নির্যাতিতার পরিবার (ছবিঃANI)

কলকাতাঃ মোট পাঁচ দফা দাবি নিয়ে মঙ্গলবার স্বাস্থ্যভবন অভিযান করেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা(Junior Doctors)। গতকাল বেলা ১২ টায় করুণাময়ী থেকে মিছিল করে স্বাস্থ্যভবনের(Swasthya havan) সামনে গিয়ে অবস্থান করছেন তাঁরা। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করবেন তাঁরা একথাও সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে জুনিয়র চিকিৎসকদের তরফে। ডাক্তারদের পাশে দাঁড়িয়েছে নাগরিক সমাজ। রাতারাতি মাথার উপরের ত্রিপল থেকে রাতের খাবার, পানীয় জল ব্যবস্থা হয়েছে সব কিছুরই। গানে-স্লোগানে যখন গমগম করছে রাজপথ, এক স্বরে গলা মেলাচ্ছেন শয়-শয় মানুষ তখন আর বাড়িতে বসে থাকতে পারেনি নির্যাতিতার পরিবার। ঘড়ির কাঁটায় তখন ঠিক ১২ টা বেজেছে। স্বাস্থ্য ভবন চত্বরে হাজির আর জি কর কাণ্ডের নির্যাতিতার পরিবার। এই আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন করছেন তাঁরা তাই জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে রয়েছেন তা জানাতেই সেখানে পৌঁছে যায় নিহত চিকিৎসকের পরিবার। কাঁপা-কাঁপা গলায় নির্যাতিতার মা বলেন, "তোমরা শয়-শয় ছেলেমেয়ে রাস্তায় নেমেছো আজ আমার মেয়ের জন্য। প্রশাসন আজ রাস্তায় নামতে বাধ্য করেছে তোমাদের। আমি আর বাড়িতে বসে থাকতে পারলাম না। আসার সময় দেখলাম রাস্তায় দাঁড়িয়ে খিচুরি খাচ্ছ তোমরা, এটা দেখে খুব কষ্ট পেয়েছি। ডাক্তারদের ভগবানের চোখে দেখা হয় আর সেই ডাক্তাররা আজ রাস্তায় এভাবে আন্দোলন করছে। আমি চাইব আমার পাশে তোমরা এভাবেই থাকো। তোমরাই আমার শক্তি।" শুধু তাই নয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। তাঁর কথায়, "প্রশাসন কীসের ভয় পাচ্ছে? কেন তোমাদের বারবার আটকানো হচ্ছে? এত ব্যারিকেড এত বাধা কেন?" মেয়ের মৃত্যুর পর থেকে বারবারই প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে নির্যাতিতার পরিবার। গতকাল রাতে স্বাস্থ্যভবনের সামনেও শাসকদলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে নিহত চিকিৎসকের পরিবার। এ দিন সংবাদমাধ্যমের সামনে ফের সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন নির্যাতিতার বাবা। তিনি বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। প্রথম থেকেই বলে আসছি আমার মেয়ের সঙ্গে যা হয়েছে তা একা কারও পক্ষে সম্ভব নয়।এতে অনেকে জড়িত। আমরা গোটা চেস্ট মেডিসিন বিভাগকে দায়ী করছি কিন্তু শুরু থেকেই সেই সঞ্জয় রায়কে দোষী প্রমাণ করে ফাঁসি দেওয়ার চেষ্টা করেছে সরকার।" সবশেষে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বুকে একরাশ কষ্ট নিয়ে বলেন, "আমরা থানায় তখন বাড়িতে মেয়ের দেহ নিয়ে চলে যাওয়া হয়। আমার মেয়ের শেষযাত্রা কেন ফ্রি করা হল? মেয়েটা আমার কাছে সারাজীবন কিচ্ছু চায়নি। ও কী ভাবল বাপি শেষে এই চারশোটা টাকাও দিতে পারল না?" মেয়ে যতক্ষণ না বিচার পাচ্ছে ততক্ষণ শান্তি পাবেন না তাঁরা এও জানিয়ে দেয় নির্যাতিতার পরিবার। তবে এই কঠিন পরিস্থিতিতে দুর্গা মাকে আসতেই হবে বলে জানান নির্যাতিতার মা। উৎসবে ফিরবেন না তাঁরা একথা জানিয়ে তিনি বলেন, "আমার উৎসব চলে গিয়েছে। তবে এই কঠিন সময়ে দুর্গা মা আসুক। আমি তাঁর কাছে একটাই প্রার্থনা করব দোষীরা যেন উপযুক্ত শাস্তি পায়।"

মধ্যরাতে জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্না মঞ্চে হাজির নির্যাতিতার পরিবার