Nepal Gen Z Revolution: " ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫–এর এই দিনটা ইতিহাসে ঢুকে গেল "Gen Z বিপ্লব"নামে। ঘটনার শুরু চার দিন আগেই। ৪ সেপ্টেম্বর, নেপালের তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রক হঠাৎ করেই ২৬টা বড়ো বড়ো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম যেমন, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব, এক্স সব বন্ধ করে দিল। কারণ হিসাবে দেখানো হল, নাকি এগুলো নতুন সরকারি রেজিস্ট্রেশন আইন মানেনি। কিন্তু দেশজুড়ে সাধারণ মানুষের একে সরাসরি সেন্সরশিপ, জনগণের কণ্ঠরোধ করল। আর সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ হলেন তরুণেরা।
“হামি নেপাল”স্লোগানেই দেশের ক্ষমতা বদল
কারণ, ওই সোশ্যাল মিডিয়াই তো তাদের খবরের কাগজ, বিনোদন, ব্যবসা, আর আড্ডার জায়গা। তার ওপর টিকটকে তখন ভাইরাল হচ্ছিল নেপালের মন্ত্রী-এমপিদের ছেলেমেয়েদের বিলাসী জীবনের ভিডিও। দেশের মাথাপিছু আয় যেখানে মাত্র ১৩০০ ডলার, সেখানে নেতা-মন্ত্রীর কাছে বিদেশি গাড়ি, ব্র্যান্ডেড পোশাক, দামি হোটেল। যা দেখে সাধারণ তরুণরা ক্ষেপে উঠেছিল। ৮ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে কাঠমান্ডুতে মাইতিঘর মান্ডলা আর সংসদ ভবনের সামনে ঢল নামে হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর। কারও নেতৃত্ব নেই, কোনও দল নেই। নামের ব্যানার শুধু একটা: “হামি নেপাল”। স্লোগান ওঠে, অনেক হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে, এখনি দুর্নীতি বন্ধ কর। (“Enough is enough!”, “End corruption now!”। আরও পড়ুন-মিলে গেল নেপাল, বাংলাদেশ; হাসিনার পদত্যাগে বঙ্গভবনে চলে লুটপাট, এবার ওলির ইস্তফায় প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে নাচ বিক্ষোভকারীদের
নেপালের সংসদ ভবনে আগুন ধরালেন বিক্ষোভকারীরা
Nepal Federal Parliament Right Now🇳🇵🇳🇵🇳🇵#genzprotestinnepal #EnoughIsEnough pic.twitter.com/8YnLPHYxkh
— Ankit Singh Yadav🇳🇵 (@ankit_everest) September 9, 2025
পুলিশের গুলিতে হত ১৯
অবস্থার চাপে পড়ে পুলিশ প্রথমে লাঠি, টিয়ার গ্যাস চালাল। তারপর নামল জলকামান, রাবার বুলেট, এমনকি গুলিও। সংসদ ভবনের গেট ভাঙল, ভেতরে ঢুকে আগুন লাগাল উত্তেজিত জনতা। শুধু কাঠমান্ডুতেই মারা গেল ১৭ জন, আরও দু’জন প্রাণ হারাল ইতাহারিতে। তিন শতাধিক মানুষ গুরুতর আহত। আহতদের তালিকায় পুলিশের নামও আছে, এমনকি অর্থমন্ত্রী বিষ্ণুপ্রসাদ পাওডেলকেও মার খেতে হয় রাস্তায়। আরও পড়ুন-শেখ হাসিনা থেকে কেপি শর্মা ওলি, দেশজুড়ে আন্দোলনের চাপে ইস্তফা দেওয়া বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানরা
প্রধানমন্ত্রী ওলির বাসভবনে আগুন
🚨BREAKING: The youth of #Nepal set fire to the Prime Minister Oli's residence.#Nepalprotest pic.twitter.com/sDkgkyHaG5
— Mohit Chauhan (@mohitlaws) September 9, 2025
আগুন আরও ছড়াল, কারফিউজ জারিতেও কাজ হল না
বিকেলের মধ্যেই সেনাবাহিনী নামানো হল। কারফিউ জারি হল, কিন্তু কে শুনছে কারফিউ! সেনার গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ল তরুণেরা। প্রধানমন্ত্রী ওলির বাড়ি, বিরোধী নেতা দেউবার বাড়ি। সবেতেই আগুন। নোটে ভরা সিন্দুক, দামী গহনা উড়ছে বাতাসে।
নেপালের সংসদ ভবনে আগুন
#WATCH | Nepal: Protestors set the Parliament building on fire as the protest turned violent in Kathmandu.
The Nepali PM resigned this afternoon amid demonstrations against the Government over alleged corruption. pic.twitter.com/UG50szWE25
— ANI (@ANI) September 9, 2025
রাতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যান তোলা হলেও লাভ হল না
চাপে পড়ে সেদিন রাতেই সরকার ঘোষণা করল,সোশ্যাল মিডিয়া ব্যান তুলে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ততক্ষণে আন্দোলনের দাবির তালিকা বদলে গেছে। শুধু ব্যান তুলে নেওয়া নয়, দরকার ছিল জবাবদিহি। সেই রাতেই পদত্যাগ করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ৯ সেপ্টেম্বর সকালে সেনাপ্রধান সরাসরি গিয়ে ওলিকে বললেন,“আর থাকা যাবে না।” বিকেল নাগাদ পদত্যাগপত্র জমা দিলেন ৭৩ বছরের কেপি শর্মা ওলি।
নেপালে গণঅভ্যুত্থান
9 youth died in the Gen_Z protest in Nepal against socialist government ban on 26 social media apps including Facebook, youtube and @X .
Youths demand complete change of leadership in the country most deaths are due to police firing. #Nepal #genznepal #genzie pic.twitter.com/XEuh6yk8ts
— Tulsi For President (@TulsiPotus) September 8, 2025
ওলির পদত্যাগের পর কোন পথে নেপাল, তাকিয়ে গোটা বিশ্ব
বিশ্ব হতবাক। মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ক্ষমতা হারাল এক পূর্ণাঙ্গ সরকার। রাষ্ট্রসংঘ থেকে শুরু করে আমেরিকা-ইংল্যান্ড। সবার বিবৃতি এসেছে পুলিশের গুলি চালানো আর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের নিন্দা করে। কিন্তু নেপালের রাস্তায় তখন শুধু একটাই আওয়াজ:
“আমরা আমাদের দেশ ফেরত চাই।” Gen Z প্রমাণ করে দিল, ডিজিটাল যুগে তরুণেরা চাইলে যে কোনও সরকার টালমাটাল হয়ে যেতে পারে, আর তার জন্য দরকার মাত্র একটিই ট্রিগার, স্বাধীনতার কণ্ঠস্বর বন্ধ করার চেষ্টা।