পাথুরিয়াঘাটার ঘোষবাড়ির দুর্গাপুজো খেলাৎ ঘোষের পুজো নামেই সমধিক পরিচিত। ঘোষবাড়ির পাশেই আলাদাভাবে বাড়ি করে উঠে এসেছিলেন তিনি সঙ্গে ছিল দুর্গাদালান। সেই বাড়িই পরবর্তীকালে পাথুরিয়াঘাটার রাজবাড়ি নামে পরিচিতি লাভ করে। এই বাড়ির পুজোতেই এসেছেন মহাত্মা গান্ধী, শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ ব্যানার্জি। তখন খেলাৎ ঘোষের ছেলে রামনাথ ঘোষের আমল। এবছর ১৬৩ বছরে পড়ল পাথুরিয়াঘাটার ঘোষবাড়ির দুর্গাপুজো (Durga Puja 2020)। এবাড়িতে আশ্বিনের কৃষ্ণপ্রতিপদে দেবীর বোধন শুরু হয়। তার আগে মধুসূদন ও রামকৃষ্ণ দেবের পুজো করা হয়। সপ্তমীর দিন কলাবউ স্নান করানো হয় বাড়িতেই। পুজোর প্রতিদিনই সধবা ও কুমারী পুজো হয়ে থাকে। অষ্টমীর দিন হাজার একটা পদ্ম নিবেদন করা হয় প্রতিমাকে।
পাথুরিয়াঘাটার ঘোষবাড়ির পুজোর ভোগ বলতে লুচি, মিষ্টি, মালপোয়া,নারকেল নাড়ু, নারকেলের চন্দ্রপুলি, চন্দের ক্ষীর ও ফলমূল দেওয়া হয় এ ছাড়া চালের নৈবেদ্য দেওয়া হয়। পশু বলি নয়, এখানে বলি দেওয়া হয় চিনির মঠ। কাশী থেকে বিশেষ ফরমায়েসি মঠ আনানো হয়। আরও পড়ুন-Durga Puja 2020: দেবী মর্ত্যে নেমেই প্রথম দাঁ বাড়িতে গয়না পরতে আসেন, করোনাকালে পরিবারেই আবদ্ধ উমার আরাধনা
খেলাৎ ঘোষের বাড়ির পুজো হেরিটেজ সাইটের তকমা পেয়েছে। এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ হল প্রতিমা বিসর্জন। মেয়েকে যেমন বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি পাঠানোর আগে কনকাঞ্জলি দিতে হয়। খেলাৎ ঘোষের বাড়ির পুজোতেও রয়েছে সেই নিয়ম। সিঁদুর খেলার পর প্রতিমাকে কনকাঞ্জলি দেওয়া হয়। তারপর ঠাকুর দালান থেকে প্রতিমাকে বাড়ির বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। অতীতে সাতবার বন্দুক দেগে প্রতিমা ঘাটের দিকে নিয়ে যাওয়া হত। এখন সেই প্রথা অবশ্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে গঙ্গায় নিয়ে গিয়ে দুটি নৌকায় প্রতিমাকে বসিয়ে সাতবার পরিক্রমা করা হয়। তবে প্রতিমাকে শুইয়ে বিসর্জন দেওয়া এখানকার রীতি বিরুদ্ধ। এবার করোনাকালে সমস্ত নিয়মেই টানা হয়েছে রাশ। বাড়ির লোকজনই পুজোতে অংশ নেবেন। দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পরিজনদের সবাই এবার পুজোয় উপস্থিত থাকতে পারছেন না। সৌজন্যে করোনাসুরের থাবা।