কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে লুসেইল স্টেডিয়ামে নামছে আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স। লিওনেল মেসি তাঁর বর্ণময় কেরিয়ারে বিশ্বকাপ জিততে পারেন, নাকি টানা দুবার বিশ্বকাপ জিতে নজির গড়েন ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপে সেটা দেখার।
আজ যদি ফ্রান্সকে হারিয়ে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিততে পারে, তাহলে চারটে বিশ্বকাপ পর দক্ষিণ আমেরিকায় যাবে কাপ। ২০০২ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল লাতিন আমেরিকার সুপার পাওয়ার দেশ ব্রাজিল। এরপর ২০০৬-এ ইতালি, ২০১০-এ স্পেন, ২০১৪-এ জার্মানি, ও ২০১৮-এ ফ্রান্স বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়। এদিন, ফরাসিরা জিতলে টানা পাঁচটা বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে নজির গড়বে ইউরোপ।
কতটা জমজমাট হতে পারে ফাইনাল? ফাইনাল আবার টাইব্রেকারে গড়াবে না তো? কতগুলো গোল হবে ফাইনালে? আসুন দেখে নেওয়া যাক অতীতের দিকে।
বিশ্বকাপ ফুটবল ফাইনালে যত রেকর্ড-
১) ইতালির বিখ্যাত গোলকিপার দিনো জোফ ৪০ বছর ১৩৩ দিন বয়সে ১৯৮২ বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেন। পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে সেবার বিশ্বকাপ জিতেছিলে জোফ-রোসির ইতালি। এত বেশী বয়সে বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার নজির নেই।
২) ১৯৫৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে মাত্র ১৭ বছরে সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে গোল করার নজির গড়েছিলেন ব্রাজিলের কিংবদন্তি পেলে। সেই ফাইনালেই ৩৫ বছর ২৬৪ দিন বয়েসে গোল করেন সুইডেনের নিলস লাইডহোম। বিশ্বকাপের ফাইনালে সবচেয়ে বেশি বয়েসে গোল করার রেকর্ড এটাই।
৩) বিশ্বকাপের ফাইনালে মাত্র একবারই হ্যাটট্রিক হয়। সেটি করেন ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি ফুটবলার জিওফ হার্স্ট। ফাইনালে পশ্চিম জার্মানিকে ৪-২ গোলে হারিয়ে কাপ জিতেছিল ইংল্যান্ড।
৪) বিশ্বকাপ ফাইনালে দ্রুততম গোলের রেকর্ড নেদারল্যান্ডসের জোহান নেসকেনসের। পশ্চিম জার্মানির বিরুদ্ধে ১৯৭৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে মাত্র ৯০ সেকেন্ডে গোল করেছিলেন ডাচ ফুটবলার জোহান। শেষ পর্যন্ত অবশ্য নেদারল্যান্ডসকে ২-১ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিল জার্মানি।
৫) বিশ্বকাপ ফাইনালে সবচেয়ে বেশী গোল হওয়ার রেকর্ড ১৯৫৮ সালে। ১৯৫৮ বিশ্বকাপের ফাইনলে খেলেছিল ব্রাজিল-সুইডেন। ম্যাচে মোট ৭টা গোল হয়েছিল। ব্রাজিল ৫-২ গোলে হারিয়েছিল সুইডিশদের। এর ছাড়াও ১৯৩০ বিশ্বকাপের ফাইনালে উরুগুয়ে-আর্জেন্টিনা, ১৯৩৮ সালে ইতালি-হাঙ্গেরি ফাইনালে, ও ২০১৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়া ম্য়াচ, তিনটি ফাইনালেই ৬টা গোল হয়েছিল।
৬) বিশ্বকাপের ফাইনালে মাত্র একবারই গোলশূন্য অবস্থায় শেষ হয়ে টাইব্রেকারে গড়ায়। সেটা ছিল ১৯৯৪ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে। ব্রাজিল-ইতালি ফাইনাল ম্যাচ গোলশূন্য অবস্থায় শেষ হওয়ার পর টাইব্রেকারে শেষ হাসি হেসে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন রোমারিও-বেবেতোর ব্রাজিল। ২০১০ বিশ্বকাপের ফাইনালে স্পেন-নেদারল্যান্ডস ম্যাচ ১১৫ মিনিট পর্যন্ত গোলশূন্য ছিল। টাইব্রেকার হওয়ার মিনিট চারেক আগে স্পেনকে বিশ্বকাপ জেতানো গোলটা করেছিলেন আন্দ্রে ইনিয়েস্তা।
৭) বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে একপেশে ফাইনাল হিসেবে ধরা হয় তিনটি ম্যাচকে। ১৯৫৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে ব্রাজিল (৫), সুইডেন (২), ১৯৭০ বিশ্বকাপে ব্রাজিল ৪-১ ইতালি, আর ১৯৯৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্স ৩-০ গোলে হারায় ব্রাজিলকে।
৮) কতগুলো বিশ্বকাপের ফাইনাল এক্সট্রা টাইমে গড়ায়? ২০টা বিশ্বকাপের মধ্যে সাতবার ম্যাচ এক্সট্রা টাইমে গড়ায়। প্রথমবার বিশ্বকাপের ফাইনাল নির্ধারিত সময়ে ফয়সালা না হওয়ায় এক্সট্রা টাইমে গড়ায় ১৯৩৪ সালে। ইতালি সেই ফাইনাল ২-১ হারায় চেকস্লোভাকিয়াকে।
৯) কতগুলো বিশ্বকাপ ফাইনাল টাইব্রেকারে গড়ায়। ২টি বিশ্বকাপ। ১৯৯৪ ও ২০০৬। ১৯৯৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে ব্রাজিল টাইব্রেকারে হারায় ইতালিকে। আর ২০০৬ বিশ্বকাপে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে কাপ জেতে ইতালি।
১০) আজ পর্যন্ত বিশ্বের মোট ১৩টি দেশ অন্তত একবার বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছে। সেখানে বিশ্বের মোট ৭৯টি দেশ আজ পর্যন্ত ফুটবল বিশ্বকাপের মুলপর্বে খেলেছে। তিনবার বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেও কখনও কাপ জিততে পারেনি নেদারল্যান্ডস। হাঙ্গেরি, সুইডেন, চেকস্লোভাকিয়া, ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলে কখনও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। ব্রাজিল (১৯৫৮,৬২,৭০,৯৪,২০০২) সর্বাধিক ৫বার বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ইতালি (১৯৩৪,১৯৩৮, ২০০৬) ও জার্মানি (১৯৫৪, ১৯৭৪,১৯৯০,২০১৮) ৪বার করে বিশ্বকাপ জিতেছে। আজ আর্জেন্টিনা (১৯৭৮,৮৬) বা ফ্রান্স (১৯৯৮,২০০৬) যারাই কাপ জিতুক তারা তৃতীয় বার বিশ্বকাপ জিতবে। উরুগুয়ে ১৯৩০ ও ১৯৫০ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়। স্পেন (২০১০), ইংল্যান্ড (১৯৬৬) একবার করে বিশ্বকাপ জিতেছে।