দুর্গাপুর, ৫ আগস্ট: জন্মের তিনদিনের মাথায় জটিল রোগ কেড়ে নিয়েছে সন্তানসুখ। তবুও প্রিয়জনকে বাঁচিয়ে রাখতে একরত্তির কর্নিয়া দান করলেন বাবা মা। অভিনব ঘটনাটি ঘটেছে দুর্গাপুরের এক বেসরাকরি হাসপাতালে। দুর্গাপুরের ওই হাসপাতালে শুক্রবার পুত্র সন্তানের জন্ম দেন গৃহবধূ দীপান্বিতা পান। তাঁর শ্বশুরবাড়ি পশ্চিম বর্ধমানের অন্ডালে। বাপের বাড়ি আউশ গ্রামে। ছেলেকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ দীপান্বিতাদেবী এখন রয়েছেন বাপের বাড়িতে। জন্মের পরেই হাসপাতালের ডাক্তারবাবুরা জানিয়েছিলেন অ্যামোনিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচক তৈরি হচ্ছে না সদ্যোজাতের শরীরে। বাঁচার সম্ভাবনা বেশ কম। আরও পড়ুন-College Square Pool: ফিরল দু বছর আগের দুর্ঘটনার স্মৃতি, কলেজ স্কোয়ারের পুলে তলিয়ে গেল ১৭ বছরের কিশোর, কলেজ স্কোয়ারে সাঁতার বন্ধ হল
জানা যায়, অ্যামোনিয়া বেড়ে যাওয়ার কারণে হৃদযন্ত্র বিকল ও ‘ব্রেন ডেথ’ হয়ে রবিবার সকালে মৃত্যু হয় শিশুটির। ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন পানদম্পতি। এদিকে ছেলের শোকে কাতর বাবা অরূপ পানের দিদি মিঠু পান ওই হাসপাতলেই কাজ করেন। তাঁর উদ্যোগেই এই কর্নিয়া দানের কাজটি সম্পন্ন হয়েছে। তিনিই ভাই অরূপবাবুকে বিষয়টি বলেছিলেন। অসুস্থ সন্তানের মৃত্যেুতে তখন তাঁর মাথার ঠিক নেই, দিদির কথায় সাদ দিয়েও স্ত্রীর মতামত জেনে নিতে বলেন। ওই গৃহবধূও এই উদ্যোগে অরাজি হননি। এরপর দুর্গাপুর ব্লাইন্ড রিলিফ সোসাইটিকে খবর দেওয়া হয়। তাদের কর্মীরা দুপুরে হাসপাতালে এসে কর্নিয়া সংগ্রহ করেন। সেটি আরআইও-তে পাঠানো হয়েছে। এত কমবয়সি কারও কর্নিয়া এ রাজ্যে তো বটেই, এ দেশেও কোথাও সংগৃহীত হয়নি বলে দাবি ‘দুর্গাপুর ব্লাইন্ড রিলিফ সোসাইটি’র কর্তাদের। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব অপথালমোলজির (আরআইও) কর্নিয়া বিভাগের প্রধান জয়ন্ত দত্তও বলেন, ‘‘যত দিন কাজ করছি, এত কমবয়সি কারও কর্নিয়া দান, শুনিনি।’’
অন্ডাল নর্থ বাজারের ক্ষুদিরাম পল্লির বাসিন্দা অরূপ কাঁচরাপাড়া রেল ওয়র্কশপে কাজ করেন। তিনদিনের ছেলের কর্নিয়া দান করে তিনি য়ে বিরাট বড় কাজ করেছেন, এমন ভাবনার মতো মানসিক অবস্থা তাঁর নেই। ওই গৃহবধূর দাবি, সন্তানসুখ তো কপালে সইল না। তবুও তার কোনও অঙ্গ এই পৃথিবীতে জীবন্ত থাকবে, এই আশাতেই মেনে নিয়েছি।