Trump-Musk Fight. (Photo Credits: X)

Trump vs Musk: পরম বন্ধু এখন চরম শত্রু। মার্কিন ক্ষমতার অঙ্গনে গত কয়েক ঘণ্টা ধরে যেন বয়ে গিয়েছে বড় কোনও টর্নেডো। যে ইলন মাস্ক (Elon Musk) রেকর্ড অর্থ নির্বাচনী প্রচারে খরচ করে ক্ষমতায় এনেছিলেন, তিনিই এখন তাঁর সবচেয়ে বড় শত্রু। যে মাস্ক (Elon Musk)  ট্রাম্পকে তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ বলেছিলেন। তিনিই এখন ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় শত্রু। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আত্মঘাতী যৌন অপরাধী এপস্টিনের ফাইলে (শিশু, নাবালিকা যৌনতার) নাম থাকা নিয়েও বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন টেসলা প্রধান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সরানোর দাবিও জানিয়েছেন মাস্ক। টেসলা, স্পেস এক্স, এক্স প্ল্যাটফর্মের প্রধান সরাসরি বলেছেন, ট্রাম্পকে ইমপিচমেন্ট করার পর তাঁকে সরিয়ে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জেডি ভান্স-কে আনার দাবি করেছেন মাস্ক।

ট্রাম্পের এবারের নির্বাচনী ফলের হিসেব

কিন্তু এখন প্রশ্ন হল দুনিয়ার ধনীতম ব্যক্তি মাস্কের বিদ্রোহে কি ট্রাম্পের গদি টলমল? ২০২৪ সালের নভেম্বরে হওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে ৩২১-২২৬ ইলেকটোরাল কোলাজে হারিয়ে ক্ষমতায় আসেন ট্রাম্প। মাস্কের দেওয়া সিংহভাগ অর্থের নির্বাচনী প্রচারে ঝড় তুলে সাতটি সুইং স্টেটে জয়, পপুলার ভোটেও জেতেন ট্রাম্প। ট্রাম্প পেয়েছিলেন ৪৯.৮% ভোট আর সেখানে কমলা হ্যারিস পান ৪৮.৩% ভোট। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের পাশাপাশি হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভে ২২০-২১৫ আর সেনেটে ৫৩-৪৭ ডেমোক্রাটদের পিছনে ফেলে ক্ষমতায় আসে রিপাবলিকান-রা। সব মিলিয়ে সংখ্যার দিক থেকে মোটের ওপর সবদিক থেকে স্বস্তিতে আছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কিন্তু মুশকিল হল, অভিবাসন নীতি, থেকে শুল্ক বা ট্য়ারিফ নীতি, সরকারী কর্মীদের ছাঁটাই, হাভার্ডে বিদেশী ছাত্রদের ওপর নিষেধাজ্ঞার মত একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে ট্রাম্পের নিজের দলেই ক্ষোভ রয়েছে। ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেছেন এখন দেড়শো দিনও পার হয়নি, কিন্তু এরই মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে অন্তত দুজন রিপাবলিকান সেনেট সদস্যরা প্রকাশ্য়ে বিরোধিতা করছেন। দেশের আদালতগুলিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একের পর এক আইন বিরোধী কাজ নিয়ে উদ্বিগ্ন। এমন সময় ট্রাম্পের সংসারে মাস্কে 'ঘরের শত্রু'হয়ে ওঠা খুবই মারাত্মক বলে মনে করা হচ্ছে।

তাহলে কি ট্রাম্পের গদি যায়, যায়?

এর সহজ আপাতত 'না'। মার্কিন সংবিধান অনুসারে প্রেসিডেন্টকে ইমপিচমেন্ট করা যায় বেশ কয়েকটি শর্তে। তার মধ্যে রয়েছে প্রেসিডেন্ট যদি বড় কোনও অন্য়ায়ে জড়িয়ে পড়েন বা আইনগত দিক থেকে বড় কোনও চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েন, সেক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২৫ নম্বর সংশোধনী অনুযায়ী, দেশের প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে তাঁর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব এনে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া যায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনও পর্যন্ত দুবার ইমপিচমেন্টের মুখে পড়েছেন। ২০১৯ সালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে ফোনের মাধ্যমে অন্যায়ভাবে জো বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য আর ২০২১ সালে ক্যাপিটল হামলার জন্য। নিয়ম হল, প্রেসিডেন্টকে ইমপিচ করতে হলে হাউস অফ রিপ্রেজেন্টিভে ৪৩৫ জন সদস্যের মধ্যে ২১৮ জনের সমর্থন প্রয়োজন হয়। যেখানে সেই কক্ষে (House of Representaive) এখন ডেমোক্রাটদের ২১৫ জন সদস্য রয়েছে। সেক্ষেত্রে ডেমোক্রাটরা তাদের সব সদস্যদের ভোট ধরে রেখে, রিপাবলিকদের মধ্যে থেকে মাত্র ৩ জনকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনতে পারলে ট্রাম্পকে ইমপিচ করা যাবে। কিন্তু তার মানেই ট্রাম্পকে সরানো যাবে সেটা নয়। হাউসে ইমপিচ করানোর প্রস্তাব পাশ হলে তা সেনেটে যায়।

প্রেসিডেন্টকে সরাতে সেনেটে ১০০ জনের মধ্য়ে ৬৭ জনের সমর্থন দরকার

ইমপিচ হওয়া প্রেসিডেন্টকে সরাতে হলে সেনেটে ১০০ জনের মধ্যে ৬৭ সেনেটরের সমর্থন প্রয়োজন হয়। মানে দলমত নির্বিশেষে সিংহভাগ সেনেটরকে একমত হতে হয় প্রেসিডেন্টকে সরাতে হলে। যার সম্ভাবনা এখন মার্কিন মুলুকে নেই। সেনেটরে ডেমোক্রাটদের বর্তমানে মাত্র ৪৬ সদস্য আছেন। তার মানে ইমপিচমেন্টের পর ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্টের আসন থেকে সরাতে হলে অন্তত ২১ জন রিপাবলিকান সেনেটরকে ডেমোক্রাটদের সঙ্গে আসতে হবে। আপাতত এমন কোনও সম্ভাবনা রাজনৈতিক মেরুকরণে আড়াআড়ি ভাগ হয়ে যাওয়া ট্রাম্পের দেশে নেই। তবে এটাও ঠিক জনপ্রিয়তার বিচারে ট্রাম্প এখন একেবারেই ভাল জায়গায় নেই। মাত্র ১৩৫ দিন আগে ক্ষমতায় এলেও দেশে দ্রুত জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের বেশ কিছু নীতির কুফল ভোগ করতে হচ্ছে রিপাবলিকানদেরও। ফলে দলে ট্রাম্প বিরোধী হাওয়া প্রবল হচ্ছে।

ট্রাম্পের অগ্নিপরীক্ষা আগামী বছর মধ্যমেয়াদী নির্বাচনে

২০২৬ সালের নভেম্বরে মার্কিন মুলুকে মধ্যমেয়াদী নির্বাচন (Midterm Election 2025)। হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের সব কটি মানে ৪৩৫টি আসনেই হবে ভোট। পাশাপাশি সেনেটে ৩৪টি আসনেও হবে নির্বাচন। সেই ভোটে ট্রাম্পের দল পরাস্ত হলে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের গদিরক্ষা করা কঠিন হতে পারে। তার আগে পর্যন্ত মাস্কের তোপগুলো গদিতে বসেই সামলানো নিয়ে ট্রাম্পের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।