লন্ডন, ২৮ আগস্ট: যুবরানি ডায়ানা (Princess Diana), এই নামটা কানে এলেই বয় কাটের সোনালি চুলের সুন্দরী তন্বীও চোখের উপরে ভেসে ওঠেন। ব্রিটিশ সুন্দরীদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তবে ডায়ানার সৌন্দর্যর সঙ্গে মিশে ছিল এক অপরূপ লাবন্য। যেখানে ত্যাগ, তিতিক্ষা, স্নেহশীলতা, মিলেমিশে সেই রূপকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছিল। সেকারণে মৃত্যুর ২২ বছর পরেও লেডি ডায়ানা এখনও অনুরাগীদের প্রিয় নারী হয়ে আছেন। সাদারণ ব্রিটিশ নাগরিক থেকে বাকিংহ্যাম প্যালেসের যুবরানি হওয়াটা স্বপ্নের মতো ছিল না। তবুও প্রিন্সি চার্লসের ঘরণী হয়েছিলেন তিনি। ঘোড়ায় চড়া থেকে শুরু করে বন্দুক চালানো ডায়ানার সার্বিক দক্ষতা ছিল দেখার মতো।
দাম্পত্যের প্রথমদিককার ছবিতে ডায়নাকে খুব হাসিখুশিই দেখা গিয়েছিল। কতটা তা বাস্তবিক আর কতটা শুধু দেখানো সেসব বিতর্কের বিষয়। বিয়ের পরে পরেই উইলিয়াম ও হ্যারির জন্ম হল। দুই ছেলের মা ডায়ানা একদিন হটাৎ আবিষ্কার করলেন তাঁর প্রতি চার্লসের অনাগ্রহ, অবহেলা। ততদিনে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছেন যুবরাজ। খোঁজ নিয়ে সেই মহিলার নামটিও জানতে পারলেন যুবরানী, ক্যামিলা পার্কার বোলস। একই বাড়িতে থেকেও এই দম্পতির মধ্যে তৈরি হয়ে গেল পাহাড় প্রমাণ দূরত্ব। এমনিতেই রাজপরিবারের বধূ হয়েও তাঁকে সেবাবে মেনে নিতে পারেননি বাকিংহ্যাম প্যালেসের বাসিন্দারা। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথও দূরত্ব বজায় রাখতেন। তবুও স্বামীর ভালবাসায় নিজেকে সোজা রেকেছিলেন যুবরানি। কিন্তু এই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের হদিশ পেয়ে প্রথমটায় ভেঙে পড়লেও পরে জনসেবায় মন দেন তিনি। একাএকাই দেশভ্রমণে বেরিয়ে যেতেন। ব্রিটিশ রাজবাড়ির প্রোটোকল তাঁকে বাঁধতে পারেনি। আসলে তিনি আর ওই প্রোটোকলে নিজেকে বাঁধতে চাননি।১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসের একটি দিনে প্যারিসের রাস্তায় পাপারাৎজির হাত থেকে বাঁচতে বয়ফ্রেন্ড ডোডি আল ফায়েদকে নিয়ে সুড়ঙ্গে অদৃশ্য হয়েছিলেন ডায়ানা। তারপর তাঁর জীবিতবস্থার ছবি দেখেনি গোটা পৃথিবী। এরপর ২২টা বছর কেটেছে, টেমস থেকে গড়িয়েছে অনেক জল। কিন্তু ডায়ানার মৃত্যুকে ঘিরে রহস্যের চাদর একটা রয়েই গিয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে গোটা বিষয়টি দুর্ঘটনা দেখানো হলেও আদতে কী তাই? ২২ বছর ধরে এই প্রশ্ন ডায়ানা অনুরাগীদের তাড়া করে ফিরছে। যুবরানির সমালোচকও কম ছিল না। তাঁরাও কিন্তু উত্তরটা জানতে চান। আরও পড়ুন-যোগাসন করতে গিয়ে ব্যালকনি থেকে ৮০ ফুট নিচে পড়লেন তরুণী, কী হল তারপর?
ডায়ানার যন্ত্রণাদীর্ণ মৃত্যুর পিছনে কার হাত রয়েছে, কে চেয়েছিলেন যুবরানি পাকাপাকিভাবে এবার অস্তাচলে যাক? লে ভ্যান দেন ছিলেন ডায়ানার গাড়ি চালক। ওই ভয়াবহ ঘটনার পর থেকেই মুখে কুলুপ এঁটেছেন তিনি। ওই অভিশপ্ত দিনটিতে ডায়ানার সাদা ফেয়ারি গাড়িটির স্টিয়ারিংয়ে ছিলেন লে ভ্যান দেন। ফ্রান্সের রাস্তায় পন্ট দে লালমা সুড়ঙ্গের মধ্যেই সাদা ফেয়ারি দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। টানেলের সঙ্গে ধাক্কায় উল্টে যায় ফিয়াট। এই দুর্ঘটনাই যুবরানি ডায়ানার প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। গাড়িতে ডায়ানার সঙ্গে ছিলেন প্রেমিক ডোডি ফায়েদ (Dodi Fayed)। ৩১ আগস্ট যুবরানি ডায়ানার সঙ্গেই তাঁর জীবনদীপ নিভে গিয়েছিল। তিনি ছিলেন ইজিপ্টের কোটিপতি এ আই ফায়েদের পুত্র। কেউ কেউ আবার বাকিংহ্যাম প্যালেসের দিকেও আঙুল তোলেন। ২২ বছর পর আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর ডায়ানার মৃত্যু রহস্যের সত্য উদ্ঘাটন হতে চলেছে। সম্প্রতি একটি বইতে ডায়ানার মৃত্যু রহস্যের উত্তর মিলেছে। তারপরেই বন্ধ হয়ে যাওয়া মামলাটি ফের চালুর জন্য উঠেপড়ে লাগেন ডোডি ফায়েদের বাবা এআই ফায়েদ। তাঁর ইচ্ছেতেই এই মামলা ফের শুরু হয়, প্রিন্সেস অফ ওয়েলসের মৃত্যুর পিছন দুর্ঘটনাই দায়ী নাকি মানুষের সাজানো দুর্ঘটনায় তাঁর প্রাণ গেল। সবটাই জানা যাবে আসছে ১৭ তারিখ।