কলকাতা, ১৯ মে: করোনার মধ্যে নতুন সঙ্কট ঘূর্ণিঝড় আমফান (Cyclone Amphan)। দুয়ারে দুই বিপদে আপাতত চরম আতঙ্কে বঙ্গবাসী। আগামী তিন-চারদিন পরিস্থিতি ঠিক কতটা ভয়ঙ্কর হতে চলেছে তা কেউ জানে না। ইতিমধ্যে ঝড়ের প্রকোপ থেকে বাঁচাতে দিঘা ও সুন্দরবন উপকূলের বহু মানুষকে সাইক্লোন শেল্টারে পাঠানো হয়েছে। ত্রাণের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে এনডিআরএফ বাহিনীর দল সকলেই এলাকায় ঝড়ের প্রস্তুত। বুধবার দুপুর বা বিকেলের পর থেকেই আছড়ে পড়তে পারে 'আমফান'। রাজ্যের সাত জেলায় জারি ভারী বৃষ্টিপাত ও তীব্রই বেগে ঝড়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এর মধ্যে সতর্কতা বজায় রাখতে যা যা করা উচিত-
- বুধবার সারাদিন বাড়ির বাইরে না বেরোনোই ভালো। কারণ, বুধবার সন্ধ্যায় দিঘা ও বাংলাদেশের ।হাতিয়া দ্বীপের মধ্যবর্তী কোনও জায়গা দিয়ে এই ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে ঢুকতে পারে। সে সময় তার যে ভয়াল রূপ ধারণ করার কথা, আবহাওয়া বিজ্ঞানের পরিভাষায় তাকে বলা হয় ‘‘এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোন’ বা মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়। আরও পড়ুন, ধেয়ে আসছে সুপার সাইক্লোন আমফান, প্রবল বৃষ্টি শুরু নামখানা, কাকদ্বীপে; কলকাতায় মেঘলা আকাশ
- দেশ জুড়ে চতুর্থ দফার লকডাউনের মধ্যেই ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ থেকে বাঁচতে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে হেল্পলাইন নম্বর ১০৭০।
- রেডিয়ো, টিভি ও সংবাদপত্রে আবহাওয়ার সাম্প্রতিক খবরের দিকে নজর রাখুন। তবে সঠিক তথ্যের জন্য প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমের উপরেই নির্ভর করুন। গুজব উপেক্ষা করে শান্ত থাকুন। আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতা মেনে চলুন।
- স্থলভাগে প্রবেশের সময় উপকূলবর্তী এলাকায় ঘণ্টায় ১৬৫-১৭৫ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইবে। ঝড়ের গতিবেগ স্বল্প সময়ের জন্য ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। ফলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তীব্র। তাই আগে থেকেই মোবাইলে যথেষ্ট পরিমাণে চার্জ দিয়ে রাখুন।
- কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন মঙ্গলবার থেকেই গাঙ্গেয় বঙ্গে বৃষ্টি শুরু হতে পারে। বিকেলের পরে উপকূলে ঝোড়ো হাওয়া বইবে। বুধবার সকাল থেকে ঝোড়ো হাওয়া বইবে কলকাতা-সহ উপকূলবর্তী জেলায়।
- উপকূলে তিন থেকে ছয় মিটার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। ফলে সময় থাকতেই সঙ্গে থাকা জরুরি নথিপত্র ও মূল্যবান জিনিসপত্র সুরক্ষিত করুন। এমন ভাবে রাখুন, যাতে জলে ভিজে সেগুলি নষ্ট না হয়ে যায়।
- আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বুধবার মালদহ ও দুই দিনাজপুরে বৃষ্টি হতে পারে। বৃহস্পতিবার বৃষ্টি বা ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে সব জেলাতেই। আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে অত্যাবশ্যকীয় জিনিস, খাবার, ওষুধ, জল ও পোশাক প্রস্তুত রাখুন। সুরক্ষিত রাখুন আপনার বাড়িকেও। ধারালো কোনও জিনিস খোলা অবস্থায় ফেলে রাখবেন না। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বাঁধনমুক্ত রাখুন পোষ্যদের।
- বিশেষ সতর্কতা নিতে হবে মৎস্যজীবীদের। তাঁদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। নিরাপদ স্থানে বেঁধে রাখতে হবে তাঁদের নৌকাও। এই পদক্ষেপগুলি করতে হবে ঘূর্ণিঝড়ের আগেই। কিন্তু ঝড়ের সময় বা তার পরে, কী কী করতে হবে, সে বিষয়েও নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে।
- যদি ঝড়ের সময় বাড়িতে থাকেন, সবার আগে বিদ্যুৎ ও রান্নার গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন। বাড়ির সব দরজা, জানালা বন্ধ রাখুন। খড়ের ঘর, কাঁচা বাড়ি বা জীর্ণ ও বিপজ্জনক পাকা বাড়িতে থাকবেন না । যদি আপনার বাড়ি সুরক্ষিত না হয়, আগেই ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র বা নিকটবর্তী পাকা বাড়িতে আশ্রয় নিন।
- প্রাণহানি ঠেকাতে কলকাতার সব থানাকে নিজের এলাকার জরাজীর্ণ বাড়ির তালিকা তৈরি করতে বলেছে লালবাজার। রাজ্যের সব চিড়িয়াখানাকে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন রাজ্যের জ়ু অথরিটি।
- ঘূর্ণিঝড়ের সময় যদি কেউ বাড়ির বাইরে থাকেন, ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়িতে আশ্রয় নেবেন না। বিপদ বুঝে যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদ আশ্রয় বা পাকা বাড়ি খুঁজে নিন। সেইসঙ্গে ভেঙে পড়া বৈদ্যুতিক স্তম্ভ, তার এবং ধারালো জিনিসের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
- তবে যে কোনও বিপদে বাইরে বেরোনোর প্রয়োজন পড়লেও সবসময় মাস্ক পরুন। যদি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র বা অন্যান্য সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে হয়, সেখানেও অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন। পাশাপাশি, করোনা সংক্রান্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জারি করা অন্যান্য নির্দেশও মেনে চলার জন্য সরকারের তরফে আবেদন করা হয়েছে।
- কেন্দ্র ও রাজ্য, দুই প্রশাসনকেই উদ্বেগে ফেলেছে আমপান। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ডিজি এসএন প্রধান জানান, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের জন্য মোট ৩৭টি বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে। উপকূল এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরানোর সময় করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক।