Durga Puja 2025 (Photo Credit: FB)

পার্থ প্রতিম চন্দ্র: Durga Puja AI Models: কলকাতার বড় পুজোগুলির সামনে ইতিমধ্যেই পড়ে গিয়েছে হোর্ডিং, ব্যানার। সন্ধ্যা নামলেই বেশ কয়েকটি জায়গায় এলইডি বিজ্ঞাপনের আলোয় রঙিন হয়ে যাচ্ছে শহর। পুজোর এই আবহে একটা জিনিস বেশ নজরে পড়েছে। তা হল বিজ্ঞাপনের ফেস্টুন, হোর্ডিং, ব্যানারে এখন Artificial Intelligence বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মডেলদের দাপট। মুখের ক্রিম, চুল বা ত্বকের নানা প্রসাধনীর বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনে দেখা যাচ্ছে কোনও সুন্দরী মডেল বা অভিনেত্রীরা নন, বরং AI-এর মাধ্যমে জেনারেট করা রোবট সুন্দরীদের। দূর থেকে দেখলে নিখুঁত মডেল মনে হলেও ভাল করে তাকালে বোঝা যাচ্ছে, এগুলি কোনও তারকা বা মডেলের ছবি নয়, বরং ChatGPT, Gemini-র মতো টুল ব্যবহার করে তৈরি এআই জেনারেটেড ছবি। দক্ষিণ কলকাতার জনপ্রিয় এক দুর্গাপুজো প্য়ান্ডেলের কিছুটা দূরে দেখা গেল, হোর্ডিংয়ে থাকা সাতটি বিজ্ঞাপনের মধ্য়ে অন্তত ২টি-তে এআই মডেল ব্যবহার করা হয়েছে।

AI মডেলদের নিয়ে বিজ্ঞাপনের সুবিধা

বিজ্ঞাপনে এআই মডেলের ব্যবহারের ফলে সময় ও অর্থ দুটোই কম লাগছে। এক পলকে দ্রুত ধরাও যাচ্ছে না বিষয়টি। উপরন্তু কিছু ক্ষেত্রে একটু অস্বাভাবিক দেখাচ্ছে বলে রোবট সুন্দরীরা চোখও টানছে।

AI আর ভবিষ্যত নয়, বরং ট্রেন্ড

শহরের এক তথ্যপ্রযুক্তি বিশারদ বলছেন, এতদিন মনে করা হত এটা ভবিষ্যত, কিন্তু কলকাতার এবারের পুজোর বিজ্ঞাপনে যেভাবে এআই জেনারেটেড মডেলদের ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে তা প্রমাণ করছে এটাই ট্রেন্ড। বিজ্ঞাপনে এআই ব্যবহার করায় খরচ অনেক কমে গিয়েছে, দ্রুতও কাজ হচ্ছে। আগে যেখানে মাসখানেক সময় লাগত, এখন একই বিজ্ঞাপন দক্ষ এআই অপারেটর মাত্র ১ ঘণ্টায় বানিয়ে ফেলতে পারে। দাবি, এতে ব্র্যান্ডগুলির খরচ অর্ধেকেরও বেশি কমছে এবং বিজ্ঞাপন তৈরির সময়সীমা ৪-৬ সপ্তাহ থেকে নেমে আসছে ২-৩ দিনে। যদিও মডেল সংস্থাগুলির দাবি, এই প্রবণতা প্রকৃত মডেলদের কর্মসংস্থানকে হুমকির মুখে ফেলছে। আগামী দিনে বাংলায় বেশিরভাগ বিজ্ঞাপনই Artificial Intelligence-এর মাধ্যমে করা হবে বলে দাবি তাঁর।

দেখুন শহরের রাস্তায় এলইডি স্ক্রিনে বিজ্ঞাপন

আগামী দিনে বেশিরভাগ ভিডিও বিজ্ঞাপনও পুরোপুরি AI-র মাধ্যমে তৈরি হবে

AI-র মাধ্যমে জেনারেট করা ভিডিও-র খরচ ও সময় অনেক কম। সঙ্গে ঝামেলাও একেবারে কম লাগে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বোঝালেন, ধরা যাক, একটা বিজ্ঞাপন করতে হবে যেখানে দুর্গাপুজোয় একটি মেয়ে বিভিন্ন পোশাকে কখনও শ্রীভূমি, তো কখনও একডালিয়া-চেতলা অগ্রণী, আবার কখনও টালা কিংবা বেহালার প্য়ান্ডেলে ঘুরছেন। ৪০-৫০ সেকেন্ডের এই বিজ্ঞাপনটি অ্যারেঞ্জ, শ্যুট, এডিট, কালার ও শেষ পর্যন্ত এয়ার হতে অন্তত মাসখানেক ও অনেক টাকার প্রয়োজন। কিন্তু এই বিজ্ঞাপনটি চোখধাঁধানো ফ্রেমে কোনও দক্ষ AI অপারেট করতে জানা দক্ষ কর্মী মাত্র ১ ঘণ্টার মধ্যেই করে ফেলতে পারে।

AI মডেলে কোণঠাসা বাস্তবের মডেলরা?

কিন্তু আলোর ওইদিকের অন্ধকারটাও বেশ স্পষ্ট। শহরের বিজ্ঞাপনী পাড়াতে ঢুঁ দিলেই বোঝা যায়, করোনার পর এই বাজার তো ফেরেইনি, বরং ধস নামছে। যাদবপুরের এক পোস্ট প্রোডাকশন স্টুডিওর মালিক জানালেন, বছর পাঁচেক আগেও পুজোর মাসখানেক আগে থেকে এত বিজ্ঞাপন ও পুজো সংক্রান্ত নানা কাজ আসত যে রাতের পর রাত জাগতে হত তাদের। কিন্তু এখন পুজোর বাজারে বিজ্ঞাপনের কাজ বেশ কমেছে। একে বাজার খারাপ, তার ওপর আবার AI 'দোসর। রুমা রায় নামের শহরের এক মডেল আমাদের কাছ থেকে এই খবর শুনে বললেন, "বিষয়টা আমারও নজরে পড়ছে। এখনিই আমাদের ওপর এটা কতটা প্রভাব ফেলছে তা বলতে পারব না। তবে এটা বুঝেছি এখন আমাদের লড়াইটা আর্টিফিসিয়াল বিউটির সঙ্গেও।"

AI মডেলরা বাস্তবের মডেলদের বিকল্প নয়?

মডেলিং সংস্থাগুলির দাবি, এবার পুজোয় গতবারের চেয়ে বাজার কিছুটা ফিরেছে ঠিকই, কিন্তু এআই মডেলের বিষয় কিছুটা হলেও পড়েছে। তবে তাদের দাবি, বড় হাউসগুলি কখনই আসল মডেল কিংবা তারকাদের ছেড়ে রোবট সুন্দরীদের ব্যবহার করবে না।

দুনিয়াজুড়ে বিজ্ঞাপনে AI-এর ব্যবহার

কোকা-কোলা, ইউনিলিভার, জালান্দো, এইচএম সহ বিশ্বের নামিদামি বেশ কিছু বহুজাতিক কোম্পানি তাদের বিজ্ঞাপনের প্রচারে এআই ব্যবহার করছে। এখনব বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞাপন শিল্পে রোবট বা এআই মডেলের ব্যবহার নজরকাড়া। উদাহরণস্বরূপ, ইউরোপের জনপ্রিয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড Balmain ইতিমধ্যেই “Virtual Army” নামে এআই-জেনারেটেড মডেল ব্যবহার করছে তাদের ক্যাম্পেইনে। আমেরিকার একটি স্কিনকেয়ার কোম্পানি Prose এআই মডেলের মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন জাতি ও বয়সের চেহারা তৈরি করে কাস্টমারদের কাছে পণ্য তুলে ধরছে। জাপানে একটি টেক কোম্পানি তাদের নতুন স্মার্টফোনের বিজ্ঞাপনে সম্পূর্ণ এআই মডেল ব্যবহার করেছে, যাতে প্রতিটি দৃশ্য নিখুঁতভাবে তৈরি হয়েছে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে।

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

এখানেই উঠছে প্রশ্ন, তাহলে কি আগামী দিনে রোবট সঙ্কটে ভুগতে চলেছে কলকাতার বিজ্ঞাপনী বাজার। অনেকেই বলছেন, এআই মডেলরা কখনই মানুষের বিকল্প হতে পারে না। তবে এটাও ঠিক, এবারের পুজোয় বেশ কিছু হোর্ডিংয়ে ব্যবহার করা AI মডেলরা কিন্তু অন্য কথাই বলছে। এআই সুন্দরীরা এখনও বিকল্প না হন, কিন্তু নজর যে কাড়ছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাস্তব মডেল ও রোবট মডেল একসঙ্গে মিলেই ভবিষ্যতের বিজ্ঞাপন শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বাকিটা বলবে, ভবিষ্যত। এখন এটুকু বলা যায়, তিলোত্তমার পুজোয় রোবটের যুগ শুরু হয়ে গিয়েছে।