প্রয়াত হলেন বর্ষীয়ান কবি, সম্পাদক এবং পরিবেশকর্মী কমল চক্রবর্তী। ৩০ অগাস্ট, শুক্রবার জামশেদপুরের এক হাসপাতালে প্রয়াত হলেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৮০। কয়েকদিন আগে ২১ অগাস্ট বিকেল তিনটে নাগাদ মাথা ঘুরে উল্টে পড়ে যান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে ব্ল্যাক আউট। মাথার পিছনে মারাত্মক আঘাত লাগে। রক্তপাত হয়। বমিও। চিকিৎসকরা জানান ব্রেন স্ট্রোকের কারণে অচেতন হয়ে পড়েছেন তিনি। সেই অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করা হয় জামশেদপুরের টাটা মেইন হাসপাতালে। ২১ আগস্ট বিকেল থেকেই সংজ্ঞাহীন। গত আটদিন কোমায় ছিলেন। গতকাল বেলা তিনটের সময় সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
তবে শুধুই শিল্পী কিংবা কবি বললে কিছুই বলা হয় না কমল চক্রবর্তীর বিষয়ে। প্রাথমিক পেশায় ছিলেন এক বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়ার। নয়ের দশকে সে সব ছেড়ে এই অকৃতদার মানুষটি পুরুলিয়ার বান্দোয়ান অঞ্চল থেকে আরও মাইল ১৫ দূরে ঝাড়খণ্ডের সীমানার গাঁ ঘেঁষে বেশ কিছুটা রুক্ষ জায়গা কিনে নেন। কয়েকটি ঘর তৈরি করে শুরু করেন সাঁওতাল যুবক-যুবতী ও তাঁদের উপজাতীয় সংস্কৃতি রক্ষা করার প্রচেষ্টা। এবং সবুজায়ন করা। প্রতিষ্ঠানটির নাম দেন ‘ভালোপাহাড়’। ধীরে ধীরে বিভিন্ন মানুষের পৃষ্ঠপোষকতায় একশো বিঘারও বেশি জমি কেনেন তিনি এবং পোঁতা শুরু করেন গাছ।বৃক্ষহীন প্রকৃতিকে ক্রমশ বৃক্ষময় করে তোলেন তিনি।রিপোর্ট বলছে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার গাছের লীলাভূমি ভালোপাহাড়।
এছাড়াও সেখানে তিনি তৈরি করেন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় যেখানে আজও নিখরচায় পড়াশুনা করে আশেপাশে ২০-৩০টি সাঁওতাল গ্রামের কচিকাঁচারা। সঙ্গে পেট ভরে খাবার। শুধু তাই নয়, বাড়ি থেকে তাদের নিয়ে আসা ও স্কুল শেষে বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন এই মানুষটি।এই সব গাছগাছালি, ধুলো ভরা পুরুলিয়ার জঙ্গুলে মেঠো পথ এবং তাঁর ‘ভালোপাহাড়’ ছেড়ে শুক্রবার শেষ দুপুরে শেষবার রওনা দিলেন কমল চক্রবর্তী।