Huajiang Grand Canyon Bridge. (Photo Credits:X)

World Tallest Bridge: আবারও চমকে দিল চিন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজারেরও বেশি উপরে ব্রিজ করে বিশ্বরেকর্ড গড়ল ড্রাগনের দেশ। চিনের হুয়াজিয়াং গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ব্রিজ (Huajiang Grand Canyon Bridge), যা এখন বিশ্বের সর্বোচ্চ ব্রিজ সেতু, সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে আজ, রবিবার থেকে সাধারণ মানুষদের জন্য খুলে গেল। গত ২৮ সেপ্টেম্বর চিনের গুইঝোউ প্রদেশে (Guizhou) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয়েছিল 'হুয়াজিয়াং গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ব্রিজ'। যা এখন বিশ্বের সর্বোচ্চ সেতু হিসেবে স্বীকৃতি পেল। ব্রিজটির ডেক ডেক নদীর তলদেশ থেকে ৬২৫ মিটার (২,০৫১ ফুট) উপরে অবস্থিত। এই ব্রিজটির ফলে দু ঘণ্টার দূরত্ব মাত্র দুই মধ্যেই শেষ হচ্ছে। এর আগে এই বিশ্বরেকর্ড ছিল 'দুজে ব্রিজ'-র দখলে। দুজে ব্রিজ এর চেয়ে ২০০ মিটারেরও চেয়েও বেশি উঁচু হুয়াজিয়াং গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ব্রিজ।

দুটি আইফেল টাওয়ারের চেয়েও ৩৩০ মিটার উঁচুতে তৈরি হয়েছে এই ব্রিজটি

হুয়াজিয়াং গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ব্রিজ প্যারিসের দুটি আইফেল টাওয়ার (৩৩০ মিটার) বা ৯টি গোল্ডেন গেট ব্রিজ (৬৭ মিটার) একটির উপর আরেকটি বসানো সম্ভব! ব্রিজটির ৬২৫ মিটার ওপরে নির্মিত একটি রেস্তোরাঁ থেকে দর্শনার্থীরা উপভোগ করতে পারবেন মেঘ ছোঁয়া দৃশ্য। সেখানে পৌঁছানো যাবে হাই-স্পিড 'গ্লাস এলিভেটর' দিয়ে। এই সাফল্য আবারও প্রমাণ করল চিনের ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতা। বেইপান নদীর উপর দিয়ে ৬২৫ মিটার উঁচু ও মোট ২,৮৯০ মিটার দীর্ঘ এই সেতু, যার প্রধান ঝুলন্ত অংশ ১ হাজার ৪২০ মিটার। এখন দুই তীরের দূরত্ব পেরোতে সময় লাগে আগের দুই ঘণ্টা থেকে কমে মাত্র দুই মিনিট।

দেখুন রাতের আলোয় এই ব্রিজটির ভিডিও

ব্যবহার করা হয়েছে AI মনিটারিং সিস্টেম

গুইঝো প্রদেশের দুর্গম 'হুয়াজিয়াং ক্যানিয়ন' জুড়ে বিস্তৃত এই সেতুটি 'ঝেনফেং' ও 'গুয়ানলিং' কাউন্টিকে যুক্ত করেছে। কঠিন ভূপ্রকৃতি দীর্ঘদিন ধরে এলাকাটিকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। পুরো ব্রিজটির দৈর্ঘ্য ২ হাজার ৯৮০ মিটার। যার মধ্যে প্রধান ঝুলন্ত অংশ ১ হাজার ৪২০ মিটার। যা পাহাড়ি অঞ্চলের অন্যতম দীর্ঘ স্টিল ট্রাস সেতু। দুটি অসম টাওয়ারে দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি একটির উচ্চতা ২৬২ মিটার, অন্যটির ২০৫ মিটার। ভূমিকম্প ও প্রবল হাওয়া সামলাতে বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। দুর্গম পরিবেশে এত বড় ব্রিজটি তৈরি হতে চিন সময় নিয়েছে চার বছরেরও কম। আর সেটা সম্ভব হয়েছে ব্রিজটি করার জন্য এআই মনিটরিং সিস্টেম। ব্যবহৃত হয়েছে ড্রোন, প্রি-ফ্যাব্রিকেশন টেকনোলজি। ২০২২ সাল থেকে শুরু হওয়া ব্রিজটির নির্মাণের গতি ও মান দুটোই বাড়িয়েছে প্রি-ফ্যাব্রিকেশন টেকনোলজি ও AI মনিটারিং সিস্টেমের সৌজন্যে।

দেখুন দুনিয়ার সেই উচ্চতম ব্রিজটি

ব্রিজটি তৈরি করতে খরচ কত হল

প্রায় ২৯০ মিলিয়ন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ২,১৫২ কোটি টাকা) ব্যয়ে নির্মিত হলেও এটি বিশ্বের অন্য বড় ব্রিজ প্রকল্পগুলোর তুলনায় অনেক কম খরচে তৈরি। ক্যানিয়ন পেরোতে ৭০ থেকে ১২০ মিনিট লাগত, এখন সেখানে লাগছে মিনিট দুয়েকের কিছু বেশি। এটি গুইঝোর অন্যতম দরিদ্র অঞ্চলে সংযোগের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

পর্যটকদের স্বর্গরাজ্য

চলতি বছর আগস্টে ৩ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন ওজনের স্ট্যাটিক টেস্টে সফলভাবে উত্তীর্ণ হয় সেতুটি। তারপরই জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। চার লেনের এই সেতুটি ভারী মালবাহী যানবাহনের জন্য উপযোগী এবং গুইঝোর নতুন এক্সপ্রেসওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পাশাপাশি এটি এখন পর্যটকদের জন্য এক আকর্ষণীয় স্থান। ক্যানিয়নের উপর থেকে দেখা মনোরম দৃশ্য, গ্লাস স্কাইওয়াক, এমনকি বানজি জাম্পিং প্ল্যাটফর্মও রয়েছে। ব্রিজটির এক পাশে তৈরি হয়েছে কৃত্রিম জলপ্রপাত, যা ছবির মতো এক অপূর্ব পরিবেশ সৃষ্টি করে। এটি গুইঝো প্রদেশের চতুর্থ বিশ্বরেকর্ডধারী উচ্চতম সেতু। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচুতে থাকা ১০০টি উচ্চ সেতুর প্রায় অর্ধেকই এখন এই প্রদেশে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সেতুটি গুইঝোর পর্যটন ও অর্থনীতি পাল্টে দেবে।