তবে লড়াই ৫০:৫০
জোটাজুটি
বিজেপি একাই ৪০টি আসনে প্রার্থী দিচ্ছে। কংগ্রেস লড়ছে গোয়া ফরোয়ার্ড পার্টির সঙ্গে জোট বেঁধে। এনসিপি ও শিবসেনা জোট গড়েছে। তৃণমূলের সঙ্গে জোট গড়তে পারে মহারাষ্ট্র গোমন্তক পার্টি। আম আদমি পার্টি একাই সব আসনে লড়বে। গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মনবোহর পারিক্করের ছেলে উতপল পারিক্করকে বিজেপি টিকিট না দেওয়ায়, তিনি নির্দল হয়ে লড়বেন।
তৃণমূল না আপ কারা এগিয়ে
আম আদমি পার্টি গতবার গোয়া বিধানসভা ভোটে লড়েছিল। কোনও আসন না পেলেও অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল ৬ শতাংশের মত ভোট পেয়েছিল। তবে গত পাঁচ বছরে গোয়ায় মাটি কামড়ে পড়ে থেকে নিজেদের অবস্তান মজবুত করেছে আপ। এবার কেজরির দল অনেকটা গুছিয়ে লড়াইয়ে নেমেছে। মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নামও ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আপ-এর শক্তি মূলত পশ্চিম গোয়ায়। তিন থেকে পাঁচটি আসনে আম আদমি পার্টি জয়ের মত জায়গায় আছে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে, গোয়ার রাজনীতিতে তৃণমূল এইসবে পা দিয়েছে। গোয়ায় এই প্রথম দিদির দল ভোটে লড়বে। শুরুতে বেশ কয়েকজন বড় নেতা-মন্ত্রীকে দলে টেনে গোয়ায় বেশ ঝড় তুলেছিল তৃণমূল। তবে ভোট যত এগিয়েছে তৃণমূলের ঝড়ের বেগ তত দ্রুত কমেছে। কিছু আসনে প্রার্থীর ব্যক্তি ক্যারিশ্মায় জয়ের আশা থাকলে, গোয়ায় তৃণমূল চমকপ্রদ কিছু করে পেলবে তেমন আশা করা ভুল হবে।
ভোট কবে: ১৪ ফেব্রুয়ারি। এক দফাতেই হবে ভোটগ্রহণ।
টুকিটাকি: গোয়ায় মোট ভোটার ১১ লক্ষ ৫৬ হাজার ৭৬২ জন। মোট পোলিং স্টেশন ১,৭২২টি।