গত বছর এআইএফএফ-এর সভাপতি পদে হেরে যাওয়া ভারতীয় ফুটবল আইকন বাইচুং ভুটিয়া (Bhaichung Bhutia) বুধবার গভর্নিং বডির বর্তমান সভাপতি কল্যাণ চৌবেকে (Kalyan Chaubey) তীব্র আক্রমণ করেন। এআইএফএফ-এর সেক্রেটারি জেনারেল শাজি প্রভাকরণকে 'আস্থার অভাবে' (Shaji Prabhakaran) সরিয়ে দেওয়ার পরই প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সমালোচনা শুরু করেছেন। ভুটিয়ার দাবি, প্রভাকরণকে 'বলির পাঁঠা' বানিয়েছে চৌবের নেতৃত্বাধীন সংস্থা। নির্বাচন হলেই ভারতীয় ফুটবলকে বাঁচানো সম্ভব। গ্যাংটক থেকে সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে ভুটিয়া বলেন, "বিশ্বাসভঙ্গের বিষয়টি শুধু শাজির উপরই নয়, সভাপতি, সহ-সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ সহ এআইএফএফ-এর সমস্ত সদস্যের উপর হওয়া উচিত।" তিনি প্রশ্ন তোলেন "কোথায় এই ভাঙন ঘটেছে, এই ভাঙনটা কী, সবাই জানতে চায়? সব বড় সিদ্ধান্তই সদস্যদের যৌথ উদ্যোগে নেওয়া হয়।" AIFF General Secretary Sacked: আস্থার ঘাটতি! সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের মহাসচিব শাজি প্রভাকরনকে বরখাস্ত
২০২৭ এএফসি এশিয়ান গেমসের দৌড় থেকে সরে যাওয়া এবং চীনে এশিয়ান গেমসের সাম্প্রতিক বিশৃঙ্খলার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, যেখানে ভারতীয় দল তাদের প্রথম ম্যাচের মাত্র একদিন আগে পৌঁছেছিল এটিও এআইএফএফ-এর সিদ্ধান্তের ফল বলে জানান তিনি। বাইচুং বলেন, 'প্রতিবারই সভাপতি ও সচিব একসঙ্গে এশিয়া কাপ আয়োজনের জন্য এশিয়ান গেমস ও বিড প্রত্যাহারসহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু তারা এখানে শাজিকে বলির পাঁঠা বানিয়ে দিচ্ছে। এই বিশৃঙ্খলার জন্য পুরো টিম, সভাপতি, মহাসচিব, সহ-সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ দায়ী। সবার যাওয়া উচিত এবং নতুন সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হওয়া উচিত শাজির বরখাস্তে আমি বিস্মিত নই। নতুন ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ব্যাপক অব্যবস্থাপনা দেখা দিয়েছে বলে দাবি করেন ভুটিয়ার।
চৌবে, যিনি কয়েক বছর আগে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দেন, সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের ৮৫ বছরের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় থেকে সভাপতি হওয়া ভুটিয়াকে গত বছর ২ সেপ্টেম্বর ৩৪ টির মধ্যে ৩৩ ভোটে পরাজিত করেন। 'তৃতীয় পক্ষের অযৌক্তিক প্রভাবের' জন্য ফিফা ভারতের জাতীয় ফেডারেশনকে স্থগিত করার পর থেকে এই নির্বাচনটি উল্লেখযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ তাঁর ফলে অনূর্ধ্ব-১৭ মহিলা বিশ্বকাপের আয়োজন অনুমতি দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিল বিশ্ব ফুটবল সংস্থা। কিন্তু নির্বাচন হওয়ার পর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়, যার ফলে গত বছর অক্টোবরে ভারতকে টুর্নামেন্ট আয়োজনের সুযোগ দেওয়া হয়।
এই নির্বাচনকে 'অস্থায়ী নির্বাচন' বলে উল্লেখ করে ভূটিয়া বলেন, "সেই সময় যে নির্বাচন হয়েছিল তা ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের জন্য একটি অস্থায়ী নির্বাচন ছিল এবং নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এটি একটি অন্তর্বর্তীকালীন সংস্থা যা এখন ক্ষমতায় আছে। সুপ্রিম কোর্ট নতুন সংবিধান তৈরি করেছে। একটা মামলা চলছে, সেটা অনুমোদনও হয়ে গেছে। তাই আমি মনে করি, ওই সংবিধানের অধীনে অবিলম্বে নির্বাচন হওয়া উচিত। ভারতীয় ফুটবলকে বাঁচানোর এটাই একমাত্র উপায়।" সংবিধান ছিল না বলেই আগের নির্বাচন স্থায়ী হয়নি। শুধু নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য তারা একটি খসড়া তৈরি করেছিল বলে দাবি করেছেন ভুটিয়া।
তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে ঘরের মাঠের বাইরে খেলার সময় ব্লু টাইগারদের পারফরম্যান্স বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পারফরম্যান্সের নিরিখে ভারতের মাটিতে ২-৩টি ম্যাচ জেতা ছাড়াও তারা (ভারতের বাইরে) যত টুর্নামেন্ট খেলেছে, সবগুলোই বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। তবে এ বছর ঘরের মাঠে ত্রিদেশীয় সিরিজ, ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ ও সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে ইগর স্টিমাচ-কোচের দল। কিন্তু কিংস কাপের উদ্বোধনী রাউন্ডের খেলায় ইরাকের কাছে পেনাল্টি থেকে হেরে যায় ভারত এবং গত মাসে ম্যারডেকা কাপে মালয়েশিয়ার কাছে ২-৪ গোলে হেরে বিদায় নেয় তারা।