West Bengal Formation Day 2023: প্রায় ২০০ বছর ব্রিটিশদের শাসনাধীনে থাকার পর স্বাধীন হয় ভারতবর্ষ। তারিখটা ছিল ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট। তার আগের দিন অর্থাৎ ১৪ অগস্ট ভারতের ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জন্ম হয়েছিল পাকিস্তান নামক একটি রাষ্ট্রের। আজ যেটা বাংলাদেশ, সেটা ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের আগে পর্যন্ত পরিচিত ছিল পূর্ব পাকিস্তান নামে। অবিভক্ত ভারত যেমন দু’টুকরো করে দেওয়া হয়েছিল, তেমনই দু’টুকরো হয়ে গিয়েছিল অবিভক্ত বাংলাও। বাঙালি সেসময় কোনও দিন ভাবতেও পারেনি, এমনও দিন দেখতে হবে যে কলকাতা ও ঢাকার নাম আলাদাভাবে উচ্চারিত হবে।

১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাও স্বাধীন হয়েছিল, তবে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে। স্বাধীনতার আগে ভারত একাধিক ব্রিটিশ-শাসিত প্রদেশ ও নামমাত্র স্বায়ত্ত্বশাসিত দেশীয় রাজ্যে বিভক্ত ছিল। দেশীয় রাজ্যগুলিও ব্রিটিশ সরকারের পরামর্শক্রমে শাসিত হতো। দেশভাগের পর এই প্রশাসনিক বিভাগগুলির কয়েকটি পাকিস্তান অধিরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। আর বাদবাকি প্রদেশ ও রাজ্যগুলি ভারত অধিরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। আমাদের পশ্চিমবঙ্গও সেই সময় থেকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।

তবে পশ্চিমবঙ্গ অর্থাৎ এপার বাংলা ভারতীয় ভূখণ্ডে পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা পায় ১৯৫০ সালের ২০ জুন। এরপর, ১৯৫২ সালে প্রথমবার বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এরাজ্যে। তার আগে পর্যন্ত অর্থাৎ ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত বাংলার প্রাদেশিক আইনসভা কংগ্রেস শাসন করেছে। সেসময় মোট ২ জন মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন – প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষ এবং বিধানচন্দ্র রায়, উভয়কেই নিযুক্ত করেছিলেন, তৎকালীন রাজ্যপাল চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি দেশের সংবিধান কার্যকরী হওয়ার পর কেন্দ্র সরকার বাংলাকে পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা দেয়, ১৯৫২ সালে প্রথমবার বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত পশ্চিমবঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী হন বিধানচন্দ্র রায়, এই কারণেই তাঁকে অনেক ক্ষেত্রে বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী বলা হয়ে থাকে।

ভারতের সংবিধান মতে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বাদে সমস্ত রাজ্য অঙ্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত। রাজ্য আইনসভা মূলত দুই কক্ষ বিশিষ্ট - বিধান পরিষদ (Legislative Council) এবং বিধানসভা (Legislative Assembly)। এখানে উল্লেখ্য, অনেক অঙ্গরাজ্যেই বিধানপরিষদ তুলে দেওয়া হয়েছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। দেশের রাজধানী দিল্লিকে নিয়ে ২৮টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি রাজ্যে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা আছে। এর উচ্চকক্ষকে বিধান পরিষদ ও নিম্নকক্ষকে বিধানসভা বলে আর এই দু’টিকে একত্রে বলে 'বিধানমন্ডলী' বলে। স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যে এক কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা থাকলে তাকে শুধুমাত্র বিধানসভা বলা হয়। পশ্চিমবঙ্গে ১৯৬৯ সালের ১ অগস্ট বিধান পরিষদ অবলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছিল প্রস্তাব পাশ হওয়ার পর, তারপর ২০২১ সালে তা ফেরত আনার প্রয়াসে শীলমোহর করা হয়। বিধান পরিষদের কার্যকালের মেয়াদ হয় ৬ বছর। তবে রাজ্যে বিধানসভাই হলো সর্বশক্তিমান। বিধানসভা অঙ্গরাজ্যের প্রধান আইন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান। এর মেয়াদ পাঁচ বছর।