
কলকাতা, ১৯ জুন: বাঙলার রাজনীতিতে এখন তৃণমূল (TMC) ছেড়ে বিজেপি (BJP) -তে যোগদানের খবরটা রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজই যেমন শোনা যাচ্ছে উত্তরবঙ্গের তৃণমূলের চার বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে দার্জিলিং ধরে রেখে আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, বালুরঘাট সর্বত্র তৃণমূলকে হারিয়েছে বিজেপি। নিচু তলাতে তো বটেই এমনকি রাজ্যের শাসক দলের একের পর বিধায়কও এখন বিজেপি-তে নাম লেখাচ্ছেন। আর তৃণমূলের কোল ফাঁকা করে বিজেপিতে জনপ্রিয়তা বাড়ানোর কাজের নেপথ্য নায়ক মুকুল রায় (Mukul Roy)।
যে মুকুল রায়ের মাস্টারস্ট্রোকে লোকসভা ভোটের আগে বিষ্ণুপুরের সৌমিত্র খাঁ (Soumitra Khan), ও ব্যারাকপুরের অর্জুন সিং (Arjun Singh)-কে দল ভাঙিয়ে নিয়ে এসে বাজিমাত করেন মুকুল।
লোকসভা ভোটের তৃণমূলের ভাঙন আরও চওড়া করছেন মমতা ব্যানার্জি-র একদা সবচেয়ে আস্থার পাত্র মুকুল রায়। তবে এখানেই থামতে চান না রাজ্য বিজেপি-র ভরসার মুখ মুকুল। দিদি-কে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা আগামী ক দিনের মধ্যে দিতে চান মুকুল। রাজ্য রাজনীতির অন্দরে কানপাতলেই শোনা যাচ্ছে কথাটা। আরও পড়ুন- এবার টলিউডে মমতা ব্যানার্জি-র একচেটিয়া রাজ খতম করতে নামছে বিজেপি, জানেন টলিপাড়ায় গেরুয়া শিবিরের নেতৃত্বে কে!
প্রতি বছরই ২১ জুলাই, দলের শহীদ দিবসে কোনও না কোনও চমক দেন মমতা ব্যানার্জি। ক্ষমতায় আসার আগে অনেক কোণঠাসা অবস্থাতেও ২১ জুলাই দিনটা মমতার নামেই লেখা থাকে। রাজ্যে ক্ষমতার আসার পর থেকে ২১ জুলাই, শহীদ দিবস মানেই বিরোধী দলের নেতা-বিধায়কদের দলে টানার ঘোষণাটা থাকে দিদির সবচেয়ে বড় চমক। অনেকগুলো বছর ধরে দিদির সেই ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে চমকের বড় দায়িত্বে ছিলেন মুকুল। মাস ঘুরলেই তৃণমূলের আরও একটা শহীদ দিবস। শোনা যাচ্ছে, দিদির সেই দিনে মুকুল তাঁকে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা দিতে চান তৃণমূলের বড় কোনও নেতাকে বিজেপি-তে নিয়ে এসে। তৃণমূল নেতাদের ধারনা, বিজেপি-র এত বড় জয়ের পর যারা তৃণমূল ছাড়ার কথা আগে ভেবে রেখেছিলেন, তার সবাই ফুল বদল করে ফেলেছেন। এবার আর দলবদলের ব্রেকিং আসবে না। কিন্তু, কান পাতলে শোনা যাচ্ছে মুকুল তাঁর সবচেয়ে বড় তাসটা ২১ জুলাইয়ের জন্য তুলে রেখেছেন। আপাতত তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন রাজ্যের শাসক দলের যেসব বিধায়ক তাঁরা হলেন- বীজপুরের শুভ্রাংশু রায়, নোয়াপাড়ার সুনীল সিং, বনগাঁ উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। এ ছাড়াও উত্তরবঙ্গের চার বিধায়কেরও ফুল বদল করে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া নিশ্চিত। এখন অনেকের প্রশ্ন তাহলে আর কী বাকি থাকল!
মুকুল রায় অবশ্য এসব নিয়ে মুখ খুলছেন না। তিনি এখন চালকের আসনে। আড়াই তাঁর অনুগামীরা বলছেন, ''দাদার সঙ্গে অনেকেই ভিতরে ভিতরে যোগাযোগ রাখছেন। সময় মত সব জানানো হবে।'' ২১ জুলাই কী চমক থাকছে? রাজ্য বিজেপি নেতাদের এই প্রশ্ন করা হলে, তারা সরাসরি এড়িয়ে গিয়ে বলছেন, সেটা আপনার যে চমক দিতে ভালবাসেন তাঁকে জিজ্ঞাসা করুন। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে জোরকদমে নেমে পড়ছেন মুকুল রায়। লোকসভায় দারুণ ফলের পর রাজ্য নেতৃত্বকে ক্ষমতা দিতে রাজি হয়েছে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এমনটাই শোনা যাচ্ছে। আর এই সুযোগটা কাজে লাগাতে মুকুল-দিলীপ ঘোষরা আন্দোলনে জোর বাড়াতে চাইছেন। রাজ্যের প্রতিটি বুথে বিজেপি কর্মী তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। বিজেপি কর্মীরা কোথাও আক্রান্ত হলেই সবাইকে ঘটনাস্থলে ছুটে যাওয়ার কথা বলা হতে পারে। ২১ জুলাইয়ের আগে দলছুটদের ভয়ে কংগ্রেস যেভাবে ভয়ে থাকত, কিছুটা সেই অবস্থা তৃণমূলের। সৌজন্যে মুকুল রায়। যদিও তৃণমূল নেতারা, খেল তো এবার মুকুল দেখবেন। দেখা যাক কোন পক্ষের দাবি সত্যি হয়।