শোভন চ্যাটার্জি। (Photo Credit: PTI)

কলকাতা, ১০ অগাস্ট: জোর জল্পনা ছিল পুজোর আগেই হয়তো বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চ্যাটার্জি (Sovan Chatterjee)। লোকসভা ভোটের আগে তীব্র দাম্পত্য কলহে মিডিয়ার শিরোনামে আসা প্রিয় কাননকে মেয়রের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি (Mamata Banerjee)। অভিমানে তৃণমূলের সঙ্গে আচমকা অনেকটা দূরত্ব তৈরি করেছিলেন শোভন। এদিকে, লোকসভায় মুকুল রায়ের স্ট্র্যাটেজিতে রাজ্যে বিজেপি-র চমকপ্রদ ফলের পর বঙ্গ রাজনীতিতে আলাদা সমীকরণ তৈরি হয়েছে।

আগে যেমন তৃণমূলে কোণঠাসা হয়ে গেলে রাজনৈতিক কেরিয়ার নিয়ে প্রশ্ন উঠত, এখন সেখানে বিজেপি-র উত্থানে বিষয়টা আচমকা পাল্টে গিয়েছে। দিদির দলে কোণঠাসা হলে এখন বিজেপি-তে গিয়ে পাল্টা দেওয়ার রাস্তা খোলা থাকছে। এমন অবস্থায় শোভনকে দলে টেনে বেহালায় নিজেদের প্রভাব বাড়াতে মরিয়া ছিল বিজেপি। আরও পড়ুন- ১৪৩ কেজি ওজন, উচ্চতা ৬.৬ ফুট- দৈতকায় অলরাউন্ডারকে কোহলিদের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে দলে রাখল ওয়েস্ট ইন্ডিজ

বেহালা পূর্ব কেন্দ্রের বিধায়ক শোভনকে নিয়ে একটা সময় উদাসিনই ছিলেন দিদি। তবে বিজেপি-কে ঝাঁপাতে দেখে কাননের ফুলকে ফের তৃণমূলের মালায় গাঁথতে উদ্যোগী হয়েছেন দিদি। সূত্রের খবর শনিবার বেলা ১২টা নাগাদ শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ফোন করেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। ফোনের কথা স্বীকার করেছেন শোভনও। ইঙ্গিত মিলেছে শোভনের সঙ্গে স্পিকারে বিমান বন্দ্য়োপাধ্যায়ের ফোনালাপে বরফ গলেছে। শোনা যাচ্ছে নিষ্ক্রিয়তা কাটিয়ে শোভনকে দলের হয়ে নেমে পড়ার জন্য অনুরোধ করেন বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। জোড়াফুল শিবিরের খবর, মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর থেকেই যে শোভন আর বিধানসভায় যাচ্ছেন না, সেই প্রসঙ্গও তোলেন বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের অন্দরের খবর, শোভনকে ফেরাতে একাধিক নেতাকে ময়দানে নামিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর মধ্যে রয়েছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এমনকী শোভনের বাড়ি গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখাও করেছেন বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায় ।

স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিংয়ে অনুপস্থিত থাকার কথাও টেনে আনেন। শোভনের অনুপস্থিতি নিয়ে স্ট্যান্ডিং কমিটির অন্যান্য সদস্যরাও যে আক্ষেপ করছেন, তাও বলেন বিমান। এই কথোপকথনের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি জানিয়েছেন, ''বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে বলেন, বিধানসভায় স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিং হচ্ছে। তুমি তো অনেকদিন ধরেই আসছ না। তুমি মিটিংয়ে যোগ দাও।''

রাজনৈতিক মহলের মতে, অর্জুন সিং, সৌমিত্র খাঁ-দের দল ছেড়ে বিজেপির টিকিটে জিতে আসার ঘটনায় তৃণমূল বিক্ষুব্ধদের ওপর নজর দিচ্ছে। একটা সময় তৃণমূলে বিক্ষুব্ধ, অভিমানীদের কথা না শোনার যে রেওয়াজটা চালু হয়েছিল, লোকসভা বড় ধাক্কার পর সেটা বন্ধ হয়েছে। তার ওপর আবার যেহেতু লোকসভায় ধাক্কার প্রদান কারণটাই দলের বিক্ষুব্ধদের সংখ্যাটা অনেকটা বেড়ে যাওয়া তাই দিদি চাইছেন সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলতে। শোভনের কাছে যদিও বিজেপি-র প্রস্তাব আছে। অন্তত এমনটাই রিপোর্টে প্রকাশ।

বেহালার রাজনীতিতে শোভনের বড় ভূমিকা আছে। তৃণমূলের দক্ষিণ ২৪ পরগনার সভাপতি থাকার সূত্রেও শোভনের প্রভাব পুরো জেলাজুড়েই আছে। গোটা রাজ্যে দারুণ ফল হলেও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় দাঁত ফোটাতে পারেনি বিজেপি। আর তাই শোভনকে চাইছে বিজেপি। দিদি তাই সতর্ক হয়ে কাননকে তাঁর বাগানে ফিরতে বলছেন। এখন সময়ই বলবে শোভন কী করবেন।