
পার্থ প্রতিম চন্দ্র: ফিটনেসের প্রশ্নে তিনি এখনও দেশের ক্রিকেটার। এই ফর্ম, ফিটনেসে ক্রিকেটের আসল ফর্ম্যাটে অবসরের তেমন কোনও দরকার ছিল না। অন্তত এমনটাই মনে করছেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)-র ভক্তরা। কিন্তু এমনভাবে আচমকা কেন পাঁচদিনের ক্রিকেটের অবসর নিলেন কোহলি। শোনা যাচ্ছে নানা কারণ। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কোহলির টেস্ট থেকে অবসরের পাঁচটি সম্ভাব্য কারণ--
১) অবসরের প্রশ্নে 'হোয়েন নয় হোয়াই'তত্ত্বে বিশ্বাসী কোহলি:
অবসর নেওয়ার বিষয়ে কয়েক জন বিশ্বাস করেন, 'হোয়েন নয় হোয়াই'তত্ত্ব। যে তত্ত্বটা হল 'তুমি কবে অবসর নেবের চেয়ে, তুমি কেন অবসর নিলে' এই বিষয়টিকে বেশী জোর দেওয়া। কখনও যেন কেউ প্রশ্ন না করে, তুমি কবে অবসর নেবে, তুমি দলের বোঝা। তার চেয়ে এই বিষয়ে অনেক ভাল এটা শোনা, তুমি কেন অবসর নিলে? ঠিক এখন যেটা বিরাট কোহলিকে সবাই বলছেন। সুনীল গাভাসকরের মত কিংবদন্তিরা যেটা বিশ্বাস করতেন। কোহলিও সেই পথে হাঁটলেন। নিজের মধ্যে আরও কয়েক বছর ক্রিকেট থাকলেও টেস্টে নতুনদের জায়গা ছেড়ে দিলেন। দেশের অধিনায়কত্ব ছাড়ার সময়েও কোহলি ঠিক এই কাজটাই করেছিলেন। আরও পড়ুন-দেশকে টানা ৪২ মাস শীর্ষস্থানে রাখা ক্যাপ্টেন কোহলিকে কুর্নিশ বোর্ডের
২) ছাড়ব, বয়স হয়েছে মানসিকতাটা চলে এসেছিল:
বিরাট কোহলির গত বেশ কয়েক মাসের কথা শুনেই মনে হচ্ছিল, তিনি নিজেকে বুড়োর দলে ফেলছেন। গত বছর টি-২০ বিশ্বকাপ জয়ের পর নাচের অনুরোধ ফিরিয়ে বলেছিলেন, এখন আর ওসব নয়, আমার বয়স হয়েছে। কোহলির বেশ কয়েকটি ইন্টারভিউতে অবসরের ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। কোহলিকে যারা কাছ থেকে চেনেন ,তারা আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ওর মধ্যে কেমন একটা বুড়ো বুড়ো ভাব চলে এসেছে। অথচ ও যে কোনও তরুণের চেয়ে ফিট, এখনও ওর মধ্যে অনেক ক্রিকেট বাকি আছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোহলি ছেড়েই দিলেন।
৩) নিজের মত ওয়ার্ক শিডিউল সাজাতে চেয়েছিলেন:
কোহলি চেয়েছিলেন, ঠাসা ক্রীড়াসূচির মাঝে নিজের মত করে ওয়ার্ক শিডিউল সামলাবেন। মানে বেছে বেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলবেন। সেইভাবে তিনি ধকল সামলাবেন। কিন্তু টেস্টে টিম ইন্ডিয়ার পারফরম্যান্স সীমিত ওভারের চেয়ে বেশ খারাপ। বোর্ড কর্তাদের কড়া অনুরোধ টেস্টে কোনও বিশ্রাম নয়। খেলতে হবে ঘরোয়া ক্রিকেটেও। সেইমত ১৩ বছর পর রঞ্জি ট্রফিতেও খেলতে নেমেছিলেন। কিন্তু এই বিষয়টিতে বিরক্ত হওয়ায়ও টেস্টে কোহলির অবসরের একটা কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
৪) মানসিক ধকলটা নিতে পারছিলেন না:
ভারতীয় ক্রিকেটে আগের চেয়ে অনেক অর্থ এসেছে। আগের চেয়ে মিডিয়ায় প্রচারও অনেক। ক্রিকেটারদের নিয়ে এখন প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি বল, প্রতিটি মুহূর্তে কাটাছেঁড়া চলে। মিডিয়ার সঙ্গে রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার চাপও। কখনও রান না পেলেই শুধু তিনি নন, তাঁর স্ত্রী অনুষ্কা শর্মা-কে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় জোর সমালোচনা হয়। সব দিক থেকে মানসিক চাপটা ক্রিকেটের গুরুত্বপূর্ণ ফর্ম্যাটটা ছাড়তে বাধ্য করল কোহলিকে।
৫) অস্ট্রেলিয়া সফরের ব্যর্থতাটা হৃদয়ে নেন কোহলি:
ক্রিকেট জীবনে সাফল্যের সঙ্গে ব্যর্থতাও আসে। গত বছরের শেষে অস্ট্রেলিয়া সফরটা খুব গুরত্ব দিয়েছিলেন। খারাপ খেলেননি, কিন্তু দু একটা খারাপ শট আর সিদ্ধান্তে ডুবেছিলেন কোহলি। সেই ব্যর্থতাটা হৃদয়ে নিয়ে শেষ পর্যন্ত টেস্ট ছাড়লেন।
৬) ফিরে আসার ইচ্ছাটা কমে এসেছিল:
টেস্টে সাম্প্রতিক কালে বিরাট কোহলির ফর্মটা তেমন ভাল ছিল না। কিন্তু এর আগেও খারাপ ফর্ম কাটিয়ে দারুণভাবে ফিরে এসেছিলেন কোহলি। কিন্তু ৩৬ বছর বয়েসে সেটা আর করতে চাইলেন। আসলে ফিরে আসার ইচ্ছাটা কমে এসে, 'অনেক হয়েছে' মানসিকতটা ঘিরে ধরেছিল বিরাটকে।
৭) পাখির চোখ ২০২৭ বিশ্বকাপ:
আরও একটা ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিততে মরিয়া কোহলি। ২০২৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারের পর বিরাট চেয়েছিলেন, এই হারের শোধ নিয়ে কাপ হাতে তুলবেন। ওয়ানডে ক্রিকেট কেরিয়ার দীর্ঘায়িত করতে চেয়ে টেস্ট ছাড়লেন কোহলি। এর আগে ২০২৪ টি-২০ বিশ্বকাপের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফর্ম্যাটে খেলা ছেড়ে ছিলেন কোহলি।