Space Debris. (Photo Credits: X)

Starlink Satellite: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রকাশ্য বিবাদ করে কোণঠাসা টেসলা সিইও ইলন মাস্ক (Elon Musk)। ট্রাম্পের হুমকিতে চুপ হয়ে যাওয়া মাস্ক শুধু পৃথিবীর মাটিতেই নয়, মহাকাশেও মহাবিপদে। গোটা দুনিয়া ইন্টারনেট ব্যবসায় একচ্ছত্র রাজ করতে গত কয়েক বছরে মহাকাশে রেকর্ড সংখ্যক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্স (SpaceX)। মহাকাশে প্রদক্ষিণ করা ৭০ শতাংশ স্যাটেলাইটই এখন মাস্কের কোম্পানির। এখনও পর্যন্ত স্টারলিঙ্ক-এর প্রায় ৭ হাজারটি স্যাটেলাইট কক্ষপথে রয়েছে। আরও হাজার হাজার পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু মহাকাশে একচেটিয়া রাজ করা মাস্কের ঘোর বিপদ ডেকে এনেছে সৌরঝড় ও সৌরচক্র। সৌর ঝড়, ফ্লেয়ার এবং করোনাল বিস্ফোরণের কারণে পৃথিবীর মাটি থেকে পাঠানো স্য়াটেলাইট বা উপগ্রহগুলি ব্যাুক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

 চলতি বছর জানুয়ারিতেই ১২০টির বেশি স্যাটেলাইট একসঙ্গে ধ্বংস হয়ে যায়

হিসেব বলছে, ২০২০-২০২৪ সালের মধ্যে এই পাঁচ বছরে মাস্কের স্টারলিঙ্কের মোট ৫২৩টি স্যাটেলাইট মহাকাশে ধ্বংসের পর পতন হয়েছে। এইসব স্য়াটেলাইটগুলির বেশিরভাগই বায়ুমণ্ডলে ঢুকে সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছে। গত বছর একটি ভয়াবহ সৌর ঝড়ের পরে এলন মাস্কের স্পেসএক্স নতুন ৪২টি স্যাটেলাইট পাঠিয়েছিল। কিন্তু তারা উৎক্ষেপণের পরই কক্ষপথে পৌঁছাতে না পেরে বিস্ফোরণে পুড়ে যায়। চলতি বছরের জানুয়ারিতেই ১২০টির বেশি স্যাটেলাইট একসঙ্গে ধ্বংস হয়ে যায়। অনেক স্থানে আকাশে উজ্জ্বল আলোর বল দেখা গেছে। তার ভিডিও সোশ্য়াল মিডিয়ায় ভাইরালও হয়েছিল। এখন জানা গেল, সেগুলি ছিল সৌর ঝড়ের কারণে ধ্বংস হয়ে যাওয়া জ্বলন্ত স্যাটেলাইট। মাস্কের মহাকাশে এত বড় সর্বনাশের জন্য বিজ্ঞানীরা সৌর ঝড়কেই দায়ি করছেন। এখন সূর্য তার ২৫তম সৌরচক্রের অবস্থায় রয়েছে, যার সর্বোচ্চ পর্যায়কে বলে সোলার ম্যাক্সিমাম। এই সময় সৌর ঝড় খুবই বেশি হয়।

দেখুন স্টারশিপের ধ্বংসাবশেষ কীভাবে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ছে

কী কারণে এমনটা ঘটছে

ইউরোপের এক সংবাদমাধ্যমে এই নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্টে বলা হয়েছে। সূর্যের তীব্র সক্রিয়তার কারণে একের পর এক স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। গত চার বছরে মোট ৫২৩টি স্যাটেলাইট পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ফিরে এসে পুড়ে গেছে। কিন্তু সৌর ঝড়ের কারণে কেন এমন বিপর্যয় হয়? বিজ্ঞানীরা বলছেন,সৌর ঝড়ের কারণে পৃথিবীর উপরের বায়ুস্তর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, ফলে এর ঘনত্ব অনেকটা বেড়ে যায়। এর ফলে স্যাটেলাইটগুলোর ওপর টান পড়ে এবং তারা কক্ষপথ হারিয়ে মাটির দিকে নেমে আসে।

মেক্সিকোর সমুদ্র সৈকতে আছড়ে পড়া মাস্কের কোম্পানির স্য়াটেলাইটের ধ্বংসাবশেষ

সৌর ঝড়ে ঠিক কতটা ক্ষতি হয় স্যাটেলাইটের

এই বিষয়ে, নাসার বিজ্ঞানী ডেনি অলিভেইরার নেতৃত্বে গবেষণায় দেখা গেছে, সৌর ঝড়ে স্যাটেলাইটের আয়ু ১০ দিন পর্যন্ত কমে যেতে পারে, বিশেষ করে নিচু কক্ষপথে থাকা স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইটগুলোর। নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাস্কের স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট সাধারণত ৫ বছরের আয়ুর জন্য তৈরি, এবং তারা পুড়ে যাওয়ার উপযোগীভাবে ডিজাইন করা। কিন্তু সৌরঝড়ে সময়ের আগেই নষ্ট হয়ে হচ্ছে। এর ফলে স্পেসএক্সের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। অধিকাংশ স্যাটেলাইট বায়ুমণ্ডলে অনেকটা পুড়ে গিয়ে শেষ হলেও, কিছু অংশ বেঁচে যায়। গত বছর আগস্টে কানাডার এক খামারে ২.৫ কেজি ওজনের একটি স্টারলিঙ্কের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছিল।

মহাকাশ থেকে খসে পড়া স্য়াটেলাইটের ধ্বংসাবশেষ এখন দুনিয়ার কাছে বড় সমস্যার

স্যাটেলাইটের জ্বলন্ত ধ্বংসাবশেষ থেকে অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড কণা তৈরি হয়, যা ওজোন স্তরের ক্ষতি করতে পারে। একটি মাত্র স্যাটেলাইট থেকেই গড়ে ৩০ কেজি এমন কণা তৈরি হয়। এর ফলে পরিবেশে বড় প্রভাব পড়ছে। আগামী দিনে মাস্কের কোম্পানিকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৭,০০০ স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট কক্ষপথে রয়েছে। আরও হাজার হাজার পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তাই ভবিষ্যতে স্টারলিঙ্ককে তাড়াহুড়ো না করে, সৌর আবহাওয়ার পূর্বাভাস পর্যবেক্ষণ ও আরও টেকসই স্যাটেলাইট ডিজাইন করেই মহাকাশে স্য়াটেলাইট পাঠানো উচিত বলে মনে করছেন নাসার বিজ্ঞানীরা।