বর্ধমানে দিলীপ ঘোষ (Photo Credit: ANI)

কলকাতা, ২৮ নভেম্বর: লোকসভা নির্বাচনের আগে বাংলার মাঠে ঘাটে বক্তৃতা দিয়ে অমিত শাহ (Amit Shah) জনমনে পদ্মের মোহ জাগিয়েছিলেন। মাস ছয়েকের ব্যবধানে সেই মোহ ধুয়েমুছে একেবারে সাফ হয়ে গেল। গরু যতই সোনা দিক, পেটে লাথি পড়লে সেসব মানুষ শুনবে না। কেন্দ্রের একের পর এক নাটকীয় সিদ্ধান্ত মানুষের রুটিরুজিতে টান ধরিয়েছে। ব্যাংকে জমানো কষ্টার্জিত টাকা সরকার নিয়ে নেবে। সরকারি চাকরি বলে আর কিছু থাকবে না। পেঁয়াজ অগ্নিমূল্য। দিনের পর দিন ছাঁটাই। কর্মসংস্থান নেই। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি বাড়ছে, অথচ মানুষের চাকরি নেই। রেল বেসরকারি হবে, বিএসএনএল উঠে গেল। এয়ার ইন্ডিয়া, ভার পেট্রোলিয়াম বিক্রি হচ্ছে। আর কত সহ্য হয়।

বোঝার উপরে শাকের আঁটি ওই এনআরসি (NRC)। এ যে কত বড় বাঁশ, তা বাঙালির থেকে অনেক বেশি টের পাচ্ছে বঙ্গ বিজেপি। দুকোটি বাঙালিতে এনআরসি-র দৌলতে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করতে চেয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। উপনির্বাচনে সেই নিজের গড়েই ঘাড়ধাক্কা খেতে হল তাঁকে। মানুষের ভোটে জিতে কিনা মানুষকেই বের করে দেবে। ঘোষবাবুর দর্পকে একেবারে চূর্ণ করে দিল জনতার রায়। বার বার রাজ্যের মুসলিমদের প্রতি তাঁর বিজাতীয় বিদ্বেষ প্রকাশ্যে এসেছে। কাশ্মীরে মুর্শিদাবাদের শ্রমিকদের মৃত্যুর ঘটনায় দিলীপ ঘোষের উক্তি ছিল ওরা বাঙালি নয়। এদিন করিমপুরের প্রথম কটি রাউন্ডের ফল বেরোতে বলেন মুসলিমদের ভোট পাইনি। এবার ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতে যাব। সমাবেশে জনতার ঢল দেখে মনে হয়েছিল নবান্ন বোধহয় জয় করে ফেলেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসার জন্য আঁকুপাঁকু হৃদয়। দিলীপ ঘোষ ভুলে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুদিনের রাজনীতিক নন। আরও পড়ুন-Pradip Sarkar Wins Kharagpur Sadar: খড়গপুরে জোর ধাক্কা, দিলীপের গড়ে জয়ী তৃণমূল কংগ্রেস

৩৫ বছরের বাম শাসনকে চূর্ণ করতে তাঁকেও খাটতে হয়েছে। মানুষ এতটাও বোকা নয়। সিপিএমকে চিনতে বাংলার মানুষের ৩৪ বছর লেগেছে। তৃণমূলকে চিনতে আট বছর। আর কি চমক, বিজেপিকে চিনতে মাত্র ৬ মাস। অমিত শাহর সাড়া জাগানো বক্তৃতা, দেশভক্তির দোহাই, অযোধ্যার রামমন্দির, কাশ্মীরের ৩৭০ ধারার বিলোপ। এনআরসি-র সামনে সব ঘুমিয়ে পড়ল। গো-হারা হেরে এখন দিলীপবাবু বলছেন, তিনি রাজনীতির জন্য জন্মাননি। দল চাইলে পদত্যাগ করবেন।